আলিঙ্গন দেখে যাঁরা প্রহার করলেন, শ্লীলতাহানি হলে তাঁরা চুপ থাকেন কেন?

প্রকাশ্যে আলিঙ্গন থেকে প্রহার, হোক আলিঙ্গন: কলকাতা এখন কোন পথে

 |  2-minute read |   03-05-2018
  • Total Shares

মেট্রোরেলে আলিঙ্গন দেখে যাঁরা প্রতিবাদী হয়েছেন, শ্লীলতাহানি দেখলে তাঁরা কেন প্রতিবাদ করেন না? আবার বেশ করেছে ওদের মেরেছে... এমন কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় শোনা গেলেও, সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে গণপ্রহারের প্রতিবাদ। অনেকে অবশ্য প্রহারকে যেমন সমর্থন করছেন না, তেমন সমর্থন করছেন না প্রকাশ্যে আলিঙ্গাবদ্ধ হওয়াকেও। এক দিকে যখন প্রশ্ন উঠেছে, আলিঙ্গন করে কী হয়েছে, একই সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে, প্রকাশ্যে এ সব কেন? সঙ্গে, যাঁরা সেদিন ওই তরুণ-তরুণীর আচরণে আপত্তি করেছিলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের নতুন একটা পরিচয় পাওয়া গেছে, ‘কালচারকাকু’।

hok_body1_050318075612.jpgযুগলকে প্রহারের দৃশ্য এখন ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়

এ সবের পাশাপাশাশি এমন প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে, কী ঘটেছিল এবং এখনও তার পক্ষে কী প্রমাণ রয়েছে। যাঁরা সেদিন আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়েছিলেন, তাঁরা প্রকাশ্যে আসছেন না কেন, বিশেষ করে তাঁদের সমর্থনে যখন অনেকে প্রকাশ্যে আলিঙ্গনাবদ্ধ হলেন মেট্রো স্টেশনের বাইরে?

প্রকাশ্যে যতবারই মহিলাদের অশালীন আচরণ ও শ্লীলতাহানির শিকার হতে দেখা গেছে, ততবারই সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে আরও একটি প্রসঙ্গ, তা হল প্রত্যক্ষদর্শীদের দেখেও না দেখা। নিকটাত্মীয় কেউ থাকলে প্রতিবাদ করেন ঠিকই, তার বাইরে কাউকে প্রতিবাদ করতে সাধারণত দেখা যায় না। চলন্ত বাস থেকে যখন যাত্রীকে কন্ডাক্টর ঠেলে ফেলে দিয়েছে, তখনও কেউ প্রতিবাদ করেনি। পরে অবশ্য মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

hok_body2_050318075807.jpg'হোক আলিঙ্গন': মহানায়ক উত্তমকুমার মেট্রোর বাইরে প্রতিবাদ

তবে এক্ষেত্রে প্রতিবাদের ধরনটা অন্যরকম, 'হোক আলিঙ্গন'। এর আগেও কলকাতায় এই ধরনের প্রতিবাদ হয়েছে, কলকাতা কর্পোরেশনের বাইরে। তখন প্রকাশ্যে চুম্বনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন একদল তরুণ-তরুণী। কিন্তু তাঁরা শালীনতার মাত্রা কতটা বজায় রাখছেন? শালীনতা অনেকটাই নির্ভর করে সংস্কৃতি বা কৃষ্টির উপরে, তাই গোয়ার সমুদ্রসৈকতের স্বাভাবিক দৃশ্যটাই পুরীতে অশালীন হয়ে ওঠে। আবার হিমাচলের বিশেষ স্থানে সূর্যস্নানের সঙ্গে কখনোই তুলনা করা যায় না ইয়োরোপের কোনও সাগরবেলার। তাই কলকাতায় প্রকাশ্যে এমন আচরণ কি আদৌ সমর্থনযোগ্য? বিপরীত মত হল প্রগতি। তখনও এমন কথা শোনা যাচ্ছে, নারীদের পোষাকের দৈর্ঘ্যের সঙ্গে প্রগতির আনুপাতিক সম্পর্ক নিয়ে।

কিন্তু একজন যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তা হলে একদল লোকের গণপ্রহার করাও সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। তা ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন প্রশ্নও উঠছে, পথের ধারে লোকে মলমূত্র ত্যাগ করলে এই কালচারকাকুরা কেন প্রতিবাদ করেন না। এর সম্ভাব্য উত্তর হল, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া আর আবেগের বশে কিছু করার মধ্যে তো পার্থক্য আছে।

hok_body3_050318075849.jpgদহন ছবির সেই দৃশ্য

প্রগতি মানে যদি প্রকাশ্যে আলিঙ্গন করা হয়, তা হলে তো আরও বেশি প্রগতি হলে মানুষের সঙ্গে ইতর প্রাণীর কোনও পার্থক্যই থাকবে না যৌন মিলনের ক্ষেত্রে, এমন মতামতও শোনা যাচ্ছে বাসে-ট্রামে কান পাতলে। সোশ্যাল পুলিশিংয়ের বাইরে মেট্রার নিরাপত্তা নিয়েও অবশ্য অনেকে চিন্তিত।

মেট্রো রেলে যদি অমন কাণ্ড ঘটে থাকে, তা হলে রেলপুলিশের ভূমিকা কী ছিল, এবং সিসিটিভি ক্যামেরায় কিছুই ধরা পড়ল না? যাঁরা এই সিসি ক্যামেরার ছবি মনিটর করেন, তাঁরাই বা কী করছেন? প্রহৃতরা কেন পুলিশের কাছে গেলেন না? সোশ্যাল মিডিয়া এখন উত্তাল, আর পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার মধ্যে কলকাতা এখন দেখছে ভালোবাসার ছবি, কন্ট্রাস্ট বটে!

দিনের শেষে প্রাপ্তি বলতে একটাই, বাংলা নতুন একটা শব্দবন্ধ: কালচারকাকু।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment