মাতৃদুগ্ধের কোনও বিকল্প হয় না
শিশু মাতৃদুগ্ধ পান করলে তা মায়ের শরীরের পক্ষেও উপকারী
- Total Shares
মাতৃদুগ্ধকে অমৃতের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কথাটা আমার যেমন প্রিয় তেমনই এর অন্তর্নিহিত মানেটাও আমাকে খুব টানে।
মাতৃদুগ্ধ শিশুর স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো তাই শিশুকে কমপক্ষে ছ'মাস বয়স পর্যন্ত মাতৃদুগ্দ্ধ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এর আগে অনেক বার অনেক কথা লেখা ও বলা হয়েছে। আগের প্রজন্মের মানুষ খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই কাজটি করতেন তবে কোথাও গিয়ে স্তন্যপানের বিষয়টি খুব একটা কেতাদুরস্ত বলে মনে করা হয় না এখন পাশাপাশি স্তন্যপানকে একটু অসুবিধাজনকও মনে করা হতো তাই স্তন্যপানের বিষয়টা আসতে আসতে কমে আসতে থাকে। বিশ্বের প্রায় সব মায়রা কিছুটা সচেতনভাবেই এই অভ্যাসটা ত্যাগ করেন। এটিকে একটি বেশ পুরোনো রীতি বলে মায়রা ধীরে ধীরে ত্যাগ করতে শুরু করলেন, আর এর ফলে মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা থেকে পৃথিবীর কোটি কোটি শিশু বঞ্চিত হতে শুরু করল।
বিস্তারিত গবেষণার মাধ্যমে মাতৃদুগ্দ্ধর অভাবে কী ধরণের ক্ষতি হতে পারে কিংবা কেনই বা মাতৃদুগ্দ্ধ প্রয়োজন সেই সব দিকগুলো উঠে এলো। তাই গেবষকরা আবার মাতৃদুধের উপকারিতার কথা বলা শুরু করলেন। এটা এখন প্রমানিত যে মাতৃদুগ্ধ হজম করা যেমন সহজ তেমনই মাতৃদুগ্ধের মধ্যে সঠিক পরিমাণে স্নেহপদার্থ, চিনি, জল ও প্রোটিনের মাত্রা থাকে যা একটি সিধুর শারীরিক বিকাশের জন্য অতন্ত্য প্রয়োজনীয়। এছাড়া মাতৃদুগ্ধের মধ্যে এমন সব গুনাগুন রয়েছে যা বিভিন্ন রজার সঙ্গে লড়াই করতে সহায়তা করে ও শিশুকে সুস্থ রাখে। মাতৃদুগ্ধে এমন সব অ্যান্টিবডি থাকে যা বিভিন্ন জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মোকাবেলা করতে সাহায্য করে ও এজমা ও এলারজির মতো রোগ দূরে রাখে। পাশাপাশি ডায়েবেটিস টাইপ ১, সেলিযেক, কোলাইটিস ও ক্রনসের মতো রজার আশঙ্কা কম করে।
আরও আছে। মাতৃদুগ্ধ পান করলে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ঘটে।
আগে এর গুনাপগুনটা পুরোটাই আমাদের ধারণার উপর নির্ভরশীল ছিল তবে এখন সেটা বিজ্ঞান সম্মত ভাবে গবেষকের দ্বারা প্রমাণিত মাতৃদুগ্ধে হিউম্যান মিল্ক অলিগোস্যাচ্যারিড (এইচএমও) থাকে বলেই তা এতটা পুষ্টিকর। বিভিন্ন গবেষণা বলছে মাতৃদুগ্ধে এমন দুশোর বেশি এইচএমও রয়েছে।

এইচএমও শরীরে শক্তি যোগায় কিন্তু শিশুদের জন্য এটার প্রয়োজন নেই কারণ তারা তা সহজে হজম করতে পারে না।তাই এগুলো পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্র হয়ে বৃহদন্ত্র পৌঁছয়ে যেখানে এগুলো ভেঙে গিয়ে ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে যা পেটে থাকা জীবাণুকে খাদ্য যোগায়। যেসব শিশুরা মাতৃদুগ্ধ পান করলে শিশুদের পেটের ভেতরে যে ভালো জীবাণুগুলো থাকে সেগুলো খাবার পায়। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যস্থার প্রায় ৭০ শতাংশতেই এই জীবাণু রয়েছে।
এর কিছু অংশ রকের সঙ্গে মিশে গিয়ে শরীরের ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই যে সব শিশুরা মাতৃদুগ্ধ পান করে স্বাভাবিকভাবেই তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব ভালো ও উন্নত।
তাই সব প্রাণীর দুগ্ধেই কিছু সংখক এইচএমও রয়েছে। তবে গরুর দুগ্ধে যতটা পরিমাণে এইচএমও রয়েছে তার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি এইচএমও রয়েছে মানব দুগ্ধে। তাই নিঃসন্দেহে মানব দুগ্ধ সর্বশ্রেষ্ট যার কোনও বিকল্প হয় না।
আরও আছে। শিশু মাতৃদুগ্ধ পান করলে তা মায়ের শরীরের পক্ষেও উপকারী। স্তনপানে মায়ের শরীরের বাড়তি মেদ কম হয়, তাই সন্তান প্রসব করার পরে মায়েদের ওজন কম করতে সহায়তা করে। মাতৃদুগ্ধতা অক্সিটোসিন বলে একটি হরমোন থাকে যা একজন মহিলার ইউটেরাকে আবার আগের আকার ও অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। শিশু মাতৃদুগ্ধ পান করলে মায়ের স্তন ও ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম হয়। মহিলাদের মধ্যে অস্টিওপোরোসিস হওয়ার সম্ভাবনাওকমে যায় অনেকটা।
শিশু জন্মাবার পরে অনেক মহিলাদের অবসাদ দেখা দেয় তাই শিশু স্তনপান করলে মায়ের অবসাদ বা মানসিক চাপের অশঙ্কা কম হয়।
৯০এর মাঝামাঝি থেকে মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা দেখা গেছে। কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ করছি মানুষ এই বিষয়টা নিয়ে যেন ঠিক খোলাখুলি আলোচনা করতে চাইছেন না। কিন্তু আমরা যেন এই করি। কি করলে শরীর সুস্থ থাকবে সেই বিষয়টাকে হালকা ভাবে নিলে চলবে না।
আমার মনে হয় সাধারণ মানুষকে মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে তাই।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন

