পরমব্রতর প্রদোষচন্দ্র মিত্র কি সত্যজিৎ রায়ের ছবির ফেলুদাকে ভুলিয়ে দেবে?

টলিউড অভিনেতা এবার বিখ্যাত গোয়েন্দাদের নিয়ে ওয়েব সিরিজ আনতে করতে চলেছেন

 |  3-minute read |   18-08-2017
  • Total Shares

১৯৯৯ সালের কথা। আনন্দবাজার পত্রিকা তার পাঠকদের জন্য একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিল কোচবিহারে। সেই সময়, আমার বাবা ওই পত্রিকাটির জেলা সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করতেন। রীতিমতো জোর করেই বাবা আমাকে ওই রকম একটা 'বিরক্তিকর' অনুষ্ঠানে নিয়ে গিয়েছিলেন। 'একঘেঁয়ে' ওই অনুষ্ঠানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার পিছনে অবশ্য আমারও একটি উদেশ্য ছিল - জানতাম যে আয়োজকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় কোনও উপহার রেখেছেন।

অনুষ্ঠানের একটি সময়, সঞ্চালক যখন আনন্দবাজার পত্রিকার ভালো দিকগুলি পাঠকদের সামনে তুলে ধরছিলেন, তখনি একজন এসে আমার হাতে উপহারটি দিয়ে গেলেন। মোড়া একটি চৌকো মতো উপহার। মোড়ক খুলে দেখলাম সত্যজিৎ রায়ের লেখা 'আরো এক ডজন' বইটি আমার হাতে। সেইদিন রাতে মা যখন আমাকে খেতে ডাকলেন বইটির অর্ধেকটাই আমার পড়া হয়ে গেছে। অসাধারণ ও অনবদ্য সব গল্প। ওই বইটিতে 'শেয়াল দেবতা রহস্য ' বলে একটা গল্প ছিল। সেই প্রথমবার গল্পটির নায়কের সঙ্গে আমার পরিচয় হল।তখন কী আর জানতাম যে এই নায়কটি বহু, বহু বছর ধরে আমার জীবনে মধ্যমণি হয়ে থেকে যাবে?

চরিত্রটির নাম প্রদোষচন্দ্র মিত্র।ছোটদের কাছে যিনি ফেলুদা নামেই বেশি পরিচিত।সত্যজিৎ রায়-সৃষ্ট এক অমর গোয়েন্দা চরিত্র। ওই বইটিতে ফেলুদার আরও দুটি গল্প ছিল - 'সমাদ্দারের চাবি' আর 'ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা'। দুটোই এক কথায় অসাধারণ। এরপরের কয়েক সপ্তাহ ধরে আমি ফেলুদা সিরিজের প্রতিটি গল্প - এমনকি অসমাপ্ত গল্পগুলোও পড়ে শেষ করে ফেললাম।যদিও আমার তৃষ্ণা মিটল না। প্রতিটি গল্পে প্রতিটি বিষয়ের উপর যে ভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তাতে আপনি শুধু অবাক বিস্ময়ে সত্যজিৎ রায়ের সহজাত দক্ষতার কথা ভাববেন। ফেলুদার মাধ্যমে অস্কারজয়ী বাঙালি চিত্রপরিচালক এমন একটি গোয়েন্দা চরিত্র উপহার দিলেন, যিনি আর্থার কোনান ডয়েলের শার্লক হোমসকে বা আমাদের ‘ঘরের’ ব্যোমকেশ বক্সীকে সহজেই টেক্কা দিতে পারেন।

emd_081817031308.jpgওয়েব সিরিজে ফেলুদার ভূমিকায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়

ফেলুদাকে নিয়ে সত্যজিৎ রায়ের নিজের পরিচালনায় যে কয়েকটি হাতেগোনা ছায়াছবি হয়েছে 'সোনার কেল্লা' থেকে শুরু করে ছেলে সন্দীপ রায়ের নির্দেশিত "বাদশাহী আংটি'- প্রত্যেকটি দর্শকের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে। ছাপার অক্ষরে এবং বড়পর্দার পর ফেলুদা এখন ইন্টারনেটও ঢুকে পড়েছেন।মাত্র কয়েকদিন আগেই ফেলুদার ওয়েবসিরিজ যাত্রা শুরু করেছে। তাদের প্রিয় ফেলুদাকে এবার কী রূপে দেখতে পাওয়া যাবে - ফেলুদার ভক্তরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন।

এই ওয়েব সিরিজটিতে ফেলুদা ও তার ভাই তোপসের ভূমিকায় যথাক্রমে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও ঋদ্ধি সেনকে দেখা যাবে। বেশ কয়ে কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তিও এই সিরিজে কাজ করবেন। একটা সময় যে দায়িত্বটি অতন্ত্য দক্ষতার সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও সব্যসাচী চক্রবর্তী সামলেছেন।পরমব্রত একটি অ্যাপ-এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন এবং ফেলুদাকে এক নতুন মোড়কে সমসাময়িক দর্শকদের কাছে উপস্থাপিত করতে চাইছেন। শৈশবের আর পাঁচটা ভালো লাগা চরিত্রের মতো আপনারা কী নবরূপে ফেলুদাকে মেনে নেবেন? সম্প্রতি টুইটারে এক প্রশ্নের উত্তরে পরমব্রত জানিয়েছেন, "বর্তমান প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে ফেলুদার চরিত্রে সামান্য কিছু রদবদল আনা হচ্ছে। মূল গল্পগুলি অবশ্য একই থাকছে।"

পরমের ফেলুদা একুশ শতকেও চারমিনার সিগারেট খান। কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদার মতো আর পাশের বাড়ির 'দাদাটি' নেই। এই ফেলুদা কথায় কথায় পেশীর জোর দেখান আর বন্দুক চালান। সেই  পাঞ্জাবি পরিহিত ফেলুদা আর নেই। এই ফেলুদা মগজাস্ত্রর থেকে শারীরিক ক্ষমতার উপর বেশি জোর দেন। একুশ শতকের ফেলুদাকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের অন্ত নেই। কিন্তু সব চেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের প্রতি সুবিচার করতে পারবেন তো পরমব্রত?

আর, যদি না পারেন? সত্যজিৎ রায়ের আরো এক ডজন (এবং ফেলুদা সমগ্র) তো হাতের কাছে রয়েছেই।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Ananya Bhattacharya Ananya Bhattacharya @ananya116

Books for the mind; heels for the feet; travel tales for the soul. And conversations. Too much to ask for, eh? ~ Assistant Editor at @IndiaToday

Comment