এলাহাবাদ হোক, বা প্রয়াগরাজ: এলাহাবাদবাসীরা এসব নিয়ে পরোয়া করেন না

মুম্বাই বম্বের গল্প এখানে চলবে না, এলাহাবাদ বা প্রয়াগরাজ নিজ নিয়মে চলতে পছন্দ করে

 |  4-minute read |   22-10-2018
  • Total Shares

এলাহাবাদে আমার বেড়ে ওঠা। এখন শহরটির নাম রাখা হয়েছে প্রয়াগরাজ। এই নাম পরিবর্তনের ফলে আমিও আমার নিজের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন থেকে আমি প্রয়াগ রাজ মালহোত্রা নামে পরিচিত হব।

রাজনৈতিক মতামত নির্বিশেষে রাস্তা,শহর বা বাজারের নাম পরিবর্তন এ দেশে আকছার ঘটে চলেছে। এর মধ্যে কিছু পরিবর্তিত নাম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আবার কিছু ক্ষেত্রে পুরোনো নামটারই প্রচলন রয়ে যায়। কনট প্লেস এখনও সিপি নামেই জনপ্রিয়। একমাত্র দিল্লি মেট্রো ছাড়া আর কোথাও এই জায়গাটিকে রাজীব চক হিসেবে লেখা করা হয় না। মাদ্রাজের নাম পরিবর্তন করে চেন্নাই করা হয়েছে। আর চেন্নাই নামেই এই শহরটি এখন পরিচিত।

এখন প্রশ্ন হল প্রয়াগরাজ নামটা কি আদৌ জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারবে? খুব সম্ভবত নয়।

এমনও কিছু উদাহরণ আছে যেখানে পুরোনো ও নতুন নাম যোগ করে শহরের নাম প্রচলন হয়েছে। যেমন বেঙ্গালুরু। ব্যাঙ্গালোরকে আজকাল এখন অনেকেই ব্যাঙ্গালুরু নামে ডেকে থাকেন।

সেক্ষেত্রে, এলাহাবাদের নাম প্রয়াগবাদ হতেই পারে।

body_102218044137.jpgএলাহাবাদ বিসোপবিদ্যালয়

নব্বইয়ের দশকে দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে যোগ দেওয়া ইস্তক একটি প্রশ্নের সম্মুখীন আমাকে বারংবার হতে হয়েছে: "আপনারা এলাহাবাদে কী করেন? আপনি এতদিন এলাহাবাদে কী করেছেন?"

কোনও কিছুই তাঁদের নাড়া দেয়না, আর এ নিয়ে এলাহাবাদের বাসিন্দারা গর্ববোধ করেন। তবে তাঁরা সব কিছুর দিকে ড্যাবড্যাব নয়নে তাকিয়ে থাকেন - মহিলা, পুরুষ, পাথর, পশু। আমার বাবা-মা যখন শহরের প্রথম ন্যানোটি কিনেছিলেন তখন এলাহাবাদের বাসিন্দারা রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে সেই গাড়িটির দিকে চেয়ে 'ন্যানো, ন্যানো' বলে তারস্বরে চিৎকার করেছিলেন।

আমরা এক বন্ধু দ্য রকস্টার জার্নাল বলে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। বাইকে করে যাতায়াতের সময় পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক শ্যাম লাল তাঁর পনিটেলকে টুপির তলায় লুকিয়ে রাখতেন। তা না করলে শহর জুড়ে কোলাহলের সৃষ্টি হয়ে যেত।

বহু বছর ধরে এলাহাবাদে দিল্লির নিরুলার মতো একটি হ্যামবার্গারের দোকান ছিল। ওই দোকানে গেলে বুঝতে পারতেন যে শহরের ছেলেদের থেকে মেয়েদের কাছে বেশি পয়সা ছিল। সন্ধ্যাবেলা, মেয়েরা যখন হ্যামবার্গারে কামড় দিচ্ছেন, ছেলেরা তখন বাইরে বাইকের উপর বসে তাঁদের জন্য অপেক্ষারত। মাঝে এই অপেক্ষা থেকে প্রেম প্রণয়েরও সৃষ্টি হত। এর মধ্যে কিছু প্রেম অবশ্য বিয়েতেও পরিণত হয়েছে।

body1_102218044221.jpgএলাহাবাদ মোগলদেরও

এলাহাবাদের খুব পছন্দের জায়গা শহরের কফি হাউস। প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চস্বরের রাজনৈতিক আলোচনা আপনাদের কানে আসতে বাধ্য। তাও আবার একেবারে দেহাতি ভাষায়। জায়গাটির একটি বিপরীতধর্মী ছোঁয়াও রয়েছে। কফি হাউসের ভিতরটা অনেকটা আইরিশ ধাঁচে তৈরি।

