ক্যান্সারের আশঙ্কা কমায় মৌরি, মহিলাদের ঋতুবন্ধের সময়ের সমস্যাও কমায়
মন ভালো রাখে, শরীর ঠান্ডা রাখে, মুখের দুর্গন্ধ দূর করে
- Total Shares
কখনও ভেবে দেখছেন কিছুদিন আগেও খাওয়াদাওয়ার পর কেন লোকে মৌরি খেতেন? কিংবা প্রায় প্রত্যেকটি রেস্তোরাঁয় বিল দেওয়ার সময় একটা ছোট পাত্রে মৌরি দেয়? মুশকিল হল, মৌরি খাওয়ার রেওয়াজটা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। মৌরির কিন্তু অনেক গুণাগুণ আছে। তাই এই রেওয়াজটা আবার ফিরিয়ে আনা দরকার।
কেন?
মৌরির গুণাগুণের তালিকাটা বেশ লম্বা। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মৌরিকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে মনে করা হয় যে গরম কালে মৌরি খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। যদি এই তত্ত্বটি প্রমাণসাপেক্ষ।
বদ-হজম রোধ করতে সাহায্য করে মৌরি, পেটও ফাঁপতে দেয় না। মৌরি ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে গ্যাস-অম্বল সরাতে সাহায্য করে। মৌরি খেলে পাকস্থলীর নানা সমস্যা যেমন - পেট ব্যথা, অস্থিরতা, বুকজ্বালা ও বোধহজমের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। মৌরিতে কয়েকটি স্বাস্থ্যকর তৈলপদার্থ থাকে, যেমন - এস্ট্রাগোল, ফেনচোন ও অ্যানইথল। এই তৈলপদার্থগুলো হজমের জন্য প্রয়োজনীয় উত্সেচক তৈরি করে এই ফলে হজমকশক্তি ভালো করে। মৌরির রস খুব ভালো একটি অ্যান্টাসিড।
মৌরি প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীরের ক্লেদ বার করে দেয়। খাবার জলে কিছুটা মৌরি দিয়ে সেটা ফুটিয়ে নিয়ে তারপর ঠান্ডা করে জলটা খেলে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীরের বাড়তি তরল পদার্থ, রেচক পদার্থ (টক্সিন্স) বার করে দিতে সাহায্য করে। এর ফলে শরীর ক্লেদ মুক্ত হয় ও হজম শক্তি বাড়ায়। ওজন বাড়তে দেয় না মৌরি। মৌরি ভেজানো জলটি খেলে রক্তে অতিরিক্ত ইউরিক এসিডের পরিমাণ কম করতে সাহায্য করে। পিত্তরস ভেঙে দেয় এবং যকৃতে জমা চর্বি গলাতে কার্যকরী। জলটি উত্তেজকের কাজ করে। তাই ক্যাফিন জাতীয় জিনিস না খেয়ে এই জলটি সারাদিনে একটু একটু করে খেলে আমরা অনেক সতেজও থাকবো এবং ঘুমও পাবে না।
সকালে চা খাওয়ার সময় আমি বলি আমার চায়ে একটু মৌরি ফেলে দিতে। এর ফলে আমাকে আর আলাদা করে চিনি যোগ করতে হয় না। আপনারাও আপনাদের সকালের চায়ে চিনির বদলে একটু মৌরি যোগ করতে পারেন আমার মতো।
ছবি: সাপ্লিমেন্ট স্পট
খাবার থেকে আমরা যে খনিজ পাই না সেই সব খনিজ মৌরিতে থাকে-যেমন কপার, পটাসিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, দস্তা, ম্যাঙ্গানিজ, লোহা, সেলেনিউম ও ম্যাগনেসিয়াম। যারা রক্তাল্পতায় ভুগছেন তারা মৌরি খেতে পারেন। কারণ মৌরিতে প্রচুর পরিমাণে লোহা ও হিসটামাইন (histamine) থাকে। তাই মৌরি খেলে শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি হয়।
মৌরিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে, যেমন - ভিটামিন এ, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি। এছাড়াও মৌরিতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স - থিয়ামিন, পাইরিডকসিন, রাইবোফ্লভিন ও নায়াসিন থাকে। মৌরিতে ফাইবার থাকে বলে মৌরি হার্ট ভালো রাখে। এর মধ্যে থাকা তন্তু কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। মৌরিতে পটাসিয়াম থাকে বলে তা রক্তনালিকা ভালো রাখে। এর ফলে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। মৌরিতে কেম্পফেরোল (kaempferol) ও কুয়েরসেটিনের (quercetin) মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস থাকে। এই দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের নানা ক্ষয় রোধ করে, ও শরীরের ফ্রি রেডিক্যালগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর ফলে ক্যান্সার এবং সংক্রমণজনিত রোগের আশঙ্কা কম করে। মৌরি খেলে খুব তাড়াতাড়ি বার্ধক্য আসে না এবং স্নায়বিক নানা রোগ দূরে রাখতে সাহায্য করে।
মৌরিতে এন্ডোরফিনস (endorphins) থাকে। এন্ডোরফিনস মনমেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে, তাই মৌরি খেলে তার ভিতরে থাকা এন্ডোরফিনস রক্তে মিশে মনমেজাজ ভালো করে দেয়। তাতে মানসিক অবসাদ কমাও সম্ভব। মৌরিতে পটাসিয়াম থেকে বলে মস্তিষ্ক সজাগ রাখে এবং স্নায়ু সতেজ রাখে।
মৌরিতে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইটো-ইস্ট্র্রোজেন (phyto-estrogen) থাকে। এই ফাইটো-ইস্ট্র্রোজেন গঠনে কিছুটা ইস্ট্র্রোজেন মতো। তাই যেই মহিলাদের প্রতিবার ঋতুস্রাবের আগের সমস্যা এবং বিগতযৌবনা হওয়ার সময় (মেনোপোজ) নানা ধরনের সমস্যা হয় বা হতে পারে মৌরি খেলে তা কিছুটা কমতে পারে।
মৌরি মুখ তরতাজা রাখে ও মুখের দূর্গন্ধ দূর করে।
তাই আমি ঠিক করেছি যে এবার থেকে রান্নায় বেশি পরিমাণে মৌরি ব্যবহার করব। তা ছাড়া রান্নায় মৌরি ব্যবহার করলে লিকোরিসের মতো গন্ধ হয়। আমার খাওয়ার টেবিলে একটা সুন্দর কৌটায় আমি এখন মৌরি রাখি যাতে খাওয়ার পরে সবাই একটু মৌরি খান।
আপনারাও আবার মৌরি খাওয়ার অভ্যাসটা শুরু করতে পারেন আমার মতো।

