জ্যোতিষী ও তান্ত্রিকের বেশেই বেশি পাওয়া যায় সাধকের ভেকধারীদের
কোথায় সন্ন্যাসীরা মানুষের সেবা করবেন, উল্টে এরা তো লোকের সেবা নিচ্ছে
- Total Shares
আমাদের সমাজে সাধু-সন্তদের আসন অনেক উঁচুতে। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, তাঁদের চরিত্র অত্যন্ত পবিত্র, তাঁরা ত্যাগের প্রতিমূর্তি। কামনা-বাসনা থেকে মুক্ত হয়েই একজন সন্ন্যাসী হতে পারেন। কিন্তু সাধকের দেশ ভারতে এখন অনেক লোক সাধকের ভেক ধরে ব্যবসা করছে, অন্যায়-অপকর্ম করছে, যার ফলে সাধকদের সম্বন্ধেই একটা ভুল বার্তা যাচ্ছে মানুষের কাছে। যাঁরা সত্যিই সেবাকাজের সঙ্গে যুক্ত, কৃচ্ছসাধন করেন, তাঁদের প্রতিও লোকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাবে।
জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি সাধারণ মানুষের দুর্বলতা রয়েছে। জ্যোতিষীরা ভবিষ্যৎ গণনা করতে পারেন বলে লোকের ধারণা, আবার তাঁরা দুর্দিন এড়াতে কী ধারণ করতে হবে, সে কথাও বলে দেন। তান্ত্রিকদেরও লোকে অন্য দৃষ্টিতে দেখেন, তাঁদের প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী বলে লোকে মনে করেন। এই দুই শাস্ত্রই অনেক সাধনার। কিন্তু লোকে বিজ্ঞাপন দেখে ভাগ্য ফেরাতে এঁদের কাছে চলে যান, তারপরে সর্বস্বান্ত হন।
এঁদের কাছে যাওয়ার আগে ভেবে দেখুন, কেন যাচ্ছেন ওই বাবার কাছে। সত্যিই কি আপনার যাওয়ার দরকার আছে। যাঁর কাছে যাচ্ছেন, তাঁর সম্বন্ধে একটু খোঁজখবর নিন, তাঁর অতীতের কথা জানুন। ওই ব্যক্তি মানুষের কল্যাণের জন্য কী করেছেন, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিন।
এদের জন্যই লোকে বাঁকা চোখে দেখছে সৎ সাধকদেরও
তন্ত্রসাধনায় সত্যিই শক্তি লাভ করা যায়। কিন্তু একশ্রেণীর লোক এই শক্তি কুকাজে ব্যবহার করেন। তন্ত্রবিদ্যা প্রয়োগ করে লোককে সম্মোহিত করে তার সর্বস্ব লুণ্ঠন করা হয়। সস্তা চমক দিতে এবং লোকের ধনসম্পদ লুঠ করতে এই বিদ্যা অনেকে প্রয়োগ করছেন।
সাধকের ভেকধারী লোকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ করা উচিৎ। প্রশাসনের একাংশ এদের সঙ্গে যুক্ত বলে আমার ধারনা, তাদের জন্যই এই সব ঠগ-ভণ্ড সাধকদের এত রমরমা। কেউ নিজেকে সাধক বলে পরিচয় দিল আর লোকে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছে যেতে আরম্ভ করল, ব্যাপারটা কিন্তু অতটা সহজ বলে আমার মনে হয় না। যদি প্রশাসন এমন কোনও বাবার খবর পেয়েই তাকে আটক করে জমি-জিরেত ও সম্পত্তির হিসাব চায় এবং তা দাখিল করতে না পারলে গ্রেপ্তার করে, তা হলে বাড়বাড়ন্ত শুরুতেই শেষ হয়ে যাবে।
আজকাল তো এইসব সাধুদের ধারে-কাছে পৌঁছানোই মুশকিল। তাঁরা থাকেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে, দামি গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়ান। কোথায় সন্ন্যাসীরা মানুষের সেবা করবেন, নাতো এখানে সাধারণ লোক তাঁদের সেবা করছেন। এই সব সাধুদের কাছে লোকে তো সমস্যার কথা বলার জন্য যেতেই পারবেন না। সমাজ এখন যে জায়গায় পৌঁছেছে, সেখানে কে সত্যিকারের সাধক, তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজ বলেছিলেন, ধর্ম হল ত্যাগ, সংযম, সত্য ও ব্রহ্মচর্য। তিনি চেয়েছিলন সৎ ও চরিত্রবান লোক তৈরি হোক। এটাই ছিল তাঁর সংকল্প। সুতরাং আমরা প্রথমে সংযম ও চরিত্রগঠনের উপরে জোর দিই। এইরূপ কঠোর জীবনযাপন না করলে ধর্মজগতে প্রবেশ করা যায় না।
একের পর যৌন কেলেঙ্কারিতে দায়ী সাধকের ভেকধারীরা
যিনি সত্যিকারের সাধক হবেন, তিনি এই প্রচারই করবেন যে, ঈশ্বরকে পাওয়ার রাস্তা অত সহজ নয়, এর জন্য কঠোর ভাবে মানব ধর্ম পালন করতে হবে। যে সব লোক নিজেদেরই ভগবান বলে প্রচার করছে, তার থেকে দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয়। যারা নিজেদের ভগবান বলে প্রচার করছে, সহজে কিছু পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বা প্রলোভন দেখাচ্ছে, অথবা ভাগ্য ফেরানোর নামে টাকা-পয়সা চাইছে, তাদের থেকে দূরে থাকাই ভালো। যাঁরা সন্ন্যাসী বা সাধক, তাঁরা নিঃস্বার্থ ভাবে মানুষের সেবা করেন, মানবধর্ম পালন করেন, আত্মপ্রচার থেকে দূরে থাকেন, কোনও প্রলোভন দেখান না ও সচ্চরিত্র হন।

