পেঁচার বিশ্বদর্শন: নতুন গ্রাম থেকে ইউরোপ-আমেরিকার নানা দেশে

এমন একটা ম্যাসকট, যার মাধ্যমে বাংলা সম্বন্ধে লোকে জানতে আগ্রহী হবে

 |  2-minute read |   01-04-2018
  • Total Shares

পর্যটনকে পেশা হিসাবে নেওয়ার পরে বিদেশিদের কাছে বাংলার তথা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর কথা তুলে ধরতে গিয়ে বার বারই হোঁচট খাচ্ছিলাম। বছর দশেক আগের কথা। ভারত বা ইন্ডিয়া বলতে তাঁরা বোঝেন দিল্লি-আগ্রা-জয়পুর। কেউ আবার তার সঙ্গে কেরল। ভারতের ছবি বলতে তাঁদের মনে প্রথমেই ভেসে ওঠে তাজমহল।

আমি যখন সান্দাকফু থেকে সুন্দরবন বোঝাতে চাইছি অথবা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পর্যটনের আকর্ষণকে তুলে ধরতে চাইছি, তখন সে সব নিয়ে তাঁরা খুব একটা আগ্রহী হচ্ছেন না, কারণ  উপযুক্ত বিপণনের অভাবে তাঁদের এই সব জায়গা সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র আগ্রহই তৈরি হয়নি। প্রচলিত বাজার ব্যবস্থায় বিপণনের মাধ্যমে চাহিদা না তৈরি করতে পারলে জোগান দিয়ে কোনও লাভ হয় না। তখন মনে হল, যদি দিন না পর্যন্ত আমি আমার বিপণন কৌশল বদলে এই জায়গার একটা ছবি তুলে ধরতে পারব, ততদিন এই কাজে আমি সফল হব না। যদিও একটি ক্ষুদ্র ভ্রমণ সংংস্থার পক্ষে এই প্রয়াস ছিল এক অতি সাহসী পদক্ষেপ। 

নতুন বিপনন কৌশল হিসাবে আমি তৈরি করলাম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন যাত্রার গল্প, যা উপস্থাপিত হল ২৪টি পিকচার পোস্টকার্ডের মাধ্যমে, যা শুরু হয় হিমালয়ের ২৯ হাজার ফুট উপরে কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে এবং শেষ হয় বিশ্বর বৃহত্তম ব-দ্বীপ ম্যানগ্রোভ ঘেরা সুন্দরবনে। ২০০৯ সাল নাগাদ একটা মেলায় গিয়ে ভাবনাটা একটা রূপ পেল। সেই মেলায় আমার সঙ্গে আলাপ হল বর্ধমানের নতুনগ্রামের শিল্পী লক্ষ্মণ ভাস্করের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে আলাপ করলাম। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমার জন্য অর্ডার-মতো নির্দিষ্ট সংখ্যক পেঁচা নিয়মিত বানিয়ে দিতে পারবেন কিনা। উনি রাজি হয়ে গেলেন।

body1_040118045900.jpg

বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম, একটা ম্যাসকটের কথা, এমন একটা ম্যাসকট, যার মাধ্যমে বাংলা সম্বন্ধে লোকে জানতে আগ্রহী হবে, আমি লোককে উপহার হিসাবে দিতে পারব, আবার আমার ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেকটা লোগো হিসাবেও ব্যবহার করতে পারব। আর এই লোগো বা ম্যাসকট এমন হবে, যা বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে মেলে আবার বেশ আকর্ষকও হয়। দেশবিদেশে ঘুরে লোককে উপহার দিতে হলে তা ভঙ্গুর হলে চলবে না, বেশ টেঁকসই হতে হবে, আবার হালকাও। এই পেঁচার মধ্যে সবক’টা বৈশিষ্ট্য পেয়ে গেলাম। উপরি হিসাবে পেলাম এই পেঁচার আকর্ষণীয় রং।

সবই হল, কিন্তু একটা ব্যাপার বাকি রয়ে গেল, আমার ভাবনা যদি অন্য কেউ কাজে লাগিয়ে নেন, তা হলে কী হবে? বাংলার প্রায় তিনশো বছরের ঐতিহ্যশালী এই শিল্প। তাও আমি আবেদন করলাম কপিরাইটের জন্য, মানে, আমি ছাড়া অন্য কেউ পর্যটনের বাণিজ্যিক প্রয়োজনে এই পেঁচা ব্যবহার করতে পারবে না।

body2_040118045919.jpg

এরপর থেকে যখন যেখানে গিয়েছি, সঙ্গে করে কয়েকশো পেঁচা নিয়ে গিয়েছি। 

এখন অনেকে বিদেশ থেকে ছবি পাঠান, দেখান তাঁর ঘরের কোথাও বা টেবিলে পেঁচা রাখা আছে। লোকে তো এখন আমাকে মজা করে আউল-ম্যান বলেও ডাকেন। এই ডাক শুনতে আমার ভালোই লাগে। কারণ এর মাধ্যমে স্বতন্ত্র একটা পরিচয় গড়ে তুলতে পেরেছি।

এখনও পর্যন্ত আমি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মূলত পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত অন্তত ২৭০০ জনকে এই পেঁচা উপহার দিয়েছি যাতে তাঁরা সান্দাকফু থেকে সুন্দরবন এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পর্যটনে আগ্রহী ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে তুলে ধরতে পারেন এবং এই জায়গা সম্পর্কে তাঁদের আগ্রহী করে তুলতে পারেন।

body3_040118045932.jpg

পিকচার পোস্টকার্ডের মাধ্যমে কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভে বেড়ানোর অভিজ্ঞতার কথা এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সৌন্দর্যের কথা তুলে ধরার পরে আমি নতুনগ্রামের একটি পেঁচা তাঁদের উপহার দিতাম। তাঁরা এই পেঁচার মাধ্যমে এই বাংলা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এতক্ষণ ধরে শোনা কাহিনির সঙ্গে একটা যোগ সূত্র স্থাপন করতে পারতেন। আমি পেঁচার কথা বলি, কারিগরের কথা আর তাঁদের গ্রামের কথা বলি। প্রতিটি পেঁচার গায়ে একটি করে কিউআর কোড বসানো থাকে। সেখানে স্ক্যান করলেই তাঁরা পেঁচা সম্বন্ধে জেনে জান। এ রকমও দেখেছি, যে বিদেশি পর্যটন মেলায় স্রেফ পেঁচার ছবি দেখে লোকে আমায় খুঁজে বার করেছেন। 

আরেকটা কথা, ম্যাসকট থাকলে তার একটা নামও থাকে। আমাদের নতুনগ্রামের পেঁচারও একটা নাম দিয়েছি, পেঞ্চু।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

DEBJIT DUTTA DEBJIT DUTTA

Director and CEO Impression Tourism Services

Comment