জীবনে কখনও কখনও না বলাটাও জরুরি
[বই থেকে উদ্ধৃত] ‘একঘেঁয়ে ও বিরক্তকর ভাবে সময় কাটানোর চেয়ে লোকের নিন্দা শোনা ভালো!’
- Total Shares
আজকাল যেমন কোনও কিছু পছন্দ না হলে আমি সোজাসুজি 'না' বলে দিতে পারি, এখন মনে হয়ে এটা যদি অনেক আগে থেকেই করতে পারতাম! আমি এতটাই নম্র ছিলাম যে কোনও কিছু অপছন্দ হলেও কোনও দিন মুখ ফুটে বলতে পারিনি, “মাফ করবেন, আপনার সঙ্গে কথা বলতে না আমার ঠিক ভালো লাগছে না, আপনার সঙ্গে কী নিয়ে কথা বলব সেটাও ঠিক বুঝতে পারছি না। এই যে আমি আপনাকে এই কথাগুলো বলছি, আমার মনে হয় এতেও আমাদের দু’জনের সময় নষ্ট হচ্ছে। ঠিক আছে এখন চললাম,” উল্টে পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করেছি।
আগে কোনও কিছু না ভেবেই কেউ কোনও অনুষ্ঠান বা জমায়েতে যাওয়ার নিমন্ত্রণ করলে আমি হ্যাঁ বলে দিতাম। তারপর খুব বিরক্ত লাগত এটা ভেবে যে কেন হ্যাঁ বলতে গেলাম! কখনও কখনও পরে কোনও একটা ছুতো করে যেতাম না, কিন্তু আবার অনেক সময় কোন ছুতোয়নাতায় এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব হত না। অগত্যা যেতেই হত।
কিন্তু এখন কোনও অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ পেলে আগে 'না' বলি তারপর ভেবে দেখি যাব কি যাব না। আগে হলে ভাবতাম এই না বলার জন্য হয়ত লোকে বলবে "ইনি কেমন ধরণের মহিলা, নিজেকে কী মনে করেন?" অচিরেই বুঝলাম যে যাঁরা গালমন্দ করবেন, আমি তাঁদের অনুষ্ঠানে গেলেও তাঁরা গালমন্দ করবেন আর না গেলেও করবেন।
কোন অনুষ্ঠানে যাব আর কোথায় যাব না সেটা ঠিক করতে এখন আর বেশি সময় লাগে না। জায়গাটা যদি আমার বাড়ি থেকে খুব একটা দূরে হয়, মানে সেখানে পৌঁছবার জন্য আধ ঘণ্টার বেশি সময় লাগতে পারে, তা হলে সেই অনুষ্ঠানে আমি যাই না। যদি কোনও আত্মীয়ের অনুষ্ঠান না হয়, তা হলে তো একেবারেই যাই না। ঠিক একই ভাবে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কোনও অনুষ্ঠানে আমি যাই না। আমাদের সকলেরই বোধহয় এই সিদ্ধান্তগুলো জীবনে খুব তাড়াতাড়ি নিতে শুরু করা উচিৎ।
আমার এখনও মনে আছে ওই পার্টিগুলোতে শুধুমাত্র আয়োজক বা গৃহকর্তার মনে দুঃখ দেব না বলে খুব খারাপ স্বাদের খাবারদাবার হাসি মুখে খেতে হত। এখন কোনও নৈশভোজের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে হলে বাড়ি থেকে খাওয়াদাওয়া সেরেই যাই, নয়ত যাই না। লেখার ক্ষেত্রেও ঠিক এটাই করে থাকি এখন। যদি কোনও লেখার বিষয়বস্তু আমাকে না টানে তাহলে আমি সেটা লিখি না, তাতে কোন সম্পাদক কী মনে করলেন আমার খুব একটা কিছু আর আসে যায় না। কোনও কাজে যদি একশো শতাংশ মন না থাকে তা হলে সেই কাজের ফলও খুব খুব একটা ভালো হয় না।
শোভা দে
