ওজন কম করার জন্য চিন্তা করতে হবে না, ঠিকমতো খান ও শরীরকে ক্লেদমুক্ত রাখুন

খাবার থেকে চিনি বাদ দিন

 |  4-minute read |   05-04-2018
  • Total Shares

আজকাল সবাই নিজেদের ক্লেদমুক্ত (ডিটক্স) করতে চান। একটু বুঝিয়ে বলি: ডিটক্স করা নিয়ে সবাই এখন মোহগ্রস্ত। মোহে পড়ে লোকজন যখন চলতি নানারকম ডায়েটচার্ট মেনে খাওয়াদাওয়া করেন। তারপর যখন বুঝতে পারেন যে এই ধরণের ডায়েটিংয়ে কোনও কাজ তো দিলই না উল্টে এতে শরীর আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে, তখন তাঁদের টনক নড়ে। আসলে এই ধরণের ডায়েটিংয়ে ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম থাকে। তাই এই ডায়েটচার্ট মেনে খাওয়া দাওয়া করলে অনেকেই হয়ত মনে করেন যে এতে তাদের শরীর ডিটক্স হচ্ছে কিন্তু আসলে তা হয় না।

চটজলদি ওজন কমানোর জন্য অবশ্য অনেকেই ডিটক্স ডায়েট করেন। কিন্তু ওজন কমানোর জন্য নয়, সুস্থ থাকার জন্য ডায়েটিং করুন। সপ্তাহের শেষে কোনও অনুষ্ঠানে সুন্দর পোশাক পরবেন বলে নিজের ওজন কমাতে ডায়েটিং করবেন না বরং শরীরের অতিরিক্ত মেদ ও ক্লেদ দূর করার জন্য ডায়েটিং করুন। এর ফলে ক্লান্তি দূর হয়, মস্তিস্ক ভালো ভাবে কাজ করে, ব্যাথা-বেদনা হয় না, মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও হজমের সমস্যা দূর হয়।

melon_body_040518063642.jpg

ডিটক্স ডায়েটের নানা উপকারিতা আছে, যেমন, সাইনাসের সমস্যা কম হয়, হাঁপানি কম হয়, গায়ের অস্বাভাবিক বাজে গন্ধ দূর হয়, বিভিন্ন খাবারে এলার্জি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব, ভঙ্গুর নখ ও চুল সুস্থ রাখে, সোরিয়াসিস কম করে ও ত্বকের সমস্যা (অ্যাকনে) এড়াতে সাহায্য করে। এ সব সমস্যার সমাধান হলে, স্বাভাবিক নিয়মে ওজন এমনিতেই কমে যাবে।

কিন্তু কয়েকদিন ডিটক্স ডায়েট করে তারপর আবার সাধারণ ডায়েটিং ফিরে গেলে কোনও কাজ হবে না। আমরা যেমন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চাপের থেকে ছুটি নিয়ে আবার দৈনন্দিন জীবনে ফিরে আসি ব্যাপারটা অনেকটা তেমন। দৈনন্দিন জীবনযাপনে কয়েকটা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস না মেনে চললে পুরোনো সমস্যাগুলো আবার দেখা দিতে পারে।

তাহলে কী করণীয়?

আগেই যে কথা বললাম, চটজলদি যে সব সমাধানের কথা আমরা জানি, সে ভাবে এই সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। তাহলে একজন ব্যক্তি ঠিক কী ভাবে নিজের শরীরকে ক্লেদমুক্ত বা ডিটক্স করবেন?যাঁরা এই ডায়েটিং প্রথমবার করছেন তাঁদের মনে রাখতে হবে যে আমরা যে সব খাবার খাই তাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যাডিটিভ ও প্রিজারভেটিভ থাকে, যা আমাদের পৌষ্টিকতন্ত্রের উপর চাপ ফেলে এবং এর ফলে শরীরে ক্লেদ জমতে থাকে। কিন্তু কী ভাবে বুঝবেন যে আপনার শরীরে ক্লেদ জমেছে কিনা? ধরুন একদিনে আপনি অনেকগুলো কোলা (সফ্ট ড্রিঙ্ক) খান আর সঙ্গে বাইরের খাবারও খান তাহলে হয়ত আপনার এই ডায়েটিংয়ের প্রয়োজন আছে।

melon_body2_040518063707.jpg

তাই প্রথমেই যেটা করতে হবে, সেটা হল প্রত্যেকদিনের খাবারের তালিকা থেকে সেই সব খাবার বাদ দিতে হবে যা আমাদের শরীরের ক্ষতি করতে পারে (টক্সিক) যেমন - ধূমপান, প্রক্রিয়া করা খাবারদাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া, চকোলেট ও মদ খাওয়া। এ ছাড়া খাবারে চিনির পরিমাণ কম করতে হবে। চিনি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর, কারণ এতে যেমন প্রচুর ক্যালোরি থাকে তেমন অতিরিক্ত চিনি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত কফি খাওয়া বন্ধ করুন, এর ফলে যকৃৎকে প্রত্যেকদিন শরীর থেকে অবাঞ্ছিত ক্যাফিন দূর করতে বেশি কাজ করতে হবে না। এর ফলে শরীরে অনেক উপকার হবে যেমন কর্মক্ষমতা বাড়বে, ভালো ঘুম হবে ও মানসিক চাপও কমবে। কিন্তু দয়া করে কফি খাওয়া বন্ধ করবেন বলে হঠাৎ একেবারে বন্ধ করে দেবেন না, অল্প অল্প করে কফি খাওয়াটা কমান না হলে মাথা ব্যথার মতো পার্শ্বক্রিয়া হতে পারে।

