সমস্ত ব্লাডব্যাঙ্ক এক ছাতার তলায় এলে তবেই মিটতে পারে রক্তের সংকট

সোশ্যাল মিডিয়ায় অন কল ডোনেশন মেটাতে পারছে না রক্তের চাহিদা

 |  3-minute read |   23-06-2018
  • Total Shares

আমাদের রাজ্যে যতগুলো সরকারি ও বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে, তাদের এক ছাতার তলায় আনতে হবে। তাই অবিলম্বে আমাদের রাজ্য সরকারের একটি হেল্পলাইন করা উচিৎ। এমনটি একটি হেল্পলাইন করতে হবে যেখানে রক্ত সম্পৰ্কিত সমস্ত খুঁটিনাটি পাওয়া যাবে। এর ফলে যাঁর পরিবারের কারও রক্তের প্রয়োজন, তাঁকে বিভিন্ন হাসপাতাল বা ব্লাড ব্যাঙ্কগুলোতে ফোন না করে ওই হেল্পলাইনে ফোন করে ঘরে বসে খুব সহজে রক্তের সংস্থান করতে পারবেন। তা হলে হয়তো রক্ত থাকা সত্ত্বেও তার অভাবে অকালে কাউকে মরতে হবে না আর রক্তের অভাব হলে তাও খুব সহজেই বোঝা যাবে ও তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

রাজ্য জুড়ে বেড়েছে তাপমাত্রা আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলোতে রক্তের আকাল। জেলার ব্লাডব্যাঙ্কগুলোরও ওই একই দশা। রক্তের অভাব দেখা দিয়েছে৷ আবার রক্তের আকাল দেখা দিয়েছে রাজ্য জুড়ে। যদিও প্রত্যেক বছর গ্রীষ্মকালের রক্তের অভাব দেখা দিলেও কয়েকদিনের মধ্যে বিভিন্ন রক্তদান শিবিরের মাধ্যমে সেই ঘাটতি আবার পূরণও হয়ে যায়। তবে এ বছর ঘাটতিটা যেন একটু দীর্ঘ মেয়াদি।

body2_062318065059.jpgরক্তের আকাল দেখা দিয়েছে রাজ্য জুড়ে

সবেমাত্র পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ হল, তাই যতদিন নির্বাচন চলেছে ততদিন রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকার ফলে তারা কোনও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে পারেনি। আবার পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ হতে না হতেই রাজনৈতিক দলগুলো কোমর বেঁধে নেবে পড়েছে ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই কলকাতা ও অন্যান্য জেলাগুলিতে যে অস্থির রাজনৈতিক পরিমণ্ডল ছিল, তার ফলে জেলাগুলোতে তেমন একটা রক্তদান শিবির আয়োজন করা যায়নি।

ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিসেস অফ ইন্ডিয়ার সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব ঘোষ জানিয়েছেন, "সবে মাত্র শেষ হল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা আর এখন বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা দেশজুড়ে। আবার সামনে দুর্গাপুজো। তাই রক্তদান শিবির যেমন কম হচ্ছে তেমনই শিবিরগুলোতে রক্ত দাতার সংখ্যাও খুব কমে গেছে এ বছর।" তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে এখন একটা নতুন রীতি চালু হয়েছে তা হল 'অনকল ডোনেশন' যার মানে হল যখন কোনও ব্যক্তির রক্তের প্রয়োজন হবে তখন তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেঁর থেকে রক্ত নেবেন। এর ফলে সাধারণ মানুষ আর শিবিরমুখী হচ্ছেন না। শিবিরগুলোতে রক্ত না দিয়ে যদি সবাই রিজার্ভে থাকেন, রক্তের অভাব দেখা দেবে সেটা বলাই বাহুল্য।

body4_062318065215.jpgআমাদের রাজ্যে প্রত্যেক বছর ১২ থেকে ১৫ লক্ষ বোতল রক্ত দরকার হয়

পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের রাজ্যে প্রত্যেক বছর ১২ থেকে ১৫ লক্ষ বোতল রক্ত দরকার হয়৷ তাই রক্ত সংগ্রহের জন্য স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরই একমাত্র ভরসা৷ অন-কল দাতাদের সংখ্যা মোট দশ হাজারও নয়। তাই অন-কল দাতাদের মাধ্যমে এই ঘাটটি পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।    

যত বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে তাদের উচিৎ কমপক্ষে মাসে একটা করে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা। তাঁরা ঠিক যেমন রক্তদান শিবির আয়োজন করেন না ঠিক তেমন ভাবেই তারা সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কগুলো থেকে রক্ত নেন না। তাঁরা বলেন, নিরাপত্তা। কিন্তু আমি মনে করি এটা শুধু মাত্র ব্যবসার স্বার্থে। তাই কোনও রোগী, যিনি ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, তাঁর যদি রক্তের প্রয়োজন হয় তা হলে রক্ত পাওয়ার একমাত্র উপায় হল রক্তের বিনিময় রক্ত।

body3_062318065244.jpgঅন-কল দাতাদের মাধ্যমে এই ঘাটটি পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে পাড়ায় পাড়ায় সবাই একজোট হয় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতেন, কিন্তু এখন বিভিন্ন কারণে শিবিরগুলোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে তাই অনেক ছোট ছোট শিবির আয়োজন করা হচ্ছে। তাই শিবিরগুলোতে দাতার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

body1_062318065134.jpgরক্তদান শিবির যেমন কম হচ্ছে তেমনই শিবিরগুলোতে রক্ত দাতার সংখ্যাও খুব কমে গেছে এ বছর

নেগেটিভ রক্তের সঙ্কটের কথা যদিও আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। থ্যালাসেমিয়া থেকে শুরু করে যে সব রোগীর নিয়মিত রক্তের প্রয়োজন রয়েছে তাঁদের মধ্যে হাহাকার পড়ে গেছে রক্তের জন্য। ব্লাডব্যাঙ্কগুলোকে আরও আরও বেশি করে তৎপর হতে হবে। সাধারণ মানুষকেও একটু সচেতন হতে হবে, কারণ রক্ত কোনও কারখানায় তৈরি হয় না এবং রক্তের কোনও বিকল্প এখনও নেই। স্বেচ্ছা রক্তদানের জন্য নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে কারণ এই মুহূর্তে নবীনদের মধ্যে মাত্র ৩৯ শতাংশ রক্তদান করেন।  

হাটখোলা মেডিক্যাল ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত ডি আশিস বলেন, ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিকাঠামোটিও একটি বিরাট অন্তরায় হয় দাঁড়িয়েছে। কারণ কোনও মানুষ যদি বিকেল পাঁচটার পর রক্তদিতে চান তখন তার রক্ত আর নেওয়া হয় না কারণ বিকেল পাঁচটার পর ল্যাবে কর্মচারী থাকেন না যাঁরা রক্ত পরীক্ষা করে দেখবেন তা নেওয়ার উপযোগী কি না।    

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment