যৌনকর্মীদের নিয়ে অনেক সিনেমা হয়েছে, তবে টিকলি ও লক্ষ্মী বম্ব এক্কেবারে আলাদা
সিনেমাটি দশম বার্লিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরষ্কৃত হয়েছে
- Total Shares
আদিত্য কৃপালানি কোনদিনই চলচিত্র পরিচালক হতে চাননি, তিনি চেয়েছিলেন লেখক হতে। সেই শখ থেকেই তিনি বহু বিজ্ঞাপন লিখেছেন, কবিতা, বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে লিখেছেন এছাড়াও তিনি তিনটি উপন্যাস লিখেছেন। তারপর হঠাৎই তার সিনেমা তৈরির প্রতি ঝোক থেকে তিনি চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন। তিনি বলেন, “এই সিনেমাটি বানিয়ে আমার সিনেমা বানানোর প্রতি বেশ উৎসাহ জেগেছে তাই আমি আরও অনেক সিনেমা পরিচালিনা করতে চাই, তাই যখন আমার ইচ্ছে হবে আমি বই লিখবো আবার যখন মনে হবে সিনেমা বানাব।"
কৃপালানি যেই সিনেমাটির কথা বলছেন সেই সিনেমাটি লেখকের তৃতীয় উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে। সিনেমাটির নাম - টিকলী ও লক্ষী বম্ব। তার প্রথম সিনেমাটি বেশ সারা ফেলেছে। সম্প্রতি সিনেমাটি দশম বারলিন স্বতন্ত্র চলচিত্র উৎসবে (Berlin Independent Film Festival) শ্রেষ্ঠ্য ফিচার বিভাগে পুরস্কৃত হয়ে।
সিনেমাটি পটভূমিকা মুম্বাই। সিনেমাটির মূল কাহিনী হল কী ভাবে দুজন যৌনকর্মী ওখানকার একটি এলাকার দেহ ব্যবসাকে নিজেদের মুষ্ঠিগত করেন, এবং কী ভাবে অন্যান্য মহিলা যৌনকর্মীরা প্রাধান্য পায়। কৃপালানি বলেন, “সিনেমাটার মাধ্যমে আমি যে বার্তাটি দিতে চেয়েছি সেটা হল এই পিতৃতান্ত্রিক পৃথিবীতে কী মহিলারাও সমস্ত রকমের অসুবিধার করে নিঃজেদের জায়গা করে নিতে পারে। সিনেমাটি বানাবার একটাই কারণ সেটা হল এখন ও অনেক মানুষ আছেন যারা বই পড়েন না তবে প্রায় অধিকাংশ লোকজন সিনেমাটি দেখতে পছন্দ করেন। আমি মনে করে অনেক বেশি সংখক মানুষ সিনেমা দেখেন। সমাজের ওপরে সিনেমা অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। বইতে শুধু মাত্র ভাষা দিয়ে মনে ভাব প্রকাশ করতে হয় কিন্তু সিনেমার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছুর সাহায্যে লিখক বা পরিচালকের মনে ভাব প্রকাশ করতে পারেন।"
সিনেমাটির নাম - টিকলী ও লক্ষী বম্ব
যদিও যৌনকর্মীদের নিয়ে এর আগেও অনেক সিনেমা হয়েছে যেমন চাঁদনী বার বা চামেলী, কিন্তু কৃপালানি যে বিষয় ও ওই বিষয়েটি বলার যে ধরণটা বেঁচে নিয়েছেন সেটা এক্কেবারেই স্বতন্ত্র। কৃপালানি বলেন, “সিনেমাটা দেখলে বোঝা যাবে যে এই পুরুষশাষিত দুনিয়ায় মহিলারা যখন কোন কিছু করে দেখাবার সিদ্ধান্ত নেন তখন সেই কাজটা তারা ঠিক কতখানি আলাদা ভাবে করতে পারে।"
সিনেমায় যৌনকর্মীদের জীবন নানা ভাবে তুলে ধরা হয়েছে কিন্তু কৃপালানি তার সিনেমার মধ্য দিয়ে তাদের জীবনের খুব সাধারণ জিনিসগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। পরিচালক বলেন, "বিভন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের পোস্ট কতগুলো লাইক পাচ্ছে সেটা নিয়ে তারা অনেক বেশি উৎসাহিত থাকে। এরা সব্বাই যখন এক সঙ্গে থাকে তখন এরা নিজেদের মধ্যে অনেক আনন্দ করে। ব্যক্তিগত ভাবে কোন সিনেমার পর্যায় পুরুষরা কোন ব্যাপার নিয়ে আনন্দ করছে দেখার চেয়ে অনেক বেশি ভালো লাগছে দেখতে যখন দেখি মহিলারা নিজেদের মধ্যে আনন্দ করছে। আমি কোন ভাবেই পথপ্রদর্শক হতে চাই ছিনা। কিন্তু আমার মনে হয়ে একজন স্বতন্ত্র চিত্র পরিচালক হিসেবে যে সোজাসাপটা কথাটা আমি আমার বইতে লিখেছি সেটাই আমার সিনেমাতেও দেখিয়েছি।"
বইটা লেখার সময় কৃপালানি যৌনকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি এদের জীবন সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারেন। তিনি জানতে পারেন যে কী ভাবে এরা সর্বক্ষণ একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকে। পরিচালক বলেন, “তাদের জীবনের নিরাপথহীনতা আমাকে অবাক করেছিল। তবে সিনেমার জগতেও যেমন ন্যূন অভিনেতা বা নতুন পরিচালকদের টিকে থাকার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হয়ে ঠিক তেমন ভাবেই এরাও তাদের লড়াই চালিয়ে চলেছে। জীবনে বোধহয় যারা যতবেশি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন তারা বেশি হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করেন। এদের জুইবনেও এতো অসুবিধা থাকা স্বত্যেও এরা নিজেদের মতো করে ভালো থাকতে চায়, এদের ভালো থাকতেই হবে।"
Editor's note: The copy was amended after it was published.
(সৌজন্য: মেল টুডে)

