আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কী ভাবে বদলে দিচ্ছে ভারতের ফ্যাশন দুনিয়াকে?

মেশিন শয়ে শয়ে ডিজাই পাশাপাশি রাখলে বেরিয়ে আসছে সব চেয়ে উপযুক্ত নকশাটি

 |  4-minute read |   23-03-2018
  • Total Shares

২০০৬ সালের সিনেমা ‘দা ডেভিল উয়ারস প্রাদা’-তে অভিনেতা মেরিল স্ট্রিপ, সিনেমায় যাঁর নাম মিরান্ডা প্রিস্টলি, একটি নামী প্রকাশনার একজন প্রভাবশালী ফ্যাশন সম্পাদক ছিলেন। মিরান্ডা প্রিস্টলির সহায়কের ফ্যাশন সম্বন্ধে যে ধারণাটা ছিল সেটা মিরান্ডা প্রিস্টলির ফ্যাশনের ধারণার সঙ্গে খাপ খেত না। তাই অসন্তুষ্ট হয়ে মিরান্ডা প্রিস্টলি তাঁর সহায়কের অজ্ঞতা দেখে তাকে বকাবকি করেন, এবং বলেন যে ফ্যাশন তাকেই বলে যেটা নির্দিষ্ট কয়েকজন অভিজ্ঞ ফ্যাশন ডিজাইনারা ঠিক করেন। কিন্তু মিরান্ডা প্রিস্টলি সেদিন ভাবতে পারেননি যে এমন একটা দিন আসবে যখন এই অভিজ্ঞ ফ্যাশন ডিজাইনারদের বদলে কয়েকটা মেশিন ঠিক করে দেবে যে মানুষ কী ধরণের পোশাক পরবে।

এ যুগে যেমন সর্বত্র কৃত্রিম বুদ্ধি বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার হচ্ছে, ঠিক তেমন ভাবেই হাল ফ্যাশন কী হবে সেটা এখন এই প্রযুক্তির সাহায্যেই ঠিক করা হচ্ছে। ভারতের ফ্যাশন জগৎ ও রিটেল বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। লোকে কী ধরণের পোশাক পরবে, সেটা ঠিক করে দিচ্ছে প্রযুক্তিই।

মিন্ত্রার প্রধান প্রোডাক্ট আধিকারিক অম্বরীশ কেনঘের মতে, “ফ্যাশন হল এমন একটা শিল্প যেখানে অনেক ডেটার দরকার পড়ে।" দেশের সব চেয়ে বড় ই-টেলর সংস্থাটি প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি ডিজাইনে টি-শার্ট তৈরি করেছে যার নাম 'মোদা রাপিদো' ও ‘হিয়ার অ্যান্ড দেয়ার'। মিন্ত্রা জানিয়েছে গত ছ'মাসে বাণিজ্যিক ভাবে এই দু'টো ব্র্যান্ড সাফল্য লাভ করেছে। এমনকি ডিসাইনারদের ডিসাইন করা টি-শার্টের চেয়ে মেশিনে ডিসাইন করা টি-শার্টগুলো অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে।

কোন জামার সঙ্গে কোন কলার মানাবে, হাতাটা ঠিক কেমন হলে ভালো দেখাবে বা কোন জামায় কোন রংটা ব্যবহার করলে আরও বেশি স্টাইলিশ লাগবে, এই সব কিছু নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার সময় ডিজাইনারদের মাথায় 'মোদা রাপিদো'র ভাবনাটি আসে।

কেনঘে বলেন, “এবার পরের পর্যায়। আমরা কম্পিউটারের বিশেষ সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে নানা ধরেনর ডিজাইন পাশাপাশি রেখে দেখি, কোনটা সবচেয়ে বেশি মানানসই হচ্ছে।"

"

fashion_body_032318070924.jpg

কী ভাবে নকশা করা হয়েছে, সে কথা প্রকাশ না করে এবার যন্ত্রের ডিজাইন করা তিরিশটি টি-শার্ট ডিসপ্লে করা হয়।

কেনঘে বলেন, “দেখা গেল ডিজাইনেরদের করা টি-শার্টের চেয়ে বেশি চাহিদা কম্পিউটারে ডিজাইন করা টি-শার্টের। এই চাহিদা দেখে কুর্তি ও জিন্স সহ আরও বাইশটি বিভাগের জামাকাপড় এই ভাবেই ডিজাইন করা হচ্ছে।"

 

কেনঘের মতে, প্রযুক্তি এখন অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য ও নিখুঁত হয়ে উঠেছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায়, একজন শিল্পী কয়েক ঘণ্টা ভাবনা-চিন্তা করে যে্ নকশাটি বানালেন, প্রযুক্তির সাহায্যে সেই নকশাটি কয়েক মিনিটের মধ্যে বানিয়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে।

কেনঘে বলেন, “মেশিনে ডিজাইন করা জামাকাপড় শিল্পীর ডিজাইন করা জামাকাপড়ের চেয়ে অন্তত দুই থেকে তিনগুন বেশি বিক্রি হচ্ছে। প্রত্যেক বছর এই দুই ব্র্যান্ডের বিক্রি প্রায় ২০০ শতাংশ করে বাড়ছে।"

স্টাইলিমিয়ার কর্ণধার এবং সিইও গণেশ সুব্রহ্মণ্যম, যিনি মিন্ত্রার মোদা রাপিদো সফটওয়্যারটি বানাবার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, বলেন, “যদি দক্ষতা এবং বাজার সম্বন্ধে পূর্বাভাস দেওয়াকে এক শ্রেণীর ডেটা হিসাবে ধরা হয়, তা হলে লক্ষ লক্ষ ক্রেতা কী চাইছেন, সেটি আর এক শ্রেণীর ডেটা।”

সাধারণ ভাবে ইন্টারনেটে যে সব তথ্য পাওয়া যায়, সেগুলো খুঁটিয়ে দেখে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী ট্রেন্ড চলছে সে সম্বন্ধে তথ্য তাদের ক্লায়েন্টদের সরবরাহ করে বেঙ্গালুরুর এআই-নির্ভর স্টার্টআপ সংস্থা সাস।

 

বাজারে কী ধরনের পোশাক আসবে, ফ্যাশন জগতে সেই কাজ শুরু হয়ে যায় ছ’মাস থেকে এক বছর আগে। সুব্রহ্মণ্যম বলেন, “দ্রুত বদলে যাওয়া ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য কম্পিউটার ভীষণ সহায়তা করে। অনেকগুলো ডিজাইনকে দেখে তারপর মেশিনের সাহায্যে উপযুক্ত ডিজাইনটা তৈরি করা হয়। এর ফলে উৎপাদনও বাড়ে প্রায় দশগুণ। এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্যের এইচঅ্যান্ডএম-এর জন্য কী ধরনের নকশা উপযুক্ত—এমন প্রশ্নের জবাব আমরা নিমেষে পেয়ে যাই সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে।"

সুব্রহ্মণ্যম বলেন, “বিভিন্ন ক্লায়েন্ট আমাদের জানিয়েছেন যে, সাধারণ মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে যে জামাকাপড়গুলোর তৈরি করা হয়েছে তার বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ।" এদের চল্লিশটি ক্লায়েন্টের তালিকায় রয়েছে র্যাংলার ইন্ডিয়া ও ফাস্টট্র্যাকের মতো সংস্থাও। এই সংস্থাগুলির মনে করছে, শুধু মেশিন-ডিজাইনই থাকবে।

প্রযুক্তির সাহায্যে কী ভাবে ফ্যাশনকে আরও উন্নত করা যায়, তা নিয়ে ক্রমাগত গবেষণা চলছে। আইবিএম-এর ওয়াটসন একটি এআই-ভিত্তিক অ্যাপ। মেট গালাতে সুপারমডেল ক্যারোলিনা কুরকোভা যে পোশাকটি পরেছিলেন, তা এই অ্যাপটির সাহায্যেই তৈরি করেছিল মারচেসা নামে নামী ফ্যাশন সংস্থাটি।

ভারতে এই সংস্থাটি ডিসাইনার গৌরব গুপ্ত, ফাল্গুনী ও শেন পিককের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে একটি পুরস্কার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছিলেন আর্চি পাঞ্জাবি, কগনিটিভ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁর জন্য শাড়ি-গাউন তৈরি করেন গৌরব গুপ্ত। প্রত্যেক পুরস্কার বিজয়ীর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই ছিল তাঁদের পোশাক।

এই কাজে্র জন্য যে বিশেষ সফ্টওয়্যারটি বানানো হয়েছিল, সেটি শয়ে শেয় ছবি ও তথ্য ঘেঁটে ব্যক্তিত্ব-বিশেষের জন্য রং বেছে নিতেও সাহায্য করেছিল। গৌরব গুপ্ত বলেন, "ফ্যাশন ও প্রযুক্তির মেল বন্ধন যে এ ধরণের ডিজাইনও তৈরি করতে পারে, সেটা দেখানোও ছিল এই শাড়ি-গাউনটির উদ্দেশ্য।"

(সৌজন্য: মেল টুডে)

 

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Vidya S Vidya S

The author covers the field of e-commerce and startups for Mail Today

Comment