আড়াই দশক নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আসবে না, তাই কয়েকটি টিকা যথেষ্ট জরুরি
গাভির সাহায্যে আমাদের দেশে নিউমোনিয়া ও রোটা ভাইরাস টিকা দেওয়া হচ্ছে
- Total Shares
আমাকে অনেকে জিজ্ঞাসা করেন, আগে শুধু মাত্র কয়েকটা টিকা নিলেই কাজ চলে যেত আর এখন টিভিতে নিত্যদিন নতুন নতুন সব টিকা দেওয়ার কথা বলা হয়। এই বিভিন্ন টিকা নেওয়ার কী সত্যিই তেমন একটা প্রয়োজন আছে?তাহলে ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলি।
আমাদের দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন সাহেবরা যে টিকাগুলো দিতেন সেই টিকাগুলোই কিছুদিন আগে পর্যন্ত দেওয়া হত, যেমন ব্যাসিল ক্যালমেট গুইরিন (Bacille Calmette Guerin) বা বিসিজি, পোলিও, ট্রিপল অ্যান্টিজেন ও মিেসলস।
রোগ প্রতিরোধের জন্য আগেই টিকা নেওয়াটা প্রয়োজনীয়
কিন্তু আস্তে আস্তে এই তালিকাটি বড় হতে থাকে।
কিন্তু কেন?
স্বাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ওধুধ দিয়ে রোগ সরানো হয়। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বা মারাত্মক রোগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য টিকার আবিষ্কার শুরু হয়। তাই ধীরে ধীরে যত নতুন রোগ মাথা চাড়া দিতে শুরু করে, টিকার সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
যদিও আগামী ২৫ বছরে নতুন কোনও অ্যান্টিবায়োটিক বাজারে আসবে না, এবং অদূর ভবিষতেও আপাতত নতুন কোনও অ্যান্টিবায়োটিক বাজারে আসার সম্ভাবনাও নেই। তাই রোগকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আগেই টিকা নেওয়াটা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। আবার কয়েকটি ভাইরাল ইনফেকশনের ওষুধ নেই, সে ক্ষেত্রে সেই রোগের টিকাটি নেওয়াটাই বাঞ্চনীয় হয় পড়ে। আবার অনেক সময় বিশেষ কয়েক ধরনের রোগের চিকিৎসা করার জন্য বিশেষ কয়েকটি টিকার ব্যবহার করা হয়, যেমন ব্লাডার ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বিসিজি টিকার ব্যবহার হয় থাকে।
কোন টিকা কখন দেওয়া হবে?
কোন দেশে কোন টিকাটা দেওয়া হবে, সেটা নির্ভর করছে অনেকগুলো কারণের উপর। প্রথমত, একজন ব্যক্তি কোন দেশে বাস করেন এবং সেই দেশে কোন রোগের আধিক্য রয়েছে। দ্বিতীয়ত, সেই দেশে ওই রোগটা কতটা মারাত্মক। তৃতীয়ত, সেই দেশের সরকার রোগটিকে নির্মূল করার জন্য ঠিক কতটা খরচ করতে চাইছে সরকার।
আমাদের দেশে চিকেনপক্স নিয়ে মানুষ এখনও খুব ভয়ে থাকে। যেহেতু এই রোগটিতে খুব কম সংখ্যক লোকে মারা যান তাই আমাদের সরকার এই রোগটা নিয়ে অতটা চিন্তিত নয়। সরকারি হাসপাতালে তাই এই টিকা না দেওয়া হলেও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে কোনও অভিভাবক যদি চান তাহলে এই টিকাটি কিনে তাঁর সন্তানকে দিতে পারেন। পাশাপাশি মিসেলস, মাম্পস ও রুবেলা রোগগুলির বা এমএমআর নিয়ে যেমন আমাদের সরকার বেশ ভাবিত, তাই খুব শিগিরি আমাদের রাজ্যেও এই টিকাটি সরকারি হাসপাতালগুলোতে পাওয়া যাবে। পৃথিবীতে নিউমোনিয়া রোগটিতে আমাদের দেশেই সব চেয়ে বেশি মানুষ এই রোগটিতে ভোগেন, তাই স্বাভাবিক ভাবে সরকার এই রোগটা নিয়ে ভাবিত এবং এই টিকাটিও দেওয়া হয়। ডায়েরিয়া টিকাটিও যথেষ্ট প্রয়োজনীয়।
আমাদের দেশে হেপাটাইটিস ও রোটা ভাইরাসের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ টিকা দেওয়া হয়
অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে দিল্লি অবধি জাপানিজ এনকেফেলাইটিসের আধিক্য দেখা যায়। তাই এই সব জায়েগায় জাপানিজ এনকেফেলাইটিসের টিকাটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
আমার সন্তানকে কী সব টিকাই দিতে হবে?
বিদেশে স্কুলগুলোতে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে যে বিশেষ কিছু টিকা না নিলে সেই বাচ্চাটিকে স্কুলে অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে পড়তে অনুমতি দেওয়া যাবে না। একজন বাচ্চার থেকে অন্য বাচ্চার শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আমাদের দেশে এখনও এই ধরণের কোনও নিয়ম চালু হয়েনি ঠিকই, কিন্তু বাচ্চা ও মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য দরকারি টিকাগুলো দেওয়া উচিৎ। এখানে আর একটা কথা বলে রাখি, আমাদের সরকার কিন্তু এই টিকাকরণের বিষয়ে বেশ কড়া কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাই পালস পোলিও টিকাটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসা হয়। এর ফলে আজ আমাদের দেশ এই রোগ থেকে মুক্ত হতে পেরেছে।
হেপাটাইটিস ও রোটা ভাইরাসের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বেশ কেয়কটি টিকাও বাধ্যতামূলক ভাবে দেওয়া হয়। মোটামুটি সরকারি হাসপাতালে যে টিকাগুলো দেওয়া হয়ে থাকে সেগুলিকে আমরা বাধ্যতামূলক বলতেই পারি।
মোটামুটি সরকারি হাসপাতালে যে টিকাগুলো দেওয়া হয়ে থাকে সেগুলিকে আমরা বাধ্যতামূলক বলতেই পারি
এখন গ্লোবাল আলায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনের (গাভি) সাহায্যে আমাদের দেশে নিউমোনিয়া ও রোটা ভাইরাস টিকাটি দেওয়া হচ্ছে। আর যেহেতু সরকারি হাসপাতালগুলোতেও আগে যে টিকাগুলো ছিল তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, আরও অনেকগুলো টিকা যেমন হেপাটাইটিস বি, হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা (Haemophilus influenzae) বা এইচইবি, ইনঅ্যাক্টিভেটেড পোলিও ভ্যাকসিন (inactivated polio vaccine) বা আইপিভি,নিউমোনিয়া ও রোটা তাই বেসরকারি হাসপাতালে ও সরকারি হাসপাতালে কাছাকাছি সংখ্যক টিকা দেওয়া হচ্ছে বাচ্চাদের।
তবে আস্তে আস্তে সাধারণ মানুষের চিন্তাভাবনা বদলাচ্ছে, সঙ্গে বদলাচ্ছে সরকারের মানসিকতাও তাই সাধারণ মানুষের কাছে যাতে এই টিকাগুলো বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে তাই সরকার বিভিন্ন প্রকল্প চালু করছে।