অন্ধত্বের আশঙ্কা রয়েছে, তাই ডায়াবেটিস হলে নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করান
৫০ মিলিয়ন ভারতীয় টাইপ-২ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত
- Total Shares
ভারতকে এখন "বিশ্বের ডায়াবেটিস" রাজধানীর মতো একটি সন্দেহজনক শিরোনাম দেওয়া হয়েছে কারণ মোটামুটি ৫০ মিলিয়ন ভারতীয় টাইপ-২ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত। অনুমানের ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে আমাদের দেশের দরিদ্র আর্থ-সামাজিক অবস্থার জন্য অনেকের মধ্যে এই রোগটা থাকলে তা চিহ্নিত হয় না। রোগটির প্রভাব আমাদের সারা শরীরে দেখা দেয় বিশেষ করে আমাদের চোখ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমাদের সুস্থ থাকাটা অনেকটাই আমাদের জীবনযাপনের উপর নির্ভর করে। আমরা অনেকেই দিনের বেশিরভাগ সময়টা বসে কাজ করে থাকি আর এটাই ডায়াবেটিস হওয়া আরেকটি বড় কারণ। আমরা অনেকেই ব্যাপারটার প্রতি সচেতন। যদিও এই রোগটার আমাদের চোখের যে ঠিক কতটা ক্ষতি করে সেটা সম্বন্ধে বোধহয় আমরা তেমন ভাবে সচেতন নই। ভগবানের সর্বশ্রেষ্ঠ দানের মধ্যে অন্যতম হল আমাদের চোখ। ডায়াবেটিস চোখের রক্তনালীর ক্ষতি করে ও চোখের উপর মারাত্মক রকম বাজে প্রভাব ফেলে।
শরীরের সবকটি অঙ্গর মধ্যে শুধুমাত্র চোখের রক্তনালী দেখলে বোঝা যায় আমাদের শরীরে ডায়াবেটিস ঠিক কতটা গভীর ভাবে বাসা বেধেছে।
চোখের একটি অংশ হল রেটিনা। একটা ক্যামেরায় যে ফিল্ম থাকে চোখের রেটিনাও ঠিক তেমনই। রেটিনার উপরে যখন আলো এসে পরে তখন আমরা আমাদের চোখের সামনের জিনিস দেখতে পাই। ডায়াবেটিস চোখের রেটিনার ক্ষতি করে আর এর ফলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হয়।
আর অসুখটা বেশ গড়িয়ে গেলে ডায়বেটিক রেটিনোপ্যাথির ফলে চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে গিয়ে অন্ধত্ব আসতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অনীহায় কিংবা সচেতনতার অভাবে চিকিৎসকের কাছে যান না তাই সময় মতো চিকিৎসকের পরামর্শ না নেওয়ার ফলে তাঁদের চোখের দৃষ্টি ঘোলাটে হতে থাকে। তখন তাঁরা চিকিৎসকের কাছে পরামর্শের জন্য যান। সময় মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
এই সময় চোখ ফুলে যায়, চোখ থেকে রক্তও পড়তে পারে আর খুব গড়িয়ে গেলে রেটিনা চিরে যেতে পারে, যাকে রেটিনা ডিটাচ বলা হয়ে থাকে।
তা হলে যদি ডায়েবেটিস ধরা পরে কী ভাবে চোখের যত্ন নিতে হবে যাতে রোগটির জন্য চোখের কোনও ক্ষতি না হয়? ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি ঠিক কতটা গভীর ভাবে দানা বেঁধেছে দেখতে হলে ওষুধ দিয়ে চোখের মণি বড় করে পরীক্ষা করান উচিৎ। দৃষ্টি শক্তি চলে গেলে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কমে যাওয়ার ফলে চোখের রেটিনাটির দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়।

তাই চোখ সুস্থ থাকতে থাকতেই চোখের নিয়মিত পরীক্ষা করান উচিৎ।
বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাস করেন যে বয়স বাড়লে চোখে ছানি পরে যা অস্ত্রোপচারের দ্বারা ঠিক করা সম্ভব। যদিও রেটিনা খুব সূক্ষ্ম হয় তাই ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ফলে দৃষ্টিশক্তি কম হতে শুরু করলে বা অন্ধত্ব দেখা দিলে হারিয়ে যাওয়া দৃষ্টিশক্তি আর ফেরানো যায় না তবে চিকিৎসার সাহায্যে ওই চোখটির যাতে আর কোনও ক্ষতি না হয় সেটা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। যদিও মাত্র কয়েকটি ক্ষেত্রে চিকিৎসার সাহায্যে যে চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে গিয়েছিল সেটা আবার ফিরে এসেছে।
চোখ ফলে গেলে প্রথমে চোখের ভেতরে ইঞ্জেকশন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে লেজারের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। কিন্তু রোগটা বেশি গড়িয়ে গেলে অস্ত্রোপচার করতে হয়।
রোগটা প্রথমদিকে ধরা পড়লে সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। সাধারণত যে সব রোগীর চোখের রেটিনা ফুলে গেলে চোখে ইঞ্জেকশন দিয়ে চিকিৎসা করা হয় তাঁরা চিকিৎসার পর চোখ পরীক্ষা করার সময় চক্ষুবিশেষজ্ঞদের কাছে যে বিশেষ একটি তালিকা থাকে তার প্রথম তিন থেকে চার লাইন অবধি পড়তে পারেন সহজেই। কিন্তু অসুখটা বেশি গাড়িয়ে গেলে অবশ্য চিকিৎসার ফলে চোখ ঠিক কতটা সুস্থ হবে সেটা নির্ভর করে চোখের রেটিনার কতটা ক্ষতি হয়ে গেছে তার উপর।
চোখের ভিতরে রক্তক্ষরণ হলে চোখের ভিতর থেকে সেই রক্ত অস্ত্রোপচারের সাহায্যে বের করে ফেলা হয়। এ ছাড়াও অস্ত্রোপচারের সাহায্যে রেটিনার উপর যে চাপ সৃষ্টি হয় সেটাও ঠিক করা হয়। যদিও অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পরেও সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কম থাকে। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পরে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হতেও দেখা গেছে।
তাই আপনি কিংবা আপনার নিকট কোনও আত্মীয়ের যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়ার আগেই চোখ পরীক্ষা করান নিয়মিত। তাই ডায়েবেটিস রেটিনোপ্যাথি হলে সময় থাকতেই চোখের ব্যাপারে সচেতন হন।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন

