অ্যাসিডিটি কমাতে এড়িয়ে চলুন জাঙ্কফুড, পেট খালি রাখবেন না

শসা খেয়ে অম্বল হলে বীজ বাদ দিয়ে খান

 |  6-minute read |   03-04-2018
  • Total Shares

গ্যাস, অম্বল বা বুকজ্বালা-এই সমস্যাগুলো বোধহয় আমাদের সবার খুব চেনা। অম্বল বা অ্যাসিডিটি একটা সাধারণ সমস্যা। একটু-আধটু আমরা সকলেই এতে ভুগি। আসলে এটা কোনও রোগ নয়, তবে গোড়াতেই নিয়ন্ত্ৰণ না করতে পারলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজার ওষুধে ছেয়ে গেছে। কিন্তু আমরা যদি একটু সচেতন হই এবং কয়েকটা নিয়ম মেনে চলতে পারি তাহলেই অম্বল থেকে মুক্তি পেতে পারি।

অ্যাসিডিটি কেন হয়?

অ্যাসিডিটি নানা কারণে হতে পারে, যেমন অনিয়মিত জীবনযাপন,অসময় খাওয়াদাওয়া করা, অনেকক্ষণ পেট খালি রাখা, বেশি ঝাল বা অতিরিক্ত তেল-মশলা দেওয়া খাবার খাওয়া, জল কম খাওয়া, দুশ্চিন্তা করা, অতিরিক্ত মদ্যপান করা এবং শারীরিক পরিশ্রম না করা। এছাড়া নানা ওষুধ খেলে অ্যাসিডিটি হতে পারে, যেমন হার্টের ওষুধ বা এমন কয়েকটি ওষুধ যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে খেয় যেতে হয়েছে। তবে সাধারণত দুঃশ্চিন্তা বা স্ট্রেস, জাঙ্কফুড ও ফাস্টফুড বেশি মাত্রায় খেলে অ্যাসিডিটি হয়।

কী করবেন?

অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে কয়েকটা নিয়ম মেনে চলতে হবে। প্রত্যেকদিন মোটামুটি একটা নির্দিষ্ট সময় খাবার খেতে হবে। যখন-তখন খাওয়াদাওয়া করলে চলবে না। খেতে ইচ্ছে করছে না বলে কোনওদিন খেলামই না, সেটাও করলে চলবে না। ঠিক ঠিক সময়ে উপযুক্ত খাবার খেতে হবে। আমাদের অনেককে অফিসের জন্য সকাল-সকাল বেরতে হয় বলে প্রাতঃরাশ না করে এক্কেবারে ভাত খেয়ে বেরিয়ে পড়ি—এই অভ্যাসটা খুব খারাপ। কারণ সারা রাত পেট খালি থাকে তারপর সকালে কিছু না খেলে প্রায় পনেরো-ষোলো ঘণ্টার মতো আমাদের পেট খালি থাকে। খালি পেট অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।

তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে দুটো বিস্কুটের সঙ্গে এক কাপ দুধছাড়া চা খেতে পারেন। ঘুম থেকে ওঠার দেড় থেকে দু'ঘণ্টার মধ্যে প্রাতরাশ সেরে ফেলতে হবে। সকালের জলখাবার পেট ভরেই খাওয়া উচিৎ। যদিও তারপর সারাদিনে আর পেট ভর্তি করে না খেলেও কোনও অসুবিধা নেই।

