আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মূল্যবোধের সংঘাতের কাহিনি 'পিউপা'

মায়ের মৃত্যুর পরে বাবা শয্যাশায়ী, একই সঙ্গে চাকরি রাখার তাগিদ, তখন...

 |  2-minute read |   16-08-2018
  • Total Shares

আমার সাম্প্রতিক বাংলা ছবি 'পিউপা' -র গল্পটা একদম নতুন ধরণের। অন্যরকম চিন্তাভাবনা নিয়ে নানারকম পরীক্ষামূলক ছবি করতে আমি সব সময় ভালোবাসি। চিত্রনাট্যটিও আমার লেখা।

ছবিটির নাম 'পিউপা'। কথাটির অর্থাৎ হল একটা মূককীট। শুঁয়োপোকা যখন সুন্দর একটি প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হয়, ঠিক তার আগে শুয়োঁপোকাটি একটি খোলসের মধ্যে ঢুকে থাকে। পতঙ্গের এই অবস্থাকে বলা হয় পিউপা বা বাংলায় মূককীট। আমার ছবিতেও একই ভাবে একটা সময় আসে যখন ছবির সব চরিত্রগুলো নিজেদের পরিস্থিতিতেই যেন আটকে পড়ে। তাঁদের পরিস্থিতি বা অবস্থার যেন কোনও পরিবর্তনই ঘটতে চায় না।

body1_081618060855.jpgছবির একটি দৃশ্য

ছবিটা দেখার আগে অনেকেই ভাবছেন যে সিনেমাটির মূল বিষয় হল ইউথানাসিয়া বা নিষ্কৃতিমৃত্যু। কিন্তু ছবিটা মোটেই নিষ্কৃতিমৃত্যুর উপরে নয়। তবে আমাদের সকলের জীবনেই কোনও না কোনও একটা সময় আসে যখন নিজের ইচ্ছে নিজের বিরুদ্ধে গিয়ে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে আমরা বাধ্য হই।

আমাদের জীবনের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে গিয়ে অনেক সময়ই আমাদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাগুলোকে বিসর্জন দিতে হয়। তাই জীবনের চলার পথে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পড়ে অনেক কিছুর সঙ্গে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও আপস করে নিতে হয়। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের স্বপ্নগুলো পরিপূর্ণতা পায় না। স্বপ্নগুলো অধরাই থেকে যায়।

মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ছেলে দেশে ফেরে ইতিমধ্যে বাবারও সেরিব্রাল অ্যাটক হয় এবং তিনি কোমায় চলে যান। এখানে ছেলের চরিত্রের নাম নাম শুভ্র। ছবিতে শুভ্রর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অভিনেতা রাহুল। এই অবস্থায় অসুস্থ বাবাকে ফেলে শুভ্র বিদেশে ফিরে যেতে পারেন না শুভ্র, তাঁর মূল্যবোধে আটকায়। শুভ্রর কাকা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত, যাঁর চিন্তাধারাগুলোও আবেগবর্তিজ বাস্তবমুখী, তিনি শুভ্রকে বার বার ফিরে যেতে বলেন। শুভ্রর কাকা ওঁকে বলেন যেন আবেগের বশবর্তী হয়ে তিনি যদি কর্মস্থল বিদেশে ফিরে না গিয়ে নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে বিসর্জন দেন তা হলে শুভ্র একদিন নিজের বাবাকেই দোষ দেবেন। কিন্তু শুভ্র তাঁর অসুস্থ বাবাকে ছেড়ে যেতে কোনও মতেই রাজি হন না। দু’জনের মতের অমিল দেখা দেয়। আসলে এটা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য মানসিকতার একটা দ্বন্দ্ব।

body3_081618060941.jpgতখনও প্রবল টানাপোড়েন

ঘটনাচক্রে এই পরিস্থিতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে শুভ্রর নিজের দিদিও। বাবার দেখাশোনা করতে গিয়ে সে তাঁর নিজের পরিবার, সন্তান এবং স্বামীকে অবহেলা করে যা নিয়ে তাঁর শ্বশুরবাড়িতেও নানা ঝামেলা লেগে থাকে। পাশাপাশি শুভ্রর বান্ধবীরও বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য ডাক আসে এবং তিনি যেতে চান। শুভ্রর মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে শুভ্রর বান্ধবী তাঁর ক্যারিয়ারকে বিসর্জন দিতে নারাজ।

এই সব কিছুর মধ্যেই খুব সন্দেহজনক ভাবে শুভ্রর বাবার মৃত্যু হয়। সন্দেহজনক ভাবে? কী হয়েছিল শুভ্রর বাবার? হটাৎ মৃত্যু না খুন? এখানেই ছবিটি অন্য মাত্রা পায়।

body2_081618061102.jpgপারিবারিক সঙ্কট, টানাপোড়েন

ছবিটিতে একটা সামাজিক বার্তা রয়েছে। আমাদের দেশের বহু তরুণতরুণীকে নিজের বয়ষ্ক ও অসুস্থ বাবা মাকে দেশে রেখে বিদেশে গিয়ে চাকরিবাকরির জন্য পড়ে থাকতে হয়, ইচ্ছে থাকলেও তাঁরা দেশে ফিরতে পারেন না বা ফিরলেও কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁদের কর্মস্থলে চলে যেতে হয়। নিজের বাড়িতে শত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর তাঁদের ফিরে যেতেই হয়। এই সব কিছু মিলিয়েই গড়ে উঠেছে আমার ছবিটি।

ইতিমধ্যেই ছবিটি ছ’টি পুরস্কার পেয়েছে।

সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাহুল,  অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়,  সুদীপ্তা চক্রবর্তী,  কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়,  পিয়ালি মুন্সি প্রমুখ।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment