অক্টোবর স্রেফ একটা সাদামাটা প্রেমের গল্প নয়
ভিকি ডোনার ও পিকুর মতো বহুল প্রশংসিত সিনেমার গল্পের লেখিকা হলেন জুহি চতুর্বেদী
- Total Shares
ভিকি ডোনার ও পিকুর লেখিকা জুহি চতুর্বেদীর কথায়, “আপনি যখন কিছু লেখেন তথন তার মধ্যে নির্মম সত্যটা থাকে, বহু জায়গা খুঁটিয়ে দেখার দরকার হয়। তাই সেটা যার তার হাতে তুলে দেওয়া যায় না।”
প্রায় তিন বছর পর তাঁর কাহিনি অবলম্বনে আর একটি ছবি মুক্তি পেতে চলেছে, যার নাম অক্টোবর। আগের ছবিগুলোর মতো এই ছবিটিও পরিচালনা করেছেন সুজিত সরকার। জুহি বলেন, “আমার চিন্তাধারা সুজিতের চিন্তাধারার সঙ্গে খুব মেলে। আমাদের দুজনের ঠিক ও ভুলের ভাবনাটা অনেকটা এক রকম। সুজিতকে কিছু বললে আমাকে ভাবতে হয় না যে ও আমার কথাটা বুঝল কিনা, ও ঠিক বুঝতে পারে আমি কী বলতে চাইছি।"
এঁদের দুজনের অনেক দিনের বন্ধুত্ব। ২০০৩ সালে অগিলভি অ্যান্ড ম্যাথার (Ogilvy & Mather) নামে একটি বিজ্ঞাপন সংস্থায় চতুর্বেদী যখন ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ছিলেন, তখন তিনি সুজিত সরকারের সঙ্গে অনেক বিজ্ঞাপন তৈরি করেন। তাই এঁদের একের অপরের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে।
সুজিত সরকার ও রনি লাহিড়ীর ব্র্যান্ড রাইজিং স্টার ফিল্মের বাইরেও যাঁর কৃতিত্ব রয়েছে, সেই জুহি চতুর্বেদী বলেন, “ওঁদের সঙ্গে যখন কাজ করেছি, তখন আমার অনেক লড়াইেয়র শরিক ওঁরা হয়েছেন।”
সুজিত সরকার আগে যে ধরণের প্রেমের কাহিনি পরিচালনা করেছেন, তার থেকে অক্টোবর অনেকটা ভিন্ন স্বাদের গল্প। অক্টোবর একটা আপাদমস্তক 'মিষ্টি, নিখাদ ও সুন্দর' প্রেমের গল্প। ফেসবুক লাইক আর টিন্ডারের জামানায় কি এ ধরণের একটা গল্প সাফল্য পাবে?

জুহি বরাবরই একটু পরিণত প্রেমের গল্প পছন্দ করেন। সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা যেমন - নায়ক, মহানগর ও সীমাবদ্ধ তাঁর খুব প্রিয়। তাঁর সিনেমার প্রধান মহিলা চরিত্রের নাম ঠিক করতে পারেননি বলে লেখাটি লিখতে প্রায় এক বছর মতো সময় নেন। অবশেষে তিনি তাঁর মহিলা চরিত্রের নাম দেন - শিউলি। ছবিতে শিউলির ভূমিকায় অভিনয় করবেন ওয়েলসে জন্মগ্রহণ করা ভারতীয় অভিনেত্রী বনিতা সান্ধু। এটা বনিতার প্রথম ছবি। সিনেমার নায়ক ডেনের ভূমিকায় রয়েছেন অভিনেতা বরুণ ধাওয়ান।
লেখিকা জানালেন, হলমার্ক বা আর্চিজের বইগুলোতে ঠিক যেমন প্রেমের গল্প পড়েছি, অক্টোবর ঠিক তেমন প্রেমের গল্প নয়। যেহেতু সিনেমায় রঙ্গরস রয়েছে যথেষ্ট, তাই সিনেমাটিতে প্রেমের বাড়াবাড়িও নেই। বরং অক্টোবর সিনেমাটিতে দেখানো হয়েছে যে কী ভাবে "কিছু না বলেও" মনে কথা বোঝানো যায়। কথায় কথায় জুহি বললেন যে তাঁর এখনও মনে পড়ে সেই সব দিনের কথা যখন তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর বাবা রান্না করতেন, “এমনও অনেক দিন গেছে যখন আমরা শুধু পুরী আর চিপস খেয়ে দিন কাটিয়েছি।” তিনি বলেন, তাঁর মনে পড়ে ছোটবেলায় কেমন চিঠি লেখার চল ছিল। এই অভ্যাসটা এখন আর নেই। “অক্টোবর সিনেমাটা এযুগের সোশ্যাল মিডিয়ায় স্টেটাস আপডেট বা আজ-আছে-কাল-নেই প্রেম বা হাতে এক গোছা ফুল আর একটা টেডি বিয়ার উপহার দেওয়া প্রেমগুলোর মতো ঠিক নয়। অক্টোবরে অনেক আবেগ আছে।"
সিনেমার যেমন এডিটিং টেবিলে ছিলেন চতুর্বেদী তেমনই শুটিংয়ের সেটেও তিনি থাকতেন। তিনি বলেন, “আমি যখন কোনও পরিচালকের সঙ্গে কাজ করি তখন তাঁকে আমার সম্পূর্ণটা দিয়ে তাঁর সঙ্গে কাজ করি। আমার মনে হয় সব পরিচালক তাঁদের নিজেদের কাজে আমাকে এতটা প্রবেশাধিকার দিতেন না।" এরপর চতুর্বেদী বলেন যে, যদি কোনও পরিচালক তাঁর সঙ্গে কাজ করেন তাহলে তিনি যেমন পাচ্ছেন একজন চলচিত্র লেখককে তেমন ভাবেই সেই পরিচালক পেয়ে যাবেন এমন একজনকে যিনি চিত্রনাট্য ঠিক ভাবে এগোচ্ছে কি না সেটা দেখাশোনা করার একজন লোক বা স্ক্রিপ্ট সুপারভাইজার পেয়ে যাবেন। শুটিংয়ের সময় শট ঠিক নেওয়া হয়েছে কিনা তাও আমি লক্ষ করি এবং আমি সিনেমার পোস্টারও ডিজাইন করি। আমি এই সব কিছু একদম বিনা পারিশ্রমিকে করি।" তাঁর কথায়, “আমি হলাম গিয়ে, যাকে বলে সর্বগুণসম্পন্না।” আশাকরি এ কথা পরিচালক মীরা নায়ারও শুনছেন, জুহি তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চান।

