মন্দিরে প্রবেশাধিকার না পেয়ে কত ধানে কত চাল বুঝেছেন শশী থারুর

তিনি শবরীমালাতে মহিলাদের প্রবেশাধিকারের বিরুদ্ধে, অথচ নিজে ঢুকতে না পারলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন

 |  3-minute read |   17-01-2019
  • Total Shares

কর্মফল কী?

এর উত্তরটা আমাদের সকলেরই জানা রয়েছে।

গত মঙ্গলবার এই কর্মফল অবশ্য কংগ্রেসকে ও 'উদারমনষ্ক বুদ্ধিজীবী' শশী থারুরকে তাড়া করতে শুরু করে দিয়েছিল। ১৫ জানুয়ারি থারুরকে নাকি শতাব্দী প্রাচীন শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই মন্দিরটি কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে অবস্থিত। অঞ্চলটি থারুরের নিজের লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত।

কংগ্রেস নেতার অভিযোগ তাঁকে ও তাঁর অনুগামীদের মন্দিরে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি কারণ সেদিন নরেন্দ্র মোদী কেরল সফর করছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্দির প্রাঙ্গণে আর কে কে মন্দিরে উপস্থিত থাকতে পারবেন, সেই তালিকা থেকে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় তাঁর নাম কেটে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন থারুর।

একজন ভক্তকে মন্দির প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া অবাঞ্ছিত। কিন্তু এখানে ভক্তের নাম যে শশী থারুর, যিনি নিজে মনে করেন যে সম্প্রতি দু'জন মহিলা শুধুমাত্র 'ইচ্ছাকৃত ইন্ধন' জোগাতে শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করেছিলেন।

মন্দিরে প্রবেশ করতে না পেরে থারুর এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, "করদাতাদের অর্থ খরচ করে মন্দির চত্ত্বরে একটি অনুষ্ঠান চলছিল। সুতরাং সেই অনুষ্ঠানে সকলকেই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিত ছিল।"

তার মানে, দেশের বহু মহিলা যে কর দেন সে খবর কি থারুরের জানা নেই? মনে তো হয় বিষয়টি তিনি বিলক্ষণ জানেন। তাই যেখানে পুরুষদের প্রবেশের অধিকার রয়েছে সেখানে মহিলাদেরও সমান প্রবেশধিকার থাকা উচিত। এমনকি, যাঁরা কর দিতে সক্ষম নন তাঁদেরও মন্দিরের প্রবেশাধিকার দেওয়া উচিত।

body_011719022157.jpgপ্রার্থনারত শশী থারুর, এই অধিকার দেশের সকল জনগণেরই রয়েছে [ছবি: পিটিআই]

আরও একটি জিনিস হয়তো থারুর ইচ্ছে করে বুঝতে চাইছেন না। ইচ্ছে করে কারণ তাঁর মতো বুদ্ধিদীপ্ত একজন চেষ্টা করলেই বিষয়টি বুঝতে পারতেন। থারুরের বোঝা উচিত যে দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিশেষ ধরণের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়ে থাকে। তাই প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি যখন কোনও পাবলিক প্লেসে যান তখন সেখানে অন্যদের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে যাতে কোনও ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।

মাননীয় থারুর মহাশয় যদি কিছুটা ধৈর্য্য ধরতে পারতেন তা হলে মোদী সেই স্থান ত্যাগ করার পরেই তিনি মন্দিরে প্রবেশ করে পুজো দেওয়ার অনুমতি পেতেন।

অথচ উল্টোদিকে, সুপ্রিম কোর্ট প্রথাটিকে অসাংবিধানিক আখ্যা দেওয়া সত্ত্বেও আজও বহু মহিলাকে শবরীমালা মন্দিরের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। বছরের পর বছর তাঁরা ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত প্রবেশাধিকার অর্জন করতে পেরেছেন। আর কেউ নয়, স্বয়ং দেশের শীর্ষ আদালত তাঁদের এই অধিকার দিয়েছে।

থারুরের মতো লোকজন এখনও তাঁদের প্রবেশাধিকার খর্ব করে চলেছেন, অথচ নিরাপত্তা বা সুরক্ষা ব্যবস্থাকে তোয়াক্কা না করে তাঁরা নিজেদের অধিকার কায়েম করতে বরাবরই পছন্দ করেন।

থারুরের অভিযোগ বিজেপি নাকি রাজনৈতিক স্বার্থে 'ঈশ্বরকে ব্যবহার' করছে এবং প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাকে মন্দিরে প্রার্থনা করতে দিচ্ছে না।

থারুরকে একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে - শবরীমালা মন্দির প্রসঙ্গে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি যা তা হলে তিনিও কেন একই দোষে দোষী হবেন না?

মন্দির চত্ত্বরে থারুরকে প্রবেশাধিকার না দেওয়া রাজনৈতিক 'চক্রান্ত' হতে পারে - কিন্তু থারুর কী ভাবে এই বিষয়টির প্রতিবাদ করতে পারেন যেখানে তিনিও কতকটা একই মতাদর্শে বিশ্বাসী?

এখন কত ধানে কত চাল বুঝতে পেরে তিনি কি তাঁর নিজের দৃষ্টিভঙ্গিটা বদল করবেন?

থারুর মশাই আমরা আপনার কষ্ট বুঝি - কিন্তু আপনি কি আমাদের কষ্টটাও বোঝেন?

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

VANDANA VANDANA @vandana5

Author is a Delhi-based journalist.

Comment