আধুনিক জীবনযাপন ও অত্যাধিক চাপের ফলে আমরা সবাই এখন কমবেশি স্ট্রেসে ভুগি। তাই স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে নিয়মিত যোগব্যায়াম বা ফ্রি হ্যান্ড এক্সসারসাইজ করতে হবে। যখন মনে করছেন কোনও কারণে চাপ লাগছে তখন হালকা খাবার খাওয়াটাই শ্রেয়, কারণ এই সময় ভারী বা অতিরিক্ত তেল-মশলাসমৃদ্ধ খাবার সহজে হজম হতে চায় না। সাধারণত যে সব খাবারে বেশি পরিমাণে স্নেহপদার্থ রয়েছে তা থেকে অ্যাসিডিটি হতে পারে। এছাড়া, সাধারণত প্রত্যেকদিনের খাবারে খুব বেশি ঝাল ও তেল খাওয়া উচিৎ নয়। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো তেল-মশলা খেলেই যে অম্বল হয় এমনটা নয়। কতখানি তেল-মশলা খাচ্ছি তার উপর অ্যাসিডিটি হওয়া না হওয়া নির্ভর করেছে। তাই নিয়মিত ভাবে অম্লনাশক খাবার খাওয়া উচিৎ যেগুলি একটু ক্ষারকীয়, যেমন সয়াবিন, টকদই, ফ্যাট ফ্রি দুধ, টাটকা সবজি, আলু, বেশ কয়েক ধরনের ফল, মুগ ও মসুর ডাল, বিন প্রভৃতি। আবার ক্ষারকীয় খাবার বেশি খেলেও কিন্তু অম্বল হতে পারে। সব খাবারই খেতে হবে, কিন্তু ঠিক পরিমাণে।

কয়েকটি সবজি যেমন পেঁয়াজ বা টম্যাটো খেলে অনেকের গ্যাস অম্বল হয়। আবার অনেক সময় টক-জাতীয় কিছু সবজি যেমন পাতি লেবু বা মোসাম্বি খেলে অনেকের সহ্য হয় না, অম্বল হয়ে যায়। তাই খাবার সময় খেয়াল করে খেতে হবে এবং যে সব খাবার খেলে সমস্যা হতে পারে সেগুলো খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে বা কম পরিমাণে খেতে হবে।

কফি বা সফ্ট ড্রিংক সীমিত মাত্রায় খাওয়া উচিত। যাঁদের পাঁঠার মাংসে অম্বল হয়, তাঁরা সেটা এড়িয়ে চলতে পারেন, একই ভাবে যাঁদের মুরগির মাংস খেলে অম্বল হয়, তাঁরা সেটি এড়িয়ে চলতে পারেন। কয়েক ধরণের মাছেও অম্বল হয়ে অনেকের।

যাদের দুগ্ধজাত খাবারদাবার খেলে অ্যাসিডিটি হয়ে সেটা তাদের না খাওয়াই ভালো। সেক্ষেত্রে দুগ্ধজাত খাবার বাদ দিন বা দুধ খেলেও সেটা ঠান্ডা করে খান। যাঁদের ডিম খেলে সমস্যা হয় তাঁরা শুধু ডিমের সাদা অংশটা খান। কারণ ডিমের কুসুমে ফ্যাট থাকে বলে সহজে হজম হতে চেয়ে না কিন্তু ডিমের সাদা অংশে প্রোটিন থাকে তাই হজমে কোনও সমস্যা হয়ে না। ভাত বা চিনি জাতীয় হাই-স্টার্চ খাবার খেলে অম্বল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

অনেকে দুপুরের বা রাতে খাবার খেয়েই শুয়ে পড়েন। এটা একটা খুব খারাপ অভ্যাস। চেষ্টা করতে হবে শুতে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই খাওয়া সেরে ফেলতে হবে এবং খেয়েদেয়ে একটু হাটাঁচলা করতে হবে। খাবার সময় অতিরিক্ত জল খাওয়া চলবে না। খেয়ে উঠে মোটামুটি আধঘণ্টা পর জল খেতে হবে।সর্বোপরি পেট পরিষ্কার রাখতে হবে।

আমার অনেক ক্লায়েন্ট বলেন তাঁদের নাকি শসা হজম হয়ে না বা শসা খেলে অম্বল হয়। কথাটা ঠিক নয়। যেহেতু শসায় অনেক বীজ থাকে তাই তা হজম হতে অনেক সময় নেয়। যাদের শসা খেলে অম্বল হয়,তাঁরা বড় শসা না খেয়ে ছোট দেশী শসা খেতে পারেন, কিংবা শসার বীজ ফেলে দিয়ে খাওয়া যায় তাহলে অম্বল অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

যখন কোনও ব্যক্তি কোনও কারণে খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন তখন তাঁর হালকা খাবার খাওয়া উচিত। আমরা বলে থাকি খাবার সময় একটা হালকা গান বা সুর শুনতে শুনতে খেলে মন যেমন হালকা থাকে তেমন খাবারটা হজম হতেও সাহায্য করে।

