আগে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর বিয়ের কথা ভাবা উচিৎ মেয়েদের

মেয়েদের স্বনির্ভর হতে দিতে হবে যাতে তারা জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে পারে

 |  4-minute read |   23-03-2018
  • Total Shares

সনি টিভিতে কয়েক মাস আগে একটি নতুন ধারাবাহিকের একটা প্রোমো চোখে পড়ে। ধারাবাহিকটির নাম 'বড়ে ভাইয়া কি দুলহানিয়া'।

প্রোমোতে দেখা যাচ্ছে যে একটি পরিবারের সব বড়রা খাবার টেবিলের চারদিকে গোল হয়ে বসে রয়েছেন এবং তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি বাচ্চা মেয়ে, যে স্কুলের কোনও একটা পরীক্ষায় ৩৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছে।

মেয়েটির বাবা যখন মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করছেন যে তার ভবিষৎ পরিকল্পনা কী, তখন মেয়েটি উত্তরে বলে যে সে জীবনে সুখী হতে চায়।

ওই দৃশ্যটা আমার মনে দাগ কেটে যায়, তখন আমার মনে হয়েছিল যে যদি এই কথাটা কোনও ছেলে তার বাবাকে বলত তাহলে তার বাবার ঠিক কী রকম প্রতিক্রিয়া হত। কিংবা বাবা কি ছেলের এই কথাটা হেসে উড়িয়ে দিতেন?

একটি ভারতীয় পরিবারে ছেলেটিকে খুব বকাবকি করে এটাই বোঝান হত যে ছেলেদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হয় এবং তাদের অর্থ উপার্জন করতে হয়। আর্থিক সাফল্যই জীবনে সুখ আনে। কোনও ছেলে যদি এই কথা বলত তা হলে হয়ত তার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় পড়ত। এটাই স্বাভাবিক। সমাজে মেয়েদের সার্বিক উন্নতির জন্য পরিবারের বড়দের এই শিক্ষাটি তাদের কন্যাসন্তানদেরকেও দেওয়া উচিৎ।

dulhan_body_032318093115.jpgছবি: গুগল

কন্যাসন্তানদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বনির্ভর করতে হলে তাদেরকেও নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে উৎসাহিত করতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে যে তাদের জীবনে বিয়েটাই সব নয়, নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার দিকে মন দিতে হবে তাদেরও।

একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই: যে সব মহিল উপার্জন করেন তাদের বাবা-মা বাড়ির খরচ চালাতে বলেন না। কিন্তু ছেলেদের ক্ষেত্রে এটা মনে করে নেওয়ায় হয়ে যে তারা সংসার খরচ চালাবে, এবং মেয়েদের বলা হয়ে যে তারা যেমন তাদের উপার্জিত টাকা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখে।

বরং সংসারের নানা খরচের জন্য কন্যা সন্তানদেরও টাকা দিতে বলা উচিত, যাতে তারাও দায়িত্ব নিতে শেখে। এ ছাড়া সংসারের নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তাদের মতামতও নেওয়া উচিৎ।

কন্যাসন্তানদের যদি বিয়ের আগে থেকেই এটা শেখানো হয় তা হলে বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে তারা এই অভ্যাসটাই বজায় রাখবে।

ঠিক একই ভাবে মেয়েদের কখনও শেখান হয় না কী ভাবে অর্থ ঠিক ভাবে সঞ্চয় করতে হয়ে বা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তাদের সমস্ত জমা, খরচ, ফিক্সড ডিপোজিট কিংবা মিউচুয়াল ফান্ড- তাদের বাবা কিংবা স্বামী তাঁদের হয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু এমনটা কেন হবে?

