উপকারিতার দিক থেকে বিদেশি সুপারফুডকে টেক্কা দিচ্ছে সজনেপাতা

গাছটির কোনও অংশই ফেলনা নয়, সব অংশেই রয়েছে পুষ্টি তবে পাতায় অনেক বেশি

 |  3-minute read |   21-03-2018
  • Total Shares

পুষ্টিকর খাবারদাবারের তালিকায় যেগুলি রয়েছে, বিদেশে সেগুলিকে 'সুপারফুডস' বলা হয়। বিদেশি যে কোনও সুপারফুডকে টেক্কা দিতে পারে দেশি সজনেপাতা। সজনে পাতা থেকে তৈরি হয় মারিঙ্গা। ভারতের চিরাচরিত খাবারদাবারের একটা অঙ্গ হল এই পাতা। সজনে গাছকের অংশে উপকারিতা আছে বলে এই এটিকে একটি অলৌকিক গাছ বলা হয়।

গাছটির সব কটা অংশে নানা খাদ্যগুণ থাকলেও পাতার প্রায় নব্বই শতাংশ নানা খাদ্যগুণে ভরপুর। মনে করা হয় যে এই পাতার আরও অনেক গুণাগুণ এখনও অজানাই রয়ে গেছে। মরিঙ্গাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, (ফলিক অ্যাসিড, পাইরিডক্সিন ও রাইবফ্লেভিন), সি, ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম, ফসফরাস, দস্তা ও প্রোটিন রয়েছে।

মানুষের শরীরে আটটি অতিপ্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড দরকার। মরিঙ্গাতে এই আটটি অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। খুব কম সংখ্যক গাছে এই আটটা অ্যামিনো অ্যাসিড একত্রে থাকে। নানা রোগ সারাতে ও রোগ প্রতিহত করতে মরিঙ্গা খুবই উপকারী। মরিঙ্গা কাজ করার শক্তি বাড়ায় এবং মন-মেজাজ ভালো রাখে। এতে ফ্ল্যাভোনোইডস, পলিফিনলস ও অ্যাস্করবিক অ্যাসিড মতো আরও অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও রয়েছে। মোরিংয়ে রয়েছে ফ্রি রাডিক্যাল টারমিনেটার্স পলিফিনলস যা যকৃৎ ভালো রাখে।

মারিঙ্গা শরীরে ফোলা কমাতে সাহায্য করে। কারও শরীরে উত্সেচক ও প্রোটিনের সমতা ঠিক না থাকলে শরীর ফুলে যেতে পারে, মারিঙ্গা উত্সেচক ও প্রোটিনের সমতা বজায় রাখে। এর ফলে ডায়াবেটিস, শ্বাসনালীর সমস্যা, কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা, বাত ও স্থূলতা দূর করে। মারিঙ্গা ব্লাডসুগার ও লিপিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। মারিঙ্গা ব্লাড লিপিড নিয়ন্ত্রণ করে এর ফলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে। ধমনীতে কোনও কিছু জমতে দেয় না ও কোলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে মারিঙ্গা।

moringa_body_032118060641.jpgসজনে পাতা

মারিঙ্গায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই এবং সি থাকে। তাই এই পাতা খেলে মস্তিস্ক সতেজ থাকে ও স্মৃতিশক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।ফলে অ্যালঝাইমারের আশঙ্কা কমায় ও মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারে সেরোটোনিন, ডোপামিন ও নোরাড্রেনালিনের সমতা বজায় রাখে। এর ফলে আমাদের মন-মেজাজ ভালো রাখে ও স্মৃতি শক্তি বাড়ে।

সৌন্দর্য্য বাড়াতে মারিঙ্গার ভূমিকা রয়েছে। কারণ মারিঙ্গা খেলে ত্বক উজ্বল হয় ও চুল ভালো থাকে। মারিঙ্গা পাতা রক্ত শোধন করে। এর ফলে ত্বকের একনে (acne) জাতীয় সমস্যা দূর করে।

যেসব গাছড়া মানসিক চাপ কম করে তাদের 'সুপারহার্বস'ও বলা হয়ে থাকে। অ্যাডাপ্টজেন্স হল এক ধরণের সুপারহার্ব। তাই মানসিক চাপ কম করতে হলে মারিঙ্গা খেতেই হবে। মারিঙ্গার এত সব গুণ কিছুদিন হল গবেষকদের নজর কেড়েছে। শরীরে অ্যাডাপ্টজেন্স শুধু যে মানসিক চাপ রোধ করে তাই নয়, মানসিক চাপ হলে একজন যাতে খুব সহজেই সেটা কাটিয়ে উঠতে পারেন, তাতেও এটি সাহায্য করে। অ্যাডাপ্টজেন্স মেদ ঝরাতে সাহায্য করে, শরীরকে শক্তিশালী করে, শরীরের ক্ষয় পূরণ করে ও পুষ্টি জোগায়।

পালংশাক বা অন্য যে কোন শাকের মতোই রান্না করতে হয় মারিঙ্গা। মারিঙ্গা রান্না করেও খেতে পারেন বা পাতা শুকিয়ে নিয়ে গুঁড়ো করেও খেতে পারেন কিংবা পাতাগুলো শুকনো করেও খেতে পারেন। মারিঙ্গা খুব কম পরিমাণে খেলেই যথেষ্ট। প্রত্যেকদিন যদি তিন গ্রাম করে মারিঙ্গা খাওয়া যায় তাহলে শরীর অনেকখানি পুষ্টি পাবে। শরবত বা পান্নাতে কিংবা সুপ অথবা স্টুতে মারিঙ্গা যোগ করে খেতে পারেন। মারিঙ্গা জলে ভিজিয়ে সেই জলটাও খেতে পারেন। এর স্বাদ খুব একটা ভালো নয়, তাই একটু মধু বা ম্যাপেল সস কিংবা দারচিনি দিয়ে সুস্বাদু করে খেতে পারেন। যে ভাবেই খান না কেন, মারিঙ্গার গুণ নষ্ট হয় না।

পুষ্টিকর খাবার খেতে হলে মাঝেমধ্যে যদি আমাদের কাছের কোনও বাজারে ভালো করে একটু লক্ষ্য করি, তা হলেই হয়ত পেয়ে যাব মারিঙ্গার মতো অনেক সুপারফুড, মারিঙ্গা তাদের অন্যতম।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

KAVITA DEVGAN
Comment