সুস্থ থাকতে হলে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খেতেই হবে

আচার, দুধ, দই ও ইডলি জাতীয় খাবারে প্রোবায়োটিক আছে

 |  3-minute read |   22-03-2018
  • Total Shares

সম্প্রতি মাইক্রোবায়োলোজিস্ট ও প্রোবায়োটিক বিশেষজ্ঞ মেরি ইলন স্যান্ডার্সের সঙ্গে আলোচনা করে অনেক নতুন তথ্য জানতে পারি প্রোবায়োটিক সম্পর্কে। গাট মাইক্রোবায়োটিক অ্যান্ড প্রোবায়োটিক সায়েন্স ফাউন্ডেশন (ইন্ডিয়া)-র আমন্ত্রণে সম্প্রতি তিনি এ দেশে এসেছিলেন। জেনে খুব অবাক লাগল যে এ হেন একটা আনুবীক্ষণিক ব্যাকটিরিয়ার কত উপকারিতা থাকতে পারে। জীবনে ছোট ছোট পরিবর্তনের অনেক বড় প্রভাব রয়েছে। তাই আমার মতে প্রত্যেক দিন প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত্।

প্রোবায়োটিক ঠিক কী? পাকস্থলীতে হাজার হাজার কোটি ব্যাকটিরিয়া থাকে, দরকারি এবং অদরকারি মিলিয়ে। দরকারি ব্যাকটেরিয়াগুলি হজমশক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এর ফলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে। অদরকারি ব্যাকটিরিয়াগুলি ঠিক এর উল্টো কাজটা করে। তিরিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে আমাদের পৌষ্টিকতন্ত্রে। আমাদের অনিয়মিত জীবনযাপনের জন্য দরকারি ব্যাকটিরিয়া ও অদরকারি ব্যাকটিরিয়া ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের হজমশক্তিও। আমরা এখন অনেক বেশি মিষ্টিজাতীয় খাবার খাই, মাংস খাই, প্রসেসড ফুড এবং যে সব খাবারে কম পরিমাণে ফাইবার রয়েছে তেমন খাবারও খাই। এর ফলে শরীরে দরকারি ব্যাকটিরিয়া ও অদরকারি ব্যাকটিরিয়ার সমতা নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া আরও কয়েকটি জিনিস আছে যেমন- অ্যন্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া বা দরকারের বেশি ওষুধ খাওয়া, যাঁদের সিজার করে সন্তান হয়েছে, যাঁরা ছেলেবেলায় প্রয়োজনের তুলনায় কম মাত্রায় স্তন্যপান করেছি এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যত বাতিকের পর্যায়ে চলে গিয়েছে, তাঁদের শরীরে মাইক্রোব্যাকটিরিয়া ভালো ভাবে কাজ করতে বাধা পায়।

curd_body1_032218080552.jpgদক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় কার্ড রাইস

গবেষক স্যান্ডার্সের মতে পৃথিবী জুড়ে এ নিয়ে গবেষণা চলছে। তিনি বলেন, প্রোবায়োটিককে ঠিক মতো শরীরের কাজে লাগালে তা আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রকে ভালো রাখতে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ডায়েরিয়া সারাতে সাহায্য করে, ল্যাক্টসে যাঁদের অ্যালার্জি তাদের সহায়তা করে ও উদরের প্রদাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি জানালেন যে, পেটে মাইক্রোঅর্গানিজমের কিছু পরিবর্তনের ফলে মানুষের এখন নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। এর ফলে যে রোগগুলো হয় সেগুলো হল - শ্বাসকষ্ট, সেলিয়েক রোগ, বৃহদন্ত্রে ক্যান্সার, রক্ত শর্করা, বৃহদন্ত্রে ঘা, ইরিটেবেল বাওয়েল সিনড্রোম, পাকস্থলী ও অন্ত্রের সমস্যা, স্থূলতা, বাত, যকৃতের নানা সমস্যা। ওঁর কাছে শুনে মনে হল, যে সুস্বাস্থ্যের জন্য এখন প্রত্যেকদিন প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার খাওয়াটা আবশ্যিক হয়ে পড়েছে।

অঞ্চলবিশেষে যে সব খাবারদাবার পাওয়া যায় তার মধ্যেই যথেষ্ট পরিমাণে দরকারি ও ভালো ব্যাকটিরিয়া রয়েছে, যা আমাদের পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মিশে শরীর ভালো রাখে। প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবারে প্রচুর পরিমাণে জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া থাকে যেগুলো আমাদের পেটের পক্ষে ভালো ও দরকারি ব্যাকটিরিয়ার সঙ্গে মিশে পেট ভালো রাখতে সহায়তা করে।

curd_body2_032218080629.jpgইডলি

খুব সহজে প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবারদাবার খেতে হলে দই ও আইসক্রিম খাওয়া যেতে পারে। আর যদি হাতের কাছে এই দু'টোর কোনওটাই না থাকে তা হলে এক গ্লাস দুধই যথেষ্ট। আচারের মতো যে সব খাবার দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হয়, এবং দুধ ও লস্যির মতো যে সব খাবার ফেনায়িত হয়ে, যেমন-বাটারমিল্ক, কেফির বা কাঞ্জি, তাতে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোবায়োটিক থাকে। দক্ষিণ ভারতে এই জাতীয় খাবারই বেশি খাওয়া হয়। বাটারমিল্ক, ইডলি, দোসা, আপ্পম, ধোকলা ও উত্থাপমজাতীয় খাবারগুলো চাল-ডালকে জরিত করে তৈরি করা হয় বলে এই সব খাবারে প্রচুর পরিমাণে জীবন্ত ও ভালো ব্যাকটিরিয়া থাকে।

তবে ড স্যান্ডার্স বলেন, কী খাবারে কোন প্রোবাযোটিক থাকে সেটা একটু ভাববার বিষয়, কারণ প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবারে নানা প্রয়োজনীয় ব্যাকটিরিয়া যেমন দরকার, ঠিক তেমন প্রতিটি দরকারি ব্যাকটিরিয়া কিন্তু আলাদা আলাদা উপকারিতা রয়েছে। প্রোবায়োটিকের মধ্যে যেমন- ল্যাক্টোব্যাসিলাস, সেকারমিসেস, বিফিডোব্যাকটিরিয়ামেরে মতো আরও অনেক। এ সব প্রোবায়োটিক গ্রহণ করতেই হবে স্বাস্থ্যের কথা ভেবে। সুস্বাস্থ্য পেতে গেলে অত বাছবিচার করে প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে গেলে চলবে না, শুধু মাথায় রাখতে হবে, কতটা পরিমাণে খাচ্ছেন সে দিকে। তাই খাবার সময় বুঝে নিতে হবে, আপনার ঠিক কী দরকার। শুধু প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার খেলেই হবে না তার সঙ্গে রুটিন মেনে জীবনযাপন করতে হবে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

KAVITA DEVGAN
Comment