এলাহাবাদ মোগলদেরও ছিল। এলাহাবাদ বহু হিন্দি কবিরও জন্মস্থান। কিন্তু ইতিহাস আর কেই বা মনে রাখে। এলাহাবাদে হাইকোর্ট রয়েছে। আর শহরের প্রতি দু'জন বাসিন্দার মধ্যে একজন করে উকিল আপনার চোখে পড়বেই। শহর জুড়ে কালো কোট পরে তাঁদের সাইকেল বা স্কুটারে চড়তে দেখা যায়।

body2_102218044316.jpgমোহনায় ব্রিজ তৈরি করেছেন জাপানিরা, সুতারং জাপান যাওয়ার আর প্রয়োজন নেই

শহর হিসেবে এলাহাবাদ সত্যিই মনোরম। পরিষ্কার বাতাস তার সঙ্গে সাইকেল রিকশার মৃদু ঘণ্টাধ্বনি। এছাড়া দেশি পিস্তল ও ক্রুড বোমা হাতে গো-বলয়ের গ্যাংস্টারদের সন্ধানও আপনি এই শহরেই পাবেন। একটি পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়, যার পিদিম এখন নিভু নিভু, নেহরু ও গান্ধীদের পরিবার, বচ্চনদের পরিবার ও কুম্ভমেলা - বহু বছর ধরেই এই কয়েকটি বিষয় নিয়ে যে শহরটির গর্বের অন্ত নেই। সময়ও একটা সময় এই শহরটিকে ভুলতে বসে ছিল। কিছুটা হতবাক করেই, হঠাৎই এই শহরটি টুইটারে ট্রেন্ড হয়ে উঠল।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শহরেরও পরিবর্তন হয়েছে। পুরোনো পুরোনো অট্টালিকাগুলো ভাঙা পড়েছে। নতুন নতুন শপিং মল তৈরি হয়েছে। এই পরিবর্তনটা বাইরের। ভিতরে ভিতরে শহরটি একই রকম রয়েছে। কোনও উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। দেরাদুনে গিয়ে দেখুন। দেখবেন ওই পাহাড়ি শহরটাও কী রকম চন্ডীগড় হয়ে উঠতে চাইছে। যাই হোক এরই মাঝে এলাহাবাদ অন্তত প্রয়াগরাজ হয়ে উঠল।

শহরটি এখন একটি ট্রেন হতে চায়। প্রয়াগরাজ বলতে এলাহাবাদ একটি দূরপাল্লার ট্রেনের কথাই বোঝে। নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই এলাহাবাদ নিয়ে হোয়াটস অ্যাপে একটি জোক ঘুরে বেড়াচ্ছে: "কোন কামরায় আপনার জন্ম হয়েছে?"

body3_102218044401.jpgপ্রয়াগরাজ বলতে এলাহাবাদবাসী দূরপাল্লার ট্রেন বোঝে

এলাহাবাদ আপনাকে অবাক করে দিতে পারে। একটি গ্রিডের উপর তৈরি হয়েছে এলাহাবাদ। আর, তাই এলাহাবাদের লোকেরা বলে থাকেন, "ম্যানহাটন যাওয়ার কী প্রয়োজন। ম্যানহাটন তো এখন এখানেই আছে।" মোহনার উপর জাপানিরা একটি সাসপেনশন ব্রিজ তৈরি করে দিয়েছে। সুতারং, এখন আর টোকিও যাওয়ারও কোনও প্রয়োজন নেই।

এলাহাবাদে মদ্যপানের আলাদা রকমের মজা রয়েছে। সাইকেল রিকশা ভাড়া করে শহর ঘুরতে ঘুরতেই আপনি মদ্যপান করতে পারবেন। দুপুর দুপুর শুরু করতে চাইলে সূর্য ডোবা অবধি আপনি নৌকো বিহারে গিয়ে মদ্যপান করতে পারেন। এর পরেও যদি বোতল ফাঁকা না হয় তাহলে নৌকো থেকে নেমে আবার রিকশা ভাড়া করুন।

অনেকেই নাম পরিবর্তন নিয়ে কথা বলে চলেছেন। কিন্তু লাভ হবে না। এলাহাবাদ বা প্রয়াগরাজ নিজ নিয়মেই বিরাজ করবে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী পঙ্কজ মিশ্র আমাকে একবার একটা গল্প বলেছিলেন। একটি ক্রিকেট ম্যাচে তিনি এক ছাত্র নেতাকে বোল্ড আউট করেছিলেন। ক্রিজে ছাড়তে রাজি হননি ওই নেতা। উল্টে তিনি সগর্বে ঘোষণা করেছিলেন, "দেখতে নেহি ব্যাটিং করতে হ্যায়।" (দেখতে পাচ্ছ না, আমি ব্যাট করছি)।

(সৌজন্যে: মেল টুডে)

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PALAS KRISHNA MEHROTRA
Comment