কবীর: রুপোলি পর্দায় সামাজিক বার্তা

ছবিটিতে এমন কয়েকটা এফেক্ট ব্যবহার করা হয়েছে যা বাংলার দর্শক আগে কোনও দেখেননি

 |  3-minute read |   20-04-2018
  • Total Shares

আজ অবধি যে ক’টা ছবি করেছি একটা ছবিও রাজনীতির ঊর্ধ্বে নয়, সবক’টা ছবিতেই কোনও না কোনও একটা রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। 'কবীর' সেই ধারার আর একটা ছবি। ছবিটা একটা থ্রিলার। এই সময় দাঁড়িয়ে আমারদের চার পাশে যে সব রাজনৈতিক ঘটনা ঘটছে তাকেই মূল প্রতিপাদ্য রেখে যেটা আমার ঠিক বলে মনে হয় সেটাই ছবির মাধ্যমে দেখিয়েছি।

আমার মনে হয় আমাদের দেশ ও দেশের মানুষকে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার নামে বিভাজিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে দিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাই আমি এই সব কিছুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একটা ছবি করার কথা ভেবেছি। ছবিটিতে দু’টো জিনিষ দেখানো হয়েছে। প্রথমত, সিনেমায় একজন সন্ত্রাসবাদীকে খুঁজছে। দ্বিতীয়ত, একজন মানুষ কী ভাবে সন্ত্রাসবাদী হয়ে উঠছে, কী ভাবে জন্ম নিচ্ছে সন্ত্রাসবাদ।

body3_042018051429.jpgছবি সৌজন্য: দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চারস

রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদের নামে দেশে দাঙ্গা হয়। হিন্দু-মুসলমান উভয়েরই ঘর জ্বালান হয়। এরপর মুসলমানরা সংগঠিত হয়। এদের মধ্যেই কিছু সমাজবিরোধী মানুষ মুম্বাইতে বিস্ফোরণ ঘটায়। অন্য দিকে আবার হিন্দুরা দাঙ্গা চালায়। আমরা গুজরাটের সেই ভয়ঙ্কর দাঙ্গাটাও দেখলাম। এই যে একের পর এক দাঙ্গা ধারাবাহিক ভাবে হয়ে চলেছে বা সম্প্রতি একটি ছোট্ট মেয়েটাকে যে ধর্ষণ করে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হল, যদি এই মেয়েটির কোনও ভাই থাকে এবং সে যদি ভবিষ্যতে একজন সন্ত্রাসবাদী হয়ে ওঠে তাহলে তাকে সন্ত্রাসবাদী তৈরি করার দায়টা কার হবে?

আমার ছবির সঙ্গে বাস্তবের বেশ মিলে গেছে। আমাদের সমাজে বস্ত্রহীনতা, খাদ্যহীনতা ও অন্ন অভাব এমন একটা হতাশ করা অবস্থার সৃষ্টি করে যে এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে সমাজের কিছু মানুষ ধর্মকে সামনে রেখে একটা ছায়াযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। এটাই আমার ছবিতে বলার চেষ্টা করেছি।

ছবির সংলাপের মধ্য দিয়ে আমি সিরিয়াস পলিটিক্যল বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি যেমন -"মুসলমানরা দাঙ্গা করে না, হিন্দুরা দাঙ্গা করে না, দাঙ্গা করে দাঙ্গাবাজরা।" তবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের কিছু লোকজন এটা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। ছবিটাকে 'A' সার্টিফিকেটও দেওয়া হয়েছে। আমার মনে হয় আমাদের পরের প্রজন্মের সত্যিটা জানা উচিৎ।

ছবি তৈরি করার কতগুলো সেফ জোন আছে যার থেকে বেরিয়ে সিনেমা বানালেই মুশকিল। তাই এই সব বিষয়গুলোর থেকে বেরিয়ে কেউ সিনেমাও করতে চায় না। কিন্তু আমি যে ধরণের বিষয়বস্তু তুলে ধরেছি তাতে রাষ্ট্র তেমন একটা খুশি হয় না। এইসব ছবিগুলো পুরস্কারও পায় না। কিন্তু আমি সেই সেফ জোনে খেলতে চাইনি কখনোই।

body2_042018051455.jpgছবি সৌজন্য: দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চারস

আমাদের সেন্সর বোর্ড বড়ই শিশুসুলভ। আমি সত্যিই জানি না, আমার এই ছবিটাকে কেন 'A' সার্টিফিকেট দেওয়া হল। ছবিটিতে এমন একটাও দৃশ্য বা সংলাপ নেই যাতে ছবিটাকে 'A' দেওয়া যেতে পারে। আরও অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে যে, ছবিটির ট্রেলরে তিনটে বিস্ফোরণ দেখানো হয়েছে, আমার ছবিতেও তিনটি বিস্ফোরণ আছে। ট্রেলারে দেখা যাবে একজন জঙ্গি কথা বলছে, আমার ছবিটাতেও ঠিক তাই আছে। অথচ ট্রেলরে 'U' দিচ্ছে কিন্তু সিনেমাটার বেলায় 'A'।

ছবিটা দর্শকদের বেশ ভালো লেগেছে। এমনকি এমন কয়েকটি জায়গা থেকে প্রশংসা মিলেছে, যা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। এতটাই অপ্রত্যাশিত ছিল যে, আমি গোড়ার দিকে বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।

ছবিটিতে একটা কাওয়ালি গানও আছে।

আমি দেবের মুখে এমন কথাও শুনলাম যে একজন প্রযোজক ছবিটির হিন্দি রাইট কিনতে চেয়েছেন।

body1_042018051525.jpgছবি সৌজন্য: দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চারস

আমার মনে হয়, এই ছবিতে দর্শক নতুন কয়েকটা জিনিস পাবেন, প্রথমত আমরা হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবিটিকে একটু নিউজের বা তথ্যচিত্রের মতো লুক দিতে চেয়েছিলাম। প্রায় ৮০ শতাংশটাই হ্যান্ডহেল্ড।

দ্বিতীয়ত আমরা প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করে শুটিং করেছি। প্রাকৃতিক আলো ছাড়া ছবিতে আর কোনও আলোই ব্যবহার করা হয়নি। আমার মনে হয় না, এর আগে বাংলা ছবিতে গোটা একটা ছায়াছবি প্রাকৃতিক আলোয় শুট করা হয়েছে বলে। ছবিতে সব কটা শুটিং লোকেশনই আসল। আমরা কোনও সেট বানাইনি। সিনেমার বেশির ভাগটাই একটা ট্রেনের মধ্যে শুট করা হয়েছে।

সিনেমা: কবীর

অভিনয়: দেব, রুক্মিনী

পরিচালক: অনিকেত চট্টোপাধ্যায়

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ANIKET CHATTOPADHYAY ANIKET CHATTOPADHYAY

Film Director

Comment