জনসমক্ষে নগ্ন নারী, এবার ভয় পেয়েছে পুরুষ

আড়ালে মহিলাদের উপর যে অত্যাচার চালান যায় সেটা জনসমক্ষে সম্ভব নয়

 |  4-minute read |   12-04-2018
  • Total Shares

মহাশ্বেতা দেবীর দুর্দান্ত ছোট গল্প - 'দ্রৌপদী'তে একজন সাঁওতাল মহিলাকে পুলিশ হেফাজতে বারবার ধর্ষণ করা হয়।গল্পের শেষে যখন তাঁর ওপর প্রবল অত্যাচার চালাবার পর মেয়েটিকে জামাকাপড় ফেরত দেওয়া হয়ে তখন মেয়েটি সেগুলো ছিড়ে ফেলে। রক্তাক্ত মেয়েটি নগ্ন অবস্থায় নিরাপত্তা বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিককে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন। জীবনে ওই প্রথমবার আধিকারিক ভয় পান।

একজন মহিলা যখন জনসমক্ষে নগ্ন হন, তখন সমাজের লজ্জা পাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই মহিলারা জনসমক্ষে নগ্ন হয়েছেন। একটি পিতৃতান্ত্রিক সমাজে একজন মহিলার শরীর ও তাঁর শরীরকে ঘিরে লজ্জাটা একটা খুব বড় জিনিস।

তাই সবার সামনে যদি কোনও মহিলা নগ্ন হন তা সমাজ ভালো চোখে দেখে না সেটা হয়ে যায় বিদ্রোহ করার সামিল।

sri_body_041218064047.jpgতিনি বিদ্রোহী

সিনেমা জগতে 'কাস্টিং কাউচের' বিরোধিতা করে, তেলুগু অভিনেত্রী শ্রী রেড্ডি হায়দ্রাবাদের রাজপথে নগ্ন হন। সিনেমায় সুযোগ করিয়ে দেওয়ার নামে অনেক সময় অভিনেতা-অভিনেত্রীকে শারীরিক মিলনে বাধ্য করা হয়ে থাকে। 'নোংরামি করার অভিযোগে' পুলিশ তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। শোনা যাচ্ছে এই ঘটনাটি সমগ্র সিনেমার দুনিয়াকে বিস্মিত করেছে। ঘটনার একদিন পর শ্রী রেড্ডিকে তাঁর বাড়ি খালি করে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। অনুমান করা হচ্ছে যে একজন নারীর যাঁর নারীসুলভ আচরণ করা উচিত তিনি তা করেননি বলেই তাঁকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

নারী ও পুরুষের মধ্যে এই বৈষম্যে হলিউডে কাস্টিং কাউচকে কেন্দ্র করে হার্ভে ওয়েস্টেইনের ব্যবহারের এই যৌন্য নিগ্রহের সমস্যা #মিটু প্রচারের মাধ্যমে এই প্রতিবাদটা একটা অন্য মাত্রা পায়।তেমন ভাবে সারা না ফেলতে পারলেও শ্রী রেড্ডির আচরণ যে কোনও নোংরামো নয় সেটা বলবার অপেক্ষা রাখে না।

তিনি বিদ্রোহী।

মহিলাদের ওপর পুরুষের অত্যাচার

ঠিক এভাবেই ২০০৪ সালে মণিপুরের মনোরমাকে অসম রাইফেলসের এক নিরাপত্তা রক্ষী যখন ধর্ষণ করে ও তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন চালায় তখন ওখানকার মহিলারা এই ঘটনার প্রতিবাদের জনতার সামনে নগ্ন হয়েছিলেন। আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল প্রোটেকশন অ্যাক্টে (আফস্পা) কী ভাবে উর্দিধারী নিরাপত্তা রক্ষিদের শাস্তি হওয়া বা তাদের হাজত বাস করার থেকে বাঁচিয়ে দেওয়া হলে, মহিলাদের মনের অবস্থা ঠিক কেমন হয় সেই বিষয়টাই উঠে আসে।

