শেক্সপিয়রের আত্মীয়দের শিকড় রয়েছে এই মহানগরেও, রয়েছে স্মৃতিও
জন টালবট শেক্সপিয়রের সমাধি রয়েছে সাউথ পার্ক স্ট্রিট কবরখানায়
- Total Shares
ঔপনিবেশিক বাংলাই ঐতিহ্যশালী ইংরেজি সাহিত্যের শেষ ঠিকানা। ভাষাতত্ত্ববিদ উইলিয়াম জোন্স এবং অন্য ভারতবিদরা তখন আরবি, পারসি, সংস্কৃত প্রভৃতি ভাষা অক্সব্রিজে বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিকারিকরাও সাহিত্যচর্চা করতেন। ওয়ারেন হেস্টিংস যখন মারাঠা ও হায়দার আলির সাথে যুদ্ধে মত্ত কিংবা বীরভূমের মহারাজা নন্দকুমারকে ফাঁসি দিতে বদ্ধপরিকর, তখনও কিন্তু সাহিত্য চর্চা ছিল অব্যাহত।
১৭৮৮ সালে ওয়েস্টমিনিস্টার্স হলে হেস্টিংসের বিরুদ্ধে এক নাটকীয় সালিশি সভা বসে। পরবর্তীকালে, টমাস ব্যাবিংটন ম্যাকাউলে একটি রচনায় সেই সভাটির বর্ণনা করেন। এই ম্যাকাউলে ভারতবর্ষে ইংরেজি শিক্ষার স্থপতি ছিলেন।
কিন্তু, ব্রিটিশদের দুর্ভাগ্য কীভাবে হেস্টিংস, ম্যাকাউলে এবং কলকাতার শেক্সপিয়র পরিবারের সঙ্গে মিলন ঘটাল সেই গল্প আপনি কোথাও খুঁজে পাবেন না।
শ্রীহট্টের হাতি শিকারি
উইলিয়াম শেক্সপিয়রের দাদু উইলিয়াম মেকপিস টাকেরে শ্রীহট্টের জেলাশাসক হিসাবে ভারতে এসেছিলেন। জেলাশাসকের কাজের পাশাপাশি তিনি চৌরঙ্গী ও লন্ডনের লিডেনহল স্ট্রিটে পাতিলেবু ও হাতির চোরাকারবার চালাতেন।
সাউথ পার্ক স্ট্রিট কবরখানা
১১৭৬ সালে অবসর নেন টাকেরে। এই সময়ের মধ্যে এতটা অর্থ উপার্জন করে ফেলেছিলেন তিনি যে তাঁর পরবর্তী তিন প্রজন্মের কোনও কাজ করবার প্রয়োজন ছিল না। শুধু তাই নয় হাতি মৃত্যু নিয়ে তিনি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করে প্রায় ৩,৭০০ পাউন্ড (বর্তমানে ৭০ লক্ষ পাউন্ড) উপার্জন করেছিলেন।
তিনি ভারতবর্ষের প্রচুর ক্ষতি করেছিলেন। কিন্তু তাঁর বংশবৃতান্ত তার কর্মকান্ডকে ঢেকে দিয়েছে। তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁর দৌলতেই শেক্সপিয়র বংশের একটি শাখা এই শহরে বসবাস করত।
জন টালবট শেক্সপিয়র
সাউথ পার্ক স্ট্রিট কবরখানায় দু'দুজন শেক্সপিয়রের কবর রয়েছে। এদের মধ্যে একজন জন টালবট শেক্সপিয়র। ইনি জন ও ম্যারি শেক্সপিয়রের পুত্র এবং ১৭৮৩ সালে ইংলন্ডে জন্মগ্রহণ করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে যোগদান করে ১৮০০ সালে কলকাতায় আসেন। ১৮০৩ সালে তিনি উইলিয়াম মেকপিস টাকেরের (বড়) কন্যা এমিলিকে বিয়ে করেন।
উল্টোদিকে, বড় টাকেরের ষষ্ঠ সন্তান ফ্রান্সিস জনের টালবট শেক্সপিয়রের বোন ম্যারিয়ানকে বিয়ে করেন। টাকেরের আর একজন পুত্র রিচমন্ড অ্যানি বেচেরকে বিয়ে করেন। রিচমন্ড লন্ডন থেকে এসে রেভিনিউ বোর্ডের সচিব হন। এই অ্যানি ও রিচমন্ডের পুত্র হচ্ছেন উইলিয়াম মেকপিস টাকেরে। ১৮১১ সালে আলিপুরের টাকেরে ভবনে উইলিয়ামের জন্ম হয়। রিচমন্ড ১৮১৫ সালে মারা যান এবং তাকে নর্থ পার্ক স্ট্রিট কবরখানায় সমাধিস্থ করা হয় যেখানে পরবর্তীকালে অ্যাসেম্বলী অফ গড চার্চ স্কুলটি গড়ে ওঠে।
উল্টোদিকে, জন তালবট ও এমিলি শেক্সপিয়র তাদের পুত্রের নাম রেখেছিলেন রিচমন্ড। এই রিচমন্ড ক্যাম্পবেল ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন এবং মধ্য ভারতে (সেন্ট্রাল প্রভিয়েন্স) গভর্নর জেনারেলের এজেন্ট হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। জন টালবট শেক্সপিয়রের আর এক ছেলের নাম উইলিয়াম মেকপিস শেক্সপিয়র। ১৮৩৫ সালে তিনি লখনৌতে মারা যান।
জন টালবট শেক্সপিয়র বীরভূমের সহকারী জেলাশাসক ছিলেন। ১৮২৫ সালে তিনি সমুদ্রে যাত্রা করবার সময় মারা যান। তার সমাধি সাউথ পার্ক স্ট্রিট কবরখানায় রয়েছে।
এই দুই পরিবারের শেক্সপিয়রের সম্পর্কের কথা দুটি জায়গায় উল্লেখ আছে - জর্জ রাসেল ফ্রেঞ্চের একটি প্রবন্ধে ও শার্লট কারমাইকেল স্টোপসের শেক্সপিয়র ফ্যামিলি। রাসেল ফ্রেঞ্চ জানাচ্ছেন যে এই শাখাটি স্টেপনি শেক্সপিয়র থেকে শুরু হয়েছে যিনি এক হয় শেক্সপিয়রের ভাই গিলবার্ট কিংবা কাকা টমাসের উত্তরসূরি। আরও একটি তথ্য প্রমাণ আছে, এই পরিবারের কাছে ২০০ বছরের পুরোনো একটি কুলচিহ্ন আছে যা একেবারে কবির বাবার কুলচিহ্নের সঙ্গে মিলে যায়।
প্রশাসনের উচিত জন টালবট শেক্সপিয়রের কবরের উপর গুরুত্ব দেওয়া।

