সিডি বনাম ডিজিটাল মাধ্যম: জেনে নিন নতুন শিল্পীদের কোনটা পছন্দ
সিডি নিয়ে নতুন প্রজন্ম একদমই আশাবাদী হতে পারছে না, তাই ঝোঁক ডিজিট্যাল রিলিজে
- Total Shares
এই সেদিন ও বলতে শুনতাম - "what bengal thinks today, india thinks tomorrow"। আর, আজ আমরা আক্ষেপ করে বলি বাংলার স্বর্ণযুগের গান নিয়ে বাঙ্গালীর সেই অহংকার কোথায়? যদিও আজ আমরা সমকালীন বাংলা গানকেও প্রায় একই রকম ভাবে পিছনে ফেলে দিচ্ছি।
ছোটবেলায় আমাদের গান শোনার একমাত্র যন্ত্র ছিল রেডিও। সেই সময় বাংলা গানের কথা ও সুর আমরা রেডিও তে হাঁ করে গিলতাম। তৎক্ষনাৎ শুনে সেটা লেখার চেষ্টা করতাম। অপেক্ষা করতাম আবার শোনার জন্য। আর এখন তো বাংলা গান নিয়ে এমন সব পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়েছে তাতে সব কিছু তালগোল পাকিয়ে যাবার জোগাড়। আজ বাংলা গানের গায়ে লেগেছে বিশ্বায়নের ছোঁয়া। হাইটেক প্যাকেজিং এর লেবেল। আর বলাইবাহুল্য, এই ভাবেই কিন্তু তৈরি হচ্ছে একটা হচপচ অবস্থা।
তরুণ প্রজন্ম সিডি ছেড়ে ডিজিটালের দিকে ঝুঁকেছেন [ছবি: রয়টার্স]
গ্রামোফোন রেকর্ড থেকে ক্যাসেট অবধি ঠিক ছিল। তার পরবর্তী তে এল সিডি। কিন্তু এই সিডি নিয়ে আমরা নতুন প্রজন্ম কিন্তু একদমই আশাবাদী হতে পারছি না তাই আমরা ঝুকছি ডিজিট্যাল রিলিজের দিকেই। প্রথমত সিডির অডিও ফরম্যাট করতে খরচ, তারপর বিপনীর জন্য আলাদা খরচা। সিডি কেনা থেকে সরে এসেছেন বহু মানুষ। ফলে লোকের কাছে গান পৌঁছচ্ছে না। বিকল্প হিসেবে আমরা সিডির সব চেয়ে ভালো গানটার দৃশ্যায়ন করতে শুরু করলাম সেখানেও অনেক খরচ। এরপর সেই ভিডিওটা চ্যানেলের মাধ্যমে লোকের কাছে পৌঁছনো। সেখানেও খরচ। সুতরাং এত খরচ করার পরে দ্বিতীয় বার সিডি করার কথা খুব কম শিল্পীই ভাবছেন।
তাহলে বাকি শিল্পীরা কোথায় যাবেন আর শিল্পীর নতুন গান-ই বা কোথায় যাবে? এত টাকা খরচ করার পর শিল্পী কি বা রিটার্ন পাবেন?
আমি আগেই বলেছি, আগে গান শোনার মাধ্যমই ছিল রেডিও। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে এফএম রেডি য়ো-ও নতুন গান শোনানো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে (সেটা সিনেমার গানের ক্ষেত্রে নয় কিন্তু)। তাই আজ আমাদের ডিজিট্যালই ভরসা।
নিজের ইউটিউব চ্যানেল কর, সেখানে গান বানিয়ে দিয়ে দাও (এই বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি হিন্দি মুভিও হয়েছে কিছুদিন আগেই এবং বেশ জনপ্রিয় হয়েছে) আর লিঙ্ক সবাইকে কপি পেস্ট করে দাও। ব্যাস এক নিমেষেই পৃথিবীর সব প্রান্তে নিজের গান পৌঁছে দেওয়া তো যাচ্ছে। কাউকে তো বলতে হচ্ছে না –‘সিডি কিনুন প্লিজ'।
ডিজিটাল রিলিজে কাউকে বলতে হচ্ছেনা –‘সিডি কিনুন প্লিজ'
আর বেশি সংখ্যক শ্রোতা-দর্শক হলে শিল্পী তার কিছু টা লভ্যাংশও পাচ্ছেন। এতে নতুন শিল্পীরা কিন্তু উৎসাহ পাচ্ছেন। কিন্তু ডিজিট্যালে একটি অসুবিধে হল, প্রবীদের কাছে না পৌঁছনো। কারণ, তাঁরা এখনও টেকস্যাভি নন। তাই অনেকেই লিঙ্কের মানে বোঝেন না। আর সিডি উপহার দেওয়া ও নেওয়া থেকেও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। গ্রামোফোন বা ক্যাসেট সিডি বাড়িতে আমরা সংরক্ষণ করতে পারলেও ডিজিট্যাল কিন্তু কম্পিউটার ও মোবাইল বন্দিই থাকছে।
তাই সিডি করব নাকি ডিজিট্যাল রিলিজ করব -এ প্রসঙ্গে আমি নিজে একজন নতুন প্রজন্মের সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে মনে করি যতদিন না সিডিকে তার পুরোনো জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বা বিকল্প কোনও কোনও রাস্তা পাওয়া যাচ্ছে, যতদিন না এফএম এর সাহায্যে লোকের ঘরে গান পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আমরা ডিজিট্যালেই ঝুঁকে থাকব।
যে ফরম্যাট এই হোক আপনারা নতুন গান শুনুন ও শোনান এই টুকুই কাম্য।

