মোবাইল ফোনের নেশা অন্ধকার করে দিতে পারে আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ

ঠিক যেমন মানিব্যাগটা বা দরকারি কাগজপত্র আপনি বাচ্চাকে হাত দিতে দেন না, তেমনই মোবাইলও দেবেন না

 |  3-minute read |   17-04-2018
  • Total Shares

আড়াই ইঞ্চি মোবাইল ফোনটা আড়াই বছর বয়সীদের কাছে আমরা কত স্বচ্ছন্দে দিয়ে দিই...না? একবারও ভাবি না এর ফল ঠিক কী হতে পারে। আমরা স্বস্তিতে থাকি, যাক্ কিছুক্ষণ বিরক্ত করবে না আমাদের। একেবারেই ভেবে দেখি না, ক্রমশ আসক্ত হয়ে উঠছে ওর শিশুমনের অন্দরমহল। হুঁশ ফেরে যখন স্কুল থেকে অভিযোগ আসতে শুরু করে। কখনও হয়ত স্কুলে যে কাজ দেওয়া হয়েছিল সেটা শেষ হয়নি, আবার কখনও পাঁচবার ডাকলেও সাড়া না দেওয়া, নিজস্ব ভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ পাওয়া অথবা প্রচণ্ড মারপিট করা, বাড়ির বাইরে মেলামেশা বন্ধ করে দেওয়া, খেলাধুলোর প্রতিও উৎসাহ হারিয়ে ফেলা, এই সবের উপসর্গ দেখা যেতে থাকে ক্রমশ। তখন আপনি নিরুপায়। যে নেশাকে নিজের হাতে সযত্নে তুলে দিয়েছেন, এবার তা ওর থেকে কেড়ে নিতে বদ্ধপরিকর আপনি। কিন্তু

সে তখন শুনবে কেন আপনার কথা? নেশায় আচ্ছন্ন মন উথালপাথাল করবে তা পাওয়ার জন্য আর অসহায় অবস্থায় আপনি দিকভ্রান্ত হয়ে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিতে থাকবেন।

দু'বছরের তিন্নিকে মোবাইল ফোন ছাড়া খাওয়ানোই যায় না। ও জানেই না আর অন্য কী নিয়ম আছে খাওয়ার।

তিন বছরের বিট্টুকে তার মা হোমওয়ার্ক করান স্মার্টফোনের টোপ দিয়ে। বিট্টু দু'লাইন হ্যান্ড রাইটিং করে আর পাঁচমিনিট করে মোবাইল ফোন দেখে।

সাড়ে চার বছরের হিয়ার স্কুল থেকে কমপ্লেন এসেছে, ও কারোর চোখের দিকে তাকিয়ে কথার উত্তর দেয় না। কী করেই বা দেবে। বাড়িতে হিয়ার অবসর বিনোদনের সঙ্গী শুধুই স্মার্টফোন। চোখে চোখ রেখে কথা বলা বা আই কনট্যাক্ট করে দৃঢ় ভাবে কথা বলা বা অ্যাসার্টিভ কমিউনিকেশন করা কেউ শেখায়নি তাকে।

ছ'বছরের অর্কর রাত একটার আগে ঘুম আসে না। রাতে শোবার আগে ঘণ্টা দেড়েক মোবাইলে গেম না খেললে তার চলে না। এ তার বেশ কয়েক বছরের নেশা। গেম খেলার পর সে এতই উত্তেজিত থাকে যে ঘুম আর আসতেই চায় না। ফলত সকালে স্কুল যেতে তার প্রবল অনীহা হয়। অনেকদিন স্কুলে যেতেই পারে না সে।

body2_041718064640.jpg

ন'বছরের সায়নের বহুদিনের অভ্যাস সুযোগ পেলেই মায়ের স্মার্টফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা। কিছুদিন আগেই সে ওখানে একটি সেক্স ভিডিও দেখে। স্কুলে গিয়ে তারই একটি বন্ধুর সঙ্গে সেই ধরণের আচরন সে করতে যায়। সায়ন এখন বেশ কিছুদিনের জন্য স্কুল থেকে সাসপেন্ডেড।

তিন্নি থেকে শুরু করে সায়ন যে সমস্যার শিকার তার অনেকটা দায় কিন্তু অভিভাবকদের ওপরও বর্তায়। অনেক সময়ই আমরা পেরেন্টিং এর ক্ষেত্রে একটা সীমারেখা বা লক্ষ্মণরেখা টানতে ভুলে যাই। নিজেদের সাময়িক সুবিধা বা আরামের জন্য বিন্দুমাত্র চিন্তাভাবনা না করেই আমরা ওদের হাতে তুলে দিই এমন কিছু জিনিস যার সঠিক ব্যবহার সম্বন্ধে ওরা ওয়াকিববহলই নয়।

আগে নিজেকে বোঝান যে মোবাইল আপনার বাচ্চার প্রমোদের বস্তু নয় বরং আপনার একান্ত নিজস্ব কাজের জিনিস।

ঠিক যেমন আপনার মানিব্যাগটা, হাতঘড়িটা বা চশমাটা বা ইন্সিওরেন্স ফিক্সড ডিপোজিটের কাগজপত্র আপনি বাচ্চাকে হাত দিতে দেন না, সেরকম মোবাইল টাও দেবেন না। বাচ্চা আধঘন্টার বেশি মোবাইল দেখা মানেই মস্তিষ্ক থেকে ক্ষরণ হয় নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিন, যা তাদের খুব অলস করে তোলে চিন্তাভাবনায়। ক্রমে তাদের মধ্য থেকে শৈশবজনিত চনমনে ভাবটা নষ্ট হয়ে যায়। সে কারও সঙ্গে মিশতে চায় না, এমনকি খেলাধুলোও করতে চায় না।

আপনার যতই ব্যস্ততা থাকুক, বাচ্চাকে সামাজিক করে তুলুন। আর পাঁচটা বাচ্চার সঙ্গে প্রতিদিন খেলতে পাঠান, কখনও বা আপনার বাড়িতে হুল্লোড় করুক কচিকাচার দল। চেষ্টা করুন ওদের কিছু নতুন ধরণের খেলাধুলোর আইডিয়া দিতে।

ভালো হবি তৈরি করানো খুব প্রয়োজন স্মার্টফোনের অ্যাডিকশন কাটানোর জন্য। ছবি আঁকা, বাজনা বাজানো, গল্পের বই পড়া, এই ধরণের সুঅভ্যাস গড়ে ওঠা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন বাচ্চাদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে।

তাই যত্নে প্রতিপালন করুন আপনার সন্তানের শৈশবের দিনগুলো।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PAYEL GHOSH PAYEL GHOSH

Parenting Consultant, educates young parents on positive parenting

Comment