যদিও অতীতে বই লেখার বিষয়ে আমি এই ধরণের কয়েকটা ভুল করে ফেলেছিলাম। কয়েকটি বই আমি সত্যিই লিখতে চাইনি। অনেক সময় কয়েকজন নাছোড়বান্দা প্রকাশকের পীড়াপীড়িতে আমাকে নিজের অপছন্দের লেখা লিখতে হয়েছিল। বিশেষ ধরণের বই বিক্রির উদ্দেশ্য নিয়ে আমাকে দিয়ে তাঁরা ওই বই লেখাতেন। কখনও ভাবতেন না বইয়ের লেখক হিসেবে আমি কী বলতে চাই। যখন যে লেখক নাম করছেন তখন তাঁকে দিয়ে লেখাও। শুধু এখানেই নয়, বিশ্বের নানা জায়গায় এমনটাই হয়ে থাকে। লেখা আমার সহজাত। তাই মোটামুটি আশি হাজারের মতো শব্দ দিয়ে একটা গল্প তৈরি করা আমার কাছে খুব একটা কঠিন কাজ বলে মনে হয়নি কখনও।
এখানে একটা ব্যাপার আছে। এই আশি হাজার শব্দ থেকে লেখকের পছন্দ মতো একটা খুব সুন্দর রচনা সৃষ্টি হতে পারে আবার একটা অতি নিম্নমানের রচনাও সৃষ্টি হতে পারে। মাঝে মাঝে যখন চিন্তা করি, মনে হয়, এখন যদি ওই বইগুলো আমি আমার মতো করে লিখতে পারতাম তাহলে হয়ত লেখাটা অনেকটা অন্য রকম হতে পারত। তাতে লেখাটা যে খুব ভালো হত বা বাণিজ্যিক ভাবে খুব সফল হত এ কথা অবশ্য বলছি না।
প্রকাশকরা বাজারটা খুব ভালো বোঝেন। তাঁরা জানতেন বাজার ধরার জন্য আমার বইগুলো ঠিক কী ভাবে কাজে লাগাবেন। একজন 'সাহসী' মহিলার লেখা 'সেক্সি' উপন্যাস- এই ধরণের কিছু শব্দ দিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে আমার লেখা বইগুলো তাঁরা বাজারে প্রচার করতেন। এমন একজন মহিলা যিনি ভালো ছবি তোলেন এবং যিনি খুব ভালো সাক্ষাৎকার দেন। আমার নামের সঙ্গে একটা বিরক্তিকর তকমাও জুড়ে দেওয়া হয় - 'ভারতের জ্যাকি কলিন্স'। এটাতে আমার ঘোর আপত্তি ছিল। তকমাটা আমি চিতায় ওঠা পর্যন্ত আমার পিছু ছাড়বে না। জ্যাকি কলিন্স নামটাতে আমার কোনও অসুবিধা নেই কিন্তু আমি অন্য কারও নয়, নিজের পরিচয় নিয়েই থাকতে চাই।
আমি যৌনতা নিয়ে লিখতে পছন্দ করি, তা নিয়ে আমার কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু পাঠকের কাছে লেখাগুলো একঘেঁয়ে হয়ে যাচ্ছিল। সে জন্য লেখার সময় আমাকে যৌনতার মাপকাঠি দিনে দিনে বাড়িয়ে যেতে হচ্ছিল। তারপর একদিন আমি যৌনতা নিয়ে লেখা একেবারে বন্ধ করে দিয়ে মার্জিত ও তথ্যভিত্তিক লেখা লিখতে শুরু করলাম। কিন্তু পাঠকরা এই লেখাগুলো ঠিক পছন্দ করলেন না কারণ ততদিনে আমার লেখার জন্য আমি 'পর্ন লেখক' হিসেবে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই একজন পর্ন লেখকের কলমে এমন ধরনের লেখা পাঠকদের রুচল না।
তাই বাজারের চাহিদায় একবার এটা একবার ওটা লিখতে লিখতে শেষটায় খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তাই ঠিক করলাম কী লিখলাম আর কী না লিখলাম তাতে আর আমার কিছু আসে যায় না। তাই এই সব ভাবনাচিন্তা ছেড়ে দিয়ে জীবনটা আনন্দে কাটানোই ভালো। ভবিষ্যতে যৌনতা নিয়ে আমি আরও অনেক বই লিখতে চাই, কিন্তু আমাদের গোঁড়া সমাজ কী বলবে? “ইয়ে বুড়িয়া বড়ি বদমাস হ্যায়।" শুধুই কি আনন্দ? আমার জীবনে আনন্দের কোনও অভাব নেই। তা ছাড়া লোকে যখন আমাকে বুড়িয়া বলছেন তখন নয় একটু বদমায়েশই হলাম। একঘেয়ে ও বিরক্তকর হওয়ার চেয়ে বদমায়েইশ হওয়া অনেক ভালো।
(সৌজন্য: মেল টুডে)

