ক্যাপসিকাম ক্যান্সারের আশঙ্কা কমায়
চোখ ও স্নায়ু ভালো রাখতে নানা ভাবে ক্যাপসিকাম খেতে পারেন
- Total Shares
আমার এক মক্কেল বেশ কয়েক বছর ধরে রোজ দুপুরের খাবারের সঙ্গে স্যালাড খান। তাঁর স্যালাডে থাকে লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের ক্যাপসিকাম। ক্যাপসিকামের ঝাঁজ তিনি খুব পছন্দ করেন। প্রত্যেকদিন স্যালাড খাবার অনেক উপকারিতা আছে। আমার মক্কেলেরও অনেক উপকার হয়েছে। ক্যাপসিকামের মধ্যে পুষ্টি থাকলেও সবজিটা তেমন জাতে ওঠেনি। উদ্ভিদবিদ্যা অনুযায়ী ক্যাপসিকাম ফল-গোত্রীয় হলেও পুষ্টির দিক দিয়ে বিচার করলে ক্যাপসিকাম একটি সবজি।
বাজারে অনেক রঙের ও আকারের ক্যাপসিকাম পাওয়া যায়। তবে লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের ক্যাপসিকাম বাজারে বেশি চোখে পড়ে। কমলা, বাদামি, সাদা ও বেগুনি রঙের ক্যাপসিকাম বাজারে একটু কম পাওয়া যায়। কয়েক জাতের ক্যাপসিকাম খেতে বেশ ঝাল ঝাল আবার কয়েক জাতের ক্যাপসিকাম মিষ্টিও খেতে হয়। ক্যাপসিকামে অনেক কম ক্যালরি থাকে এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড ও ফাইবার থাকে। ২০৫ গ্রাম ক্যাপসিকাম থেকে আমরা মোটামুটি ৭০ ক্যালরি এবং তিন গ্রাম প্রোটিন ও চার থেকে পাঁচ গ্রাম ফাইবার পাই।

ক্যাপসিকামে থাকা গন্ধক ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করে। (ছবি: হাঙরিফরএভার)
ক্যাপসিকামে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। যদি আমরা একটা ক্যাপসিকাম খাই তাহলে প্রত্যেকদিন আমাদের শরীরে যতটা ভিটামিন এ এবং সি দরকার তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি মেলে। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক ভালো রাখে। বাত রুখতে সাহায্য করে ক্যাপসিকাম। ভিটামিন এ বা বিটাক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং ফোঁড়া ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যা হতে দেয় না। ভিটামিন এ বা বেটাক্যারোটিন ক্যান্সারের আশঙ্কা কমায়।
গবেষণা বলছে মহিলারা রজোবন্ধের সময় যদি প্রত্যেকদিন ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ খাবার খান তাহলে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এই সময় মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ অনিয়মিত হয়। ক্যারোটিনয়েড এই হরমোনটির ঠিকঠাক ক্ষরণে সাহায্য করে।
ক্যাপসিকামে প্রচুর পরিমাণের ভিটামিন ই থাকে। ভিটামিন ই হৃদযন্ত্র, ত্বক ও চুল ভালো রাখে। ক্যাপসিকামে ভিটামিন বি৬ থাকে। ভিটামিন বি৬ স্নায়ুতন্ত্রকে ভালো রাখে।
অন্য রঙের ক্যাপসিকামের চেয়ে অনেক বেশি পুষ্টিকর লাল ক্যাপসিকাম। লাল ক্যাপসিকামে ১১ গুণ বেশি বিটা ক্যারোটিন ও দেড় গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে।
ওজন কমাতে চান? তাহলে দুপুরে আলু ভাজা বা আলু চিপস না খেয়ে খান মুচমুচে ক্যাপসিকাম।
মিষ্টি ক্যাপসিকামে সিএইচ ১৯ সুইট থাকে যা ক্যাপসাইসিনেরই সমান।ক্যাপসাইসিন ওজন কম রাখতে সাহায্য করে। আবার ক্যাপসিকামে এই ধরনের ক্যাপসাইসিন থাকে বলে খাবার সময় ঝাল লাগে না। কাঁচা লঙ্কাতেও ক্যাপসাইসিন থাকে।
কাঁচা খেতে পারেন বা সিদ্ধ করেও খেতে পারেন ক্যাপসিকাম। সিদ্ধ ক্যাপসিকামে অনেক বেশি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে বলে তা ক্যান্সার রুখতে অনেক বেশি কার্যকরী।
ক্যাপসিকামে গন্দক বা সালফার রয়েছে। ক্যান্সার রুখতে সালফারের ভূমিকা রয়েছে। ক্যাপসিকামে লুটেন ও জেক্সানথিন থাকে বলে চোখে ছানি পড়তে বাধা দেয় এবং পেশীর ক্ষয় রোধ করে। অন্য কোনও রঙের ক্যাপসিকামের তুলনায় সবুজ ক্যাপসিকামে আধ মিলিগ্রামের মতো বেশি লুটেন ও জেক্সানথিন রয়েছে।
ক্যাপসিকাম খেলে মস্তিষ্ক ভালো থাকে। ক্যাপসিকামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি৬ রয়েছে। ভিটামিন বি৬ সেরোটোনিন ও নরপাইনফ্রাইন হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়।এই দুটি হরমোনকে ‘হ্যাপি হরমোন’ বলা হয়। হ্যাপি হরমোন আমাদের মন-মেজাজ ভালো রাখে। হ্যাপি হরমোন কাজ করার শক্তি বাড়ায় এবং একাগ্রতা বাড়ায়।
দেখা গেছে ক্যাপসিকাম কম খেলে এডিএইচডি-র মতো নানা মানসিক অস্থিরতা হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে ক্যাপসিকামে নিকোটিন থাকে। তাই ক্যাপসিকাম খেলে নানা স্নায়ু রোগ কম হয় এবং পার্কিনসনসের আশঙ্কা কমায়।
তাই এখন সর্দি-কাশিই হোক বা ক্যান্সারই হোক নিয়ম করে ক্যাপসিকাম খেলে অনেক রোগ দূরে থাকবে। ক্যাপসিকামের স্বাদটাই এমন যে সবজিটা আপনার রোজ রোজ খেতে ইচ্ছে করবে। ক্যাপসিকাম বেশি খেলে কিন্তু কোনও ক্ষতি হয় না।