আগে আমরা বাড়ির সবার সঙ্গে বসে খাবার খেতাম। এখন জীবনের ব্যস্ততার মধ্যে সেটা আর হয়ে ওঠে না। আমরা যদি সারাদিনে অন্তত রাতের খাবারটা পরিবারের সবার সঙ্গে বসে গল্প করতে করতে খেতে পারি তাহলে আমাদের মন ভালো থাকবে আর খাবার হজম হবে ভালো ভাবে। আর একটা জিনিস, খাবার সময় ফোনটাকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। কারণ খাবার খেতে খেতে ফোনে কথা বলা বা ফোনে ঝগড়াঝাটি করা একটা বাজে অভ্যাস। তাতে আমরা কী খাচ্ছি তাতে মনোনিবেশ না করে ফোনে কী করছি তাতে মনটা থাকে অনেক বেশি। যে খাবারটা খাচ্ছি সেটা খুব ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে। সময় হাতে নিয়ে খেতে বসতে হবে, কথায় বলে না, 'ডু নট হ্যাভ ইওর কারি ইন হারি। '

বাসি খাবার খেলে অম্বলের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। কাঁচা পাউরুটিতে ইস্ট থাকে। তাই কাঁচা পাঁউরুটি খেলে অম্বল হতে পারে। কাঁচা পাউরুটিতে ইস্ট থাকে বলে তা হজম হতে অনেকটা সময় লাগে। তাই পাঁউরুটি টোস্ট করে নিলে তা তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়।

এবার দেখে নিন একটা আদর্শ ডায়েট চার্ট, যা অম্বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে:

ডায়েট চার্ট:

*ঘুম থেকে উঠে চিনি ছাড়া এক কাপ লিকার চা, সঙ্গে দুটো সাধারণ বা ফাইবার কিংবা ক্রিমক্র্যাকার বিস্কুট। এবার একটু হাঁটাহাটি করুন বা কোন ফ্রি হ্যান্ড এক্সসারসাইজ করুন।

*দু'ঘণ্টা পর প্রাতঃরাশ করুন। যাঁর বাড়িতে যা জলখাবার হয় তাই খান, যেমন- রুটি, ছানা বা ডিম্-টোস্ট। আবার একদিন অন্তর আলাদা আলাদা প্রাতঃরাশ করতে পারেন। যাঁরা সকাল-সকাল ভাত খেয়ে কাজে বেরোন তাঁরা ভাতই খেতে পারেন।

*যাঁরা কাজে বেরিয়ে যান তাঁরা এবার এক কাপ কালো চা খেতে পারেন। যদি দুপুরের খাবার খেতে একটু দেরি হয় তাহলে এক ঘণ্টা পর একটা গোটা ফল খান। তার এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে দুপুরের খাবার খান। দুপুরের খাবারটা একটু হালকা হলেই ভালো।

* মধ্যাহ্নভোজের দুই ঘণ্টা পর আবার একটা ফল খান।

* পাঁচটা থেকে ছটার মধ্যে, মোটমাট ফল খাওয়ার এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে এক কাপ চিনি ছাড়া লিকার বা কালো চা এবং দুটো বিস্কুট খান।

*সন্ধ্যাবেলায় একটু মুড়ি বা শুকনো চিঁড়েভাজা বা ড্রাই টোস্ট কিংবা উপমা খেতে পারেন। সঙ্গে একটু স্যালাডও চলতে পারে।

*রাত সাড়ে-নটা থেকে দশটার মধ্যে রাতের খাবারটা সেরে ফেলুন। একটা কথা মনে রাখতে হবে, রাতের খাবারটা যেমন একটু হালকা হতে হবে তেমন একটু কম পরিমাণে খেতে হবে। রাতের পেট ভরে খাওয়া কখনোই উচিৎ নয়। এবার ১০ থেকে ১৫ মিনিট হেঁটে নিয়ে ঘুমোতে যাওয়া ভালো। মাথায় রাখতে হবে সন্ধ্যার পর থেকে কোনও রকম হাই কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম খাওয়াই ভালো, যেমন রুটি বা ভাত।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

RONITA GHOSH RONITA GHOSH

Dietitian

Comment