এর চেয়ে গ্রিন টি খান। আপনার শরীর যদি অতিরিক্ত ক্যাফিনে আসক্ত হন তাহলে গ্রিন টি খেতে পারেন কারণ কালো চা বা কফিতে যে পরিমাণ কফিন থাকে তার চেয়ে অনেক কম পরিমাণে হলেও ক্যাফিন থাকে গ্রিন টিতে। এই ধরণের হারবাল টি খেতেও সুস্বাদু এবং মন-মেজাজ ভালো রাখে আর কাজের ক্ষমতা বাড়ায়।

তৃতীয়ত, নিয়মিত সবজি ও ফল খান। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যেমন ভিটামিন ই এবং সি, বিটা ক্যারোটিন ও খানিকটা সেলিনিউম ও তামার মতো খনিজ রয়েছে।

আমাদের শরীরে যে সব অস্বাস্থ্যকর জিনিসপত্র (ফ্রি রেডিকাল) থাকে যা আমাদের শরীরকে ক্লান্ত করে এবং যা হার্টের নানা সমস্যার সৃষ্টি করে, এই খাবারগুলো শরীর থেকে সেই সব জিনিস দূর করতে সাহায্য করে। কিন্তু শুধুমাত্র ফল বা সবজির রস না খেয়ে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক খাবার খান যেমন ফল, সবজি, বাদাম, শস্য ও মাছ। কাঁচা বা খুব হালকা করে রান্না করা সবজি খেতে পারেন।

কিছুদিন নিরামিষ খেতে পারেন বা আমিষের পরিমাণ কম করতে পারেন। এর ফলে যকৃৎ যেমন পুষ্টি পাবে তেমনই তাড়াতাড়ি হজম হয় এমন খাবার খেলে যকৃতের উপর চাপও কম পড়বে।

melon_body3_040518063720.jpg

আমার মনে হয়ে ডিটক্স ডায়েট শুরু করার একটা খুব সহজ উপায় হল সপ্তাহের শেষে সবজি ও ফল খান, এটা স্থির করার পর কোথাও একটা পেন্সিলে লিখে রাখুন সপ্তাহের শেষে কী ধরণের ফল বা সবজি খাবেন। কিন্তু যদি মাথা ব্যথা অনুভব করেন তখন খাদ্য তালিকায় অল্প ব্রাউন রাইস, ঈষদুষ্ণ সুপ বা হালকা করে রান্না করা মাছ রাখুন।

শরীরে যেন জলের ঘাটতি না হয়। কারণ, বিভিন্ন শারীরিক প্রক্রিয়ায় জলের প্রয়োজন। তা ছাড়া শরীরকে ক্লেদমুক্ত করতে জলের কোনও বিকল্প নেই। আমাদের শরীরের অবাঞ্ছিত পদার্থ জলের সঙ্গে মিশে খুব সহজেই শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এ ছাড়া জল শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে এবং রক্ত থেকে স্নেহপদার্থ দূর করে।

বাড়িতে এই টোটকা করে দেখতে পারেন। অল্প জলে কিছুটা জিরে, ধনে ও মৌরি ফেলে ফুটিয়ে জলটা খান।

melon_body4_040518063731.jpg

শরীরের পক্ষে ডিটক্স কতটা উপকারী?

ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করলে ডিটক্সে কাজ দেয়। তা ছাড়া শরীর থেকে অবাঞ্ছিত পদার্থ দূর করা প্রয়োজনীয়। আপনি যদি এক সপ্তাহ ডায়েটিং করার পরে আবার বার্গার-ফ্রেঞ্চফ্রাই খাওয়া ও মদ্যপান শুরু করেন, পাবে যান তা হলে আগের ডায়েটিং বেকার হয়ে যাবে।

কেটে গেলে আমরা কাটা জায়গাটায় ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করি, পরে সেটা ফেলে দিই। কিন্তু ডায়েটিংয়ের ক্ষেত্রে কিছুদিন করলাম, আবার করলাম না – এটা চলবে না। ডিটক্স ডায়েট তখনই কাজে দেবে যখন এই ডায়েটিংয়ের থেকে আমরা কিছু শিখে সুস্থ থাকার জন্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনে লাগাব।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

KAVITA DEVGAN
Comment