দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীদের তল্লাশি করা সময় নষ্ট ছাড়া কিছু নয়
ট্রেনের সঙ্গে বিমানের পার্থক্যের কারণে হররানি ছাড়া অন্য কিছু হবে না
- Total Shares
রেলের নিরাপত্তার স্বার্থে বড় পদক্ষেপ করতে চলেছে সরকার। বিমান বন্দরের মতো ভারতীয় রেলেও খুব শীঘ্রই নিরাপত্তার স্বার্থে ২০ মিনিট আগে হাজির হতে হবে এবং বিমানবন্দরের ধাঁচে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত তল্লাশির পরে যাত্রী ট্রেনে উঠতে পারবেন। কিন্তু বাস্তব বিবেচনা করলে এই পদক্ষেপ একেবারেই অনর্থক। প্রশ্ন হল কেন।
ধরুন রাজধানী এক্সপ্রেসে আপনি দিল্লিতে যাচ্ছেন এবং অন্য একজন দিল্লিতে যাচ্ছেন বিমানে। বিমান ছিনতাই করতে হলে বা নাশকতার জন্য বিমানের যাত্রী হতে হবে। না হলে, বিমান আকাশে উঠে গেলে সাধারণ ভাবে কিছু করা সম্ভব নয়। কিন্তু যাত্রী না হলেও ট্রেনে নাশকতা ঘটানো সম্ভব। তাই যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য ট্রেনে চেকিং নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
বিমানের ধাঁচে নিরাপত্তা ট্রেনে কোনও দিনই সম্ভব নয় (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)
এবার একটি বড় স্টেশনের উদাহরণই দেওয়া যাক, হাওড়া স্টেশন। ধরা যাক পূর্বা এক্সপ্রেস। সাধারণ ভাবে ৯ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়ে। আপনি নির্ধারিত সময়ে স্টেশনে পৌঁছালেন। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে রেল পুরো প্রক্রিয়া সেরে ফেলল। ট্রেন ছাড়। প্রথমে বর্ধমানে থামবে। এখানে যে সব যাত্রী উঠবেন তাঁদের কি একই রকম ভাবে নিরাপত্তা-তল্লাশি করা হবে যা আপনার ক্ষেত্রে করা হয়েছে? করতে হলে দেশের অধিকাংশ স্টেশনেই সম-মানের নিরাপত্তাব্যবস্থা করতে হবে। তা কবে সম্ভব রেল আধিকারিকরাও এখন বলতে পারবেন না।
হাওড়া স্টেশন থেকে পূর্বরেল ও দক্ষিণপূর্ব রেলের বহু লোকাল ট্রেন চলাচল করে। এখানে লোকাল ও দূরপাল্লার ট্রেনের জন্য আলাদা করে প্ল্যাটফর্ম নির্দিষ্ট করা নেই। তা সত্ত্বেও অনেক সময় প্ল্যাটফর্ম খালি না থাকায় ট্রেন ঢুকতেই পারে না। তার উপরে নিরাপত্তাজনিত কারণে লোকাল ট্রেনের জন্য প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা কমে গেলেও দুর্ভোগ বাড়বে, কিন্তু নিরাপত্তা নয়।
সমস্যা আরও একটি থাকছে। ধরা যাক লাইসেন্সড রিভলভার নিয়ে আপনি বিমানে যাত্রা করছেন। নিয়মমাফিক সেটি জমা থাকবে পাইলটের কাছে। গন্তব্যে পৌঁছে আপনি সেটি পাবেন। ট্রেনের ক্ষেত্রে কী হবে? চালক বদল হয় নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করার পরে। সে ক্ষেত্রে চালকদের কাজ বাড়বে। আর যে স্টেশনে আপনি নামবেন সেই স্টেশনে হয়তো ট্রেন এক মিনিট থামে। আপনার শারীরিক কোনও সমস্যা থাকলে এবং ইঞ্জিন থেরে দূরতম কামরায় আপনি যাত্রী হলে তখন আপনার গচ্ছিত জিনিসটি কী ভাবে পাবেন?
এখনও অনেক ট্রেনেই প্যান্ট্রি কার নেই, তাই প্ল্যাটফর্মের উপরেই ভরসা করতে হয় যাত্রীদের। অনেকেই প্রয়োজনের তাগিদে ট্রেনে উঠেছেন, কেউ প্রথমবার। নিরাপত্তার কারণে ট্রেনে ফেরিওয়ালা না উঠলে খাবার পাবেন কী ভাবে? ট্রেনে গুয়াহাটি থেকে ত্রিবান্দ্রম, পঞ্জাব থেকে কন্যাকুমারী বা হাওড়া থেকে পোরবন্দর যেতে কতটা সময় লাগে দেখুন। বিমানে ৩-৪ ঘণ্টা না খেয়েও কাটিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু ট্রেনে ৪৮ ঘণ্টা বা আরও বেশি সময় কী ভাবে কাটাবেন একজন যাত্রী যদি তিনি খাবারদাবার না পান?
ট্রেনের পুরো যাত্রাপথ ঘিরলে অন্য সমস্যা হবে (উপস্থাপনামূলক ছবি: পিটিআই)
অ্যাপের মাধ্যমে খাবার বুক করা যায় ঠিকই, কিন্তু ট্রেন লেট করলেও যাত্রী খাবার পাবেন সেই স্টেশনে যেখানে তিনি খাবার পাবেন বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। সে ক্ষেত্রেও ভোগান্তি ছাড়া কিছুই জুটবে না যাত্রীদের কপালে।
তা হলে যাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়া কি কোনও ভাবেই সম্ভব নয়? সম্ভব, তা হল পুরো রেললাইনের দু’পাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দেওয়া। মাঝে মধ্যে পাঁচিল তুলে বিজ্ঞাপন দেওয়া। পুরো রেললাইন বরাবর পাঁচিল তুলে দিলে দৃষ্টি আটকে যাবে যাত্রীদের। টানা আড়াইদিন শুধু পাঁচিল দেখে সময় কাটানো অসম্ভব!
যে সব জায়গায় কার্যত লেভেলক্রশিংয়ের সঙ্গেই প্ল্যাটফর্ম, সেই সব স্টেশন নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে রেলকে।