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় একটি সম্প্রদায় অন্য আর একটি সম্প্রদায়ের চেয়ে নিজেকে উচ্চতর দেখতে গিয়ে এবং রাজনৈতিক স্বার্থচরিতার্থ করতে গিয়ে অনেক সময় একজন নারীর শরীরকে একটা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। জনপ্রিয় লেখিকা সুজাতা গিডলা বলেছেন যে পুরুষদের খারাপ নজর এড়াতে দলিত মহিলারা কোনও খুব উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরেন না। উচ্চবর্ণের পুরুষরা নিম্নবর্ণের দলিত মহিলাদের ছোঁয়া তাদেরকে অপবিত্র করবে বলে তাদের কাছাকাছি আসেন না অথচ এই মহিলাদের উপরের এই পুরুষরা যৌন নিগ্রহ চালায়।

সম্প্রতি যাযাবার সম্প্রদায়ের একটি আট বছরের মেয়ে -আসিফাকে একটা মন্দিরে আটক করে রেখে মাদক সেবক করিয়ে ধর্ষণ করা হয়। গোটা ঘটনায় জম্মু ও কাশ্মীর স্তব্ধ হয়ে গেছে।

sri_body2_041218064148.jpgমহাশ্বেতা দেবীর দ্রৌপদী। ছবি: ওয়ান ইন্ডিয়া পিপল

তা হলে কোনও মহিলা যদি জন জনসমক্ষে নগ্ন হন তাহলে আপত্তিটা কোথায়? আপত্তির জায়গাটা হল, একজন মহিলা যখন নগ্ন হন তখন তিনি সমাজের প্রতিষ্ঠিত ভুলগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শানাতে গিয়ে তাঁর শরীরটাকে একটা অস্ত্রের মতো ব্যবহার করছেন। একই সঙ্গে তিনি সমাজকে একটা বার্তা দিচ্ছেন যে তিনি তাঁর এই নগ্নতা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিত বা লজ্জিত নন বরং সমাজের খারাপ দিকটা তাঁকে ওই মুহূর্তে বেশি চিন্তায় ফেলেছে, যার বিরুদ্ধে তাঁর জেহাদ।পুলিশ হেপাজতে দ্রৌপদী নামে একজন সাঁওতাল মহিলাকে রাতভর অকথ্য শারীরিক অত্যাচার করার পর তাঁকে যখন তাঁর জামাকাপড় ফেরত দেওয়া হয়ে তখন তিনি সেই জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলতে থাকেন, এ হেন একটি গল্পে পদ্মবিভূষণ ও ম্যাগসাইসাই জয়ী মহাশ্বেতা দেবী মহিলাদের প্রতি সমাজের পুরুষদের মনের এই হটাৎই ভয়ে পেয়ে যাওয়ার ভাবটা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পেরেছেন।

আড়ালে মহিলাদের উপর যে অত্যাচার করা যায়, সেটা তো আর জন সমক্ষে সম্ভব নয়!

২০১৬ সালে মহেন্দ্রগড়ে হরিয়ানা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের পড়ুয়ারা এই গল্পটি মঞ্চস্থ করে। এই নাটকটা দেখে সমাজে উন্মাদনার সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটানো, কোনও কিছুতে আপত্তি দেখানো ও নানা প্রশ্ন করার আখড়া হয়ে উঠেছে। যদিও এবিভিপি স্থানীয় সেনাবাহিনীকে নিয়ে এই ছোটোগল্পটিকে রাষ্ট্রবিরোধী বলে প্রতিবাদ জানায়।

শ্রী রেড্ডি টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে কে বলেন, "নিজেকে মেলা ধরার এটাই একমাত্র রাস্তা। তাই সিনেমা জগতের যে সব লোকেরা কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁদের সামনে আমার নগ্ন হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। তবুও আমি কোনও পাঠ পাইনি। আমার মতো অনেক মহিলা এই অন্যায়ের শিকার হয়েছেন আর এ নিয়ে আমি বহু চিৎকার করা সত্ত্বেও মুভি আর্টিস্টিস অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে কোনও পদক্ষেপ করা হয়েনি। তাই আমি জনসমক্ষে নগ্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।"

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

APARNA KALRA APARNA KALRA @apkal

The writer is a journalist and Delhi School of Economics alumnus who reports often on education and gender

Comment