এটা কিন্তু খুব একটা কঠিন ব্যাপার নয়। শুধু একটু পড়াশোনা করতে হবে বা ইন্টারনেটে বিষয়গুলো একটু চোখ বুলিয়ে নিলেই হবে। কিংবা এ বিষয়ে কোনও বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। কোন খাতে কত টাকা রাখতে হবে বা কী ভাবে কত টাকা সঞ্চয় করতে হবে সেটা মহিলাদের নিজেদেরই ঠিক করতে হবে।

ছোটবেলা থেকেই কন্যাসন্তানদের অর্থ সঞ্চয় করার তাৎপর্য শেখাতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে তাঁরা নিজেদের উপার্জিত অর্থ নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এর ফলে নিজের অর্থকে কী ভাবে আরও বাড়ানো যায় সেটাও শিখবে তারা।

বাড়ির বড়রা কন্যাসন্তানদের একটা পরামর্শ প্রায়শই দিয়ে থাকেন, যেটা শুনলে আমার ভীষণ রাগ হয়। তাঁরা বলেন মেয়েদের এমন কোনও একটা পেশা বেছে নেওয়া উচিৎ যাতে তারা তাদের বাড়ি এবং বাইরে, এই দু'জায়গাতেই সমতা বজায় রাখতে পারে।

অভিভাবকরা অনেক সময় বলেন যে মহিলাদের জন্য শিক্ষকতা সব চেয়ে ভালো পেশা। এর ফলে তারা বাড়িতে ও নিজেদের সন্তানকেও পর্যাপ্ত সময় দিতে পারবেন।

অনেকেই শিক্ষকতার পেশাকে সময়-কাটানোর একটা উপায় বলে মনে করেন, এবং যাতে টাকাও আছে। এতে যে শুধু শিক্ষকতা পেশাকে অপমান করা হচ্ছে তাই নয়, পাশাপাশি এটাও মনে করে নেওয়া হয়ে যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কখনোই তাঁদের বেতন বাড়ানোর জন্য উদগ্রীব হবেন না।

তাঁদের পেশায় বেতন কম বলে যে তাদের অন্য কোনও পেশার তুলনায় কম সময় দিতে হচ্ছে এমনটা নয়। অন্য পেশায় যেমন অনেক সময় অফিসের কাজ বাড়িতে নিয়ে আসতে হয়, ঠিক তেমন ভাবেই শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের কাজ বাড়িতে নিয়ে এসে শেষ করেন। অথচ তাদের পেশা এবং অন্য কোনও পেশার বেতনের ফারাকটা বিস্তর।

ভগবান না করুন, যদি কারও কন্যাসন্তানের বিয়ে ভেঙে যায় তা হলে সেই মহিলা যদি পেশায় একজন শিক্ষিকাও হন, তা হেল তিনি অন্তত তাঁর উপার্জিত অর্থ দিয়ে নিজের কোনও বন্দোবস্ত করতে পারবেন। আর কোনও উপায় না পেয়ে সেই মেয়েটিকে যদি তাঁর বাপের বাড়িতেই ফিরে যেতে হয়? মেয়েরা আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর নন বলেই অনেক সময় ইচ্ছে না থাকা সত্বেও অনেক মহিলা তাঁদের শ্বশুরবাড়িতে আপস করে থেকে যেতে বাধ্য হন। উপায় থাকলে তাঁরা নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসতেন।

আমার বলার মানে এটা নয় যে আপনার কন্যাসন্তান যদি শিক্ষিকা হতে চায় তাহলে আপনি তাকে বাধা দেবেন। আমি যেটা বলতে চাইছি, সেটা হল কন্যাসন্তানদের নির্দিষ্ট কোনও পেশা বেশ সহজ বলে সেটা নিতে জোর করা উচিৎ হবে না। কন্যাসন্তানদেরও পরিশ্রমসাধ্য কাজ করতে দিন যাতে তারা খুব ভালো অঙ্কের বেতন পায়। তাদের কর্পোরেট ইঁদুর দৌড়ে সামিল হতে দিন। তাদের আরও শক্তিশালী হতে দিন।

(সৌজন্য: মেল টুডে)

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

GEETIKA SASAN BHANDARI GEETIKA SASAN BHANDARI @geetika_sb

The writer is a former deputy editor, India Today Digital.

Comment