প্রচুর গাজর খান: স্বাদ ও সুস্বাস্থ্য দুই-ই পান

কাঁচা খান বা রেঁধে, গাজর খেলে সুস্থ থাকবে শরীর ও মন

 |  4-minute read |   04-01-2018
  • Total Shares

এই মরসুমে আপনি কতবার গাজরের হালুয়া খেয়েছেন বলুনতো?

যদি না খেয়ে থাকেন তাহলে এই লেখাটা পড়ার পর আপনার জিভে জল আসবেই তখন নিশ্চয়ই আপনি বাজারে গিয়ে অসময়েও গাজর কিনে আনবেন? তবে পুষ্টিতে পরিপূর্ণ এই সবজিটি তার যথার্থ কদর পায় না। নামে  সবজি হলেও আসলে এটি মূল।

গাজরের অনেক গুণাগুণ আছে। সবজিটা বেশ খেতে মিষ্টি। তা ছাড়া সবজিটা বছরের প্রায় সব সময়ই বাজারে মেলে ও বেশ সস্তাও। তবুও, এই সবজিটা ঠিক যতটা পরিমাণে খাওয়া উচিত্ তত পরিমাণে খাওয়া হয়ে না।

গাজরে অনেক কম ক্যালরি থাকে (১৫০গ্রাম মানে দুটি বড় মাপের গাজরে থাকে মোটে ৬০ ক্যালোরি), গাজরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার থাকে (৪ গ্রাম) এ ছাড়াও বিভিন্ন পরিপোষক বা নিউট্রিআন্টও পাওয়া যায় গাজর থেকে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ, সি, কে, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫), ফোলেট (বি৯), পটাসিয়াম, লোহা বা আয়রন, তামা বা কপার এবং ম্যাঙ্গানিজ থাকে।

body_010418031220.jpgগাজরের সুপ

গাজর থেকে আমরা প্রচুর পরিমাণ বিটা-কেরাটিনও পাই। এই ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টি-অক্সিডেন্টটি ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। ভিটামিন এ আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং চোখ ভালো রাখে। গাজরের মধ্যে থাকা দুটি ধরণের বিশেষ ক্যারোটিনয়েড - লুটেন ও জিয়াএক্সেনথিন। লুটেন ও জিয়াএক্সেনথিন চোখের রেটিনাটির বার্ধক্যজনিত সমস্যার হাত থেকে বাঁচায়। বার্ধক্যজনিত রেটিনার সমস্যাকে ম্যাকুনার ক্ষয় বলা হয়।

কয়েকটি গবেষণা বলছে ক্যারোটিনয়েড বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস এবং ফুসফুস ও প্রস্টেট ক্যান্সার অনেকাংশে প্রতিরোধ করে। এখন এটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে ক্যারোটিনয়েড শরীরে গ্লুকোজ ও ইনসুলিনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই যাদের ডায়াবেটিস আছে নিয়মিত গাজর খেলে এই অসুখটা তারা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। তাই যাদের ডায়াবেটিস আছে তাঁরা গাজর খাবেন না, এই গুজবটি ভুল প্রমাণিত হল! তবে অতিরিক্ত মাত্রায় গাজর খাওয়াও উচিত নয়। আমি দিনে দুটো গাজর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি কারণ বিটের মতন গাজরও মিষ্টি।

বিটা-ক্যারোটিনে সমৃদ্ধ খাদ্য হাড় সুস্থ রাখে। একটি গবেষণায়ে দেখা গেছে যে গাজর হাড়ের ভর বা বোনমাস বাড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়াও, গাজর খেলে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণ খুব কম পরিমাণে হলেও হাড়ে ঢোকে।

ক্যারোটিনয়েড ভেঙে শরীরে চর্বির সঙ্গে মিশে যায় ও যকৃৎ থেকে নিষ্কৃত পিত্তরস ভালোভাবে প্রবাহিত হতে সাহায্য করে।এর ফলে যকৃতের বর্জনীয় পদার্থ দূর হয় ও যকৃৎ সুস্থ থাকে। স্নায়ুতন্ত্রকে বার্ধক্য জনিত নানা রোগ থেকে দূরে রাখে বিটাক্যারোটিন এবং বয়স বাড়লেও আমাদের স্মৃতিশক্তি সতেজ রাখে।

