ফ্যাক্ট চেক: রামরহিমের ভক্তদের উপর লাঠি চালানোর ভিডিও কাশ্মীরের বলে চালালেন পাক মন্ত্রী
বানানো ভিডিও-সহ দাবি ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়
- Total Shares
জম্মু কাশ্মীরে সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারা বাতিল করার পর থেকেই পাকিস্তান তার সক্রিয় বিরোধিতায় নেমে পড়েছে। কাশ্মীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় ইত্যাদি প্রমাণ করার জন্য প্রচারের কসুর করছে না প্রতিবেশী দেশ। এমনকি পিছিয়ে নেই সেখানকার প্রশাসনিক কর্তারাও।
সম্প্রতি পাকিস্তানের উপকূল বিষয়ক মন্ত্রী আলি হায়দার জায়দি একটি ভিডিও ট্যুইট করেন। সেখানে দেখা যায় প্রধানত একদল মহিলার উপর নির্দয় ভাবে লাঠি চালাচ্ছে পুলিশ। কোলে শিশু-সহ এক আহত মহিলা ও এক বয়স্ক মহিলাকে মাটিতে পড়ে থাকতেও দেখা যায়। গোটা ভিডিওটি জুড়েই এক মহিলার কান্না-জড়ানো কণ্ঠ শোনা যায় যিনি বলতে থাকেন, “ভিডিওটি যত পারেন ছড়িয়ে দিন যাতে নরেন্দ্র মোদী এটি দেখতে পারেন এবং অপরাধীরা ধরা পড়ে।“
জায়দি ট্যুইটারে দাবি করেন, কাশ্মীরে মহিলাদের উপর পুলিশি অত্যাচারের ভিডিও এটি।
ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফওয়া) খতিয়ে দেখে যে, এই ভিডিওটি একেবারেই ভুয়ো এবং দাবিও ভিত্তিহীন। ভিডিওটি কাশ্মীরের নয়, হরিয়ানার। এবং অন্তত বছর দু’য়েকের পুরনো।
গত ১৮ অগস্ট, ২০১৯ জায়দি এক মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি ট্যুইট করে লেখেন – “সারা পৃথিবী দেখুক কাশ্মীরে কী করছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। প্রাচ্যের হিটলার যখন জেগে উঠছে, পৃথিবী তখনও ঘুমোচ্ছে। আরও দেরি হয়ে যাওয়ার আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচিত অবিলম্বে ভারতের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এই দানবকে নিয়ন্ত্রণে আনা।“ এর সঙ্গে তিনি সেভ কাশ্মীর ফ্রম মোদী, ইন্ডিয়ান হিটলার মোদী ইত্যাদি হ্যাশট্যাগও ব্যাবহার করেন। পোস্টটির আর্কাইভড ভার্শন দেখতে পাবেন এখানে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ট্যুইটটি সাড়ে ছ’হাজার মানুষ লাইক করেছেন এবং পাঁচ হাজারেরও বেশি লোক রিট্যুইট করেছেন।
Let the world see what @narendramodi Govt is doing in #KashmirThe #Hitler from the East rises while the world sleeps.@realDonaldTrump should consider imposing trade sanctions on India to control this monster before it’s too late! #SaveKashmirFromModi #IndianHitlerModi pic.twitter.com/YS5kBZAmk1
— Ali Haider Zaidi (@AliHZaidiPTI) August 18, 2019
ফেসবুকেও ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে।
ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফওয়া) খুঁজে দেখে যে, জায়দির ট্যুইটেই বেঙ্গালুরুর সিআরপিএফ জওয়ান কাশ্যপ কাডাগুট্টুর লেখেন, ভিডিওটি কাশ্মীরের নয়। হরিয়ানায় ডেরা সাচ্চা সৌদা রামরহিমের ভক্তকূলের উপর পুলিশের লাঠিচার্জের ভিডিও এটি। ঘটনা হল, ২০১৭ সালের ২৫ অগস্ট হরিয়ানার পঞ্চকুলা এলাকায় ডেরা সাচ্চা সৌদা বাবা রামরহিমের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে তাঁর ভক্তেরা হিংস্র আক্রমণ শুরু করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে লাঠি চালাতে হয়।
Video from Haryana's Ram Rahim protests being claimed to be from Kashmir. Imposing false audio in Kashmiri language doesn't make it genuine. Request @TwitterIndia @Twitter to suspend the account of fake news peddler. Inaction will create disturbances. One has be to accountable. https://t.co/ZbN9WvwlMm
— Kashyap Kadagattur ???????? (@iamkash_kr) August 19, 2019
সংবাদপত্রেও সেই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। জিএসএ গ্যালারি, নিউজ টিভি নামের একাধিক ইউটিউব চ্যানেলেও সেই সময় এই ভিডিওটি দেখা গিয়েছিল। জায়দির পোস্ট করা ভিডিও আর এই ভিডিওর স্ক্রিনশট নিয়ে দেখা গেছে একই ছবি ব্যবহৃত হয়েছে। শুধু ডেরা সাচ্চার ভিডিওতে ওই কান্নাভেজা মহিলাকণ্ঠ নেই। সেটি পরে জোড়া হয়েছে। কাজেই এর থেকেই স্পষ্ট যে ভাইরাল ভিডিওটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই বানানো হয়েছে।
ভিডিওটির দ্বিতীয় ভাগে দেখা যায় এক মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় কোলে একটি শিশুকে নিয়ে মাটিতে পড়ে রয়েছেন। তাঁর পাশেই পড়ে রয়েছেন এক বয়স্কা মহিলা। আফওয়া খতিয়ে দেখে যে এই অংশটি একটি সম্পূর্ণ অন্য ঘটনার ভিডিও থেকে নেওয়া হয়েছে।
তেলুগু খবরের চ্যানেল সিভিআর নিউজ এবং টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে এই ঘটনাটি তেলেঙ্গানার। সেখানকার এক পুলিশকর্মীর পরকীয়া সম্পর্ক ধরা পড়ে যাওয়ায় সে তার স্ত্রী, সন্তান ও শাশুড়িকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারে। এটি সেই মারধরের ভিডিও।
সুতরাং একথা স্পষ্ট যে পাক মন্ত্রী জায়দি যে ভিডিওটি পোস্ট করেছেন সেটি দুটি পুরনো ভিডিও একসঙ্গে মিলিয়ে বানানো হয়েছে। এর কোনও সত্যতা নেই। কাশ্মীরের সঙ্গেও এর কোনও সম্পর্ক নেই।
JHOOTH BOLE KAUVA KAATE
The number of crows determines the intensity of the lie.
- 1 Crow: Half True
- 2 Crows: Mostly lies
- 3 Crows: Absolutely false