গাজরে ভিটামিন বি৮ বা ইনোসিটোল থাকে যা অন্য আনাজে তেমন একটা থাকে না। ভিটামিন বি৮ শরীরের কোষ তৈরি করে ও তা রক্ষা করে। ভিটামিন বি৮-এর মধ্যে মানসিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রোধক বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। এটি একটি নিউরোট্রান্সমিটারের কাজ করে যা আমাদের মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

গাজরে পর্যাপ্ত আঁশ জাতীয় পদার্থ বা ফাইবার থাকে। ফাইবারগুলির মধ্যে পেকটিনের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই গাজর শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রাখতে সাহায্য করে। গাজরে যথেষ্ট পরিমাণ পটাসিয়াম থাকে বলে এটি একটি ভাসোডিলেটার-- তাই রক্তনালী ও ধমনীতে চাপ কম হয় এবং রক্ত চলাচল ঠিক থাকে। কৌমারিনের মতো একটি জিনিসও পাওয়া যায় গাজরে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং শ্বাসকষ্ট ও অস্টিওপোরোসিস বা হাড় মুড়মুড়ে রোগ দূরে রাখে।

গাজর দিয়ে রান্না 

কাঁচা কিংবা রান্না করে, দুভাবেই গাজর খাওয়া ভালো কারণ তাতে দুরকমের উপকারিতা আছে। যে সব পুষ্টিকর খনিজ পদার্থ বা মিনারেল গুলি গাজরে রয়েছে রান্না করলে সেগুলো বেরিয়ে যায়। তবে, রান্না করা গাজরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষ করে বিটা-ক্যারোটিন জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টটির জোর আরও বেড়ে যায়। কারণ সিদ্ধ করা হলে গাজরের বাইরের অংশের কোষের দেওয়ালটা ভেঙে যায় এবং শরীর তখন আরো ভালো ভাবে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি পায়। কিছুটা তেল দিয়ে রান্না করলে গাজরের ভিতরে থাকা বিটা কেরোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীর আরও বোশি করে পায়।

body2_010418031325.jpgগাজরের হালুয়া

তাই শুধু গাজরের হালুয়া বা কাঞ্জিই নয়, গাজর দিয়ে একটা দারুণ শরবতও তৈরি করা যেতে পারে। শরবতের জন্য গাজর হালকা ঝলসে নিতে পারেন বা কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েলে একটু নাড়াচাড়া করে একটু সিদ্ধ করে তুলে নিন। এবার ভালো করে পেস্ট বা পিউরি করে নিন। সুপ হিসেবে পরিবেশন করুন অথবা ছোট ছোট টুকরো করে কেটে স্যালাড বানিয়ে নিতে পারেন। চটজলদি বানিয়ে ফেলতে পারবেন গাজর দিয়ে এমন একটি রান্নার প্রণালী দিলাম এখানে: ১০টি ছোট গাজর কিংবা প্রমাণ মাপের কয়েকটি গাজর একটু মোটা করে লম্বা আকারে কেটে অল্প সিদ্ধ করে নিন।যাতে গাজর চট করে সিদ্ধ হয়ে যায় সেই জন্য যে পাত্রটিতে সিদ্ধ করবেন সেই পাত্রে প্রায় ২ ইঞ্চি জল দিয়ে তাতে এক ফুট দিয়ে  এবার এক ইঞ্চির চার ভাগের এক ভাগ মাপে গাজর কেটে নিন ও ওই জলে প্রায় পাঁচ মিনিটের মতো সিদ্ধ করুন। মাইক্রোওয়েভে করলেও পাঁচ মিনিট মতো সিদ্ধ করতে হবে।

এবার নামিয়ে নিয়ে এক টেবিলচামচ ম্যাপেল সিরাপ ও এক টেবিলচামচ ডিজোন মাস্টার্ড বা সরষে বাটা মিশিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন। বেশ নতুন ধরনের ও সুস্বাদু করে এই সবজিটি খেতে পারেন যাতে ক্যালরি প্রায় নেই বললেই চলে মিষ্টি হিসেবেও খাওয়া যায়।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

KAVITA DEVGAN
Comment