ছেলেকে বাড়িতেই পড়াব, কারণ প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া অবধি ওর তথ্য সরকারকে দেব না

ধাক্কা খেলাম নার্সের কথায়, ‘আপনি কি সদ্যজাতকে আধারে নথিভুক্ত করতে চান?’

 |  3-minute read |   22-03-2018
  • Total Shares

বাবা হওয়ার অনুভূতিটা অন্যরকম। কয়েক মাসের সুদীর্ঘ অপেক্ষা। তার সঙ্গে এক চাপা উত্তেজনা। আমার স্ত্রীকে যখন স্ট্রেচারে করে ওটি-তে নিয়ে যাওয়া হল, স্বভাবতই খুব টেনশনে ছিলাম। ঘণ্টাখানেক বাদে নার্স এসে সুসংবাদটি দিয়ে গেলেন।

ঝটকা লাগল নার্সের প্রশ্ন শুনে, "আপনি কি আপনার পুত্র সন্তানকে আধারের জন্য নথিভুক্ত করতে চান।"

বিষয়টি সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ ওই পরিস্থিতিতে নার্সের মুখে প্রশ্ন আমি কেমন জানি কিংতর্ব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লাম। কোনও রকমে বললাম "এখন নয়।" কথা শুনে নার্স চলে গেলেন। বিশ্বাস করুন, প্রশ্নটা এখনও আমার কানে বাজে।

দেশ জুড়ে সদ্যজাতদের নাম আধারে নথিভুক্ত করর একটা হিড়িক পড়ে গেছে। জন্মের ৬ মিনিটের মধ্যে রাজস্থানের একটি কন্যাসন্তানের আধার কার্ড হয়ে গেছে। আমি নিশ্চিত, খুব শীঘ্রই এই রেকর্ডটিও ভেঙে যাবে।

তার মানে পরিস্থিতি কী দাঁড়ালো? দেশের হাসপাতালগুলো শুধুমাত্র পায়ের ছাপ নিয়ে সদ্যজাতর বার্থ সার্টিফিকেট (এর জন্যও বা মায়ের আধার বাধ্যতামূলক) তৈরি করে আর ক্ষান্ত থাকছে না, তারা এখন সদ্যজাতর নাম আধারে নথিভুক্তের জন্য বা-মায়ের উপর রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করছে।

সুপ্রিম কোর্ট মোবাইল ফোন ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধারের সংযোগ প্রক্রিয়ার সরকারি সময়সীমা ৩১ মার্চ থেকে পিছিয়ে দিয়ে বলেছে, যতদিন না আদালত কোনও রায় দিচ্ছে ততদিন সময়সীমা ধার্য করা যাবে না। সত্যি, আমরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছি। কিন্তু আতঙ্ক এখনও কাটেনি। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়েছে। পাকাপাকি ভাবে নয়।

কে বলতে পারে, আমার ছেলে যখন টিকাকরণ করতে যাবে তখন আবার তার আধার নথিভুক্ত করতে বলা হবে না। কয়েক বছরের মধ্যেই স্কুলে ভর্তি হবে সে। তখন স্কুলগুলো নিশ্চয়ই ভর্তির জন্য আধার বাধ্যতামূলক করে দেবে।

আদালতে এই মামলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই একটা প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, সরকারের নজরদারির আওতায় আমার ছেলেকে রাখা উচিত হবে তো? আমি দেশের গণতন্ত্র বা সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে বাধ্য। কিন্তু সরকারের নজরদারি নয়।

আমি এই কথা বলছি কারণ আমি মনে করি শুধুমাত্র নজরদারিতে সুবিধা হবে বলে সরকার জোর করে আমাদের উপর 'আধার' চাপিয়ে দিতে চাইছে। যে ভাবে মোবাইল ফোন, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, শিক্ষা এমনকি বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনার সঙ্গেও আধার সংযোগ করে দেওয়া হচ্ছে তাতে একজনেই ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জনসমক্ষে চলে যাবে। সবাই জেনে যাবে আপনি কে, কী এবং আপনার মনোবাঞ্ছাই বা কী।

এর থেকে আরও একটি আশঙ্কা দানা বাঁধছে। সরকার ইচ্ছে করলেই আপনার আধার বাতিল করে আপনাকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে কোণঠাসা করতে পারবে।

body_032218073206.jpgইচ্ছা করলেই সরকার আপনার আধার বাতিল করে আপনাকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে কোণঠাসা করতে পারবে

শুধুমাত্র জালিয়াতি রক্ষা করাই যদি সরকারের লক্ষ্য হত তাহলে ভোটার কার্ড বা পাসপোর্ট নিয়ে কিছুই করছে না সরকার? কেউ তো আমাকে ভোটার কার্ড বা পাসপোর্ট আধারের সঙ্গে সংযুক্ত করতে বলেনি। এর কারণ ভুয়ো ভোটার সরকারের প্রয়োজন। জাল পাসপোর্টধারীদেরও হয়ত সরকারের প্রয়োজন রয়েছে।

জনগণকে বোকা বানিয়ে যত চটজলদি আধার করিয়ে নেওয়ার সব রকম চেষ্টাই সরকার করে চলেছে। দেখে শুনে মনে হচ্ছে যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ফোনের সঙ্গে আধার সংযোগ না করলে দেশর মাথায় আকাশ বুঝি ভেঙে পড়বে।

শীর্ষ আদালত এখনও আধার সংক্রান্ত মামলাটির রায় ঘোষণা করেনি। তাই বলে ব্যাঙ্ক, মোবাইল ফোন এবং বিমা কোম্পানিগুলো চুপ করে বসে নেই। আদালত সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া সত্বেও তারা সংযুক্তিকরণের জন্য আমাদের পিছনে পড়ে রয়েছে। রেল তো টিকিটের সঙ্গে আধার লিঙ্ক করলে যাত্রীদের লটারি করে পুরস্কার দেবে বলে ঘোষণা করেছে।

যাঁরা আধারকে সামাজিক সুরক্ষার হাতিয়ার বলে মনে করছেন তারা ভুল করছেন। উন্নত দেশগুলোর মতো আমাদের দেশে সামাজিক সুরক্ষা বলে কিছু হয় না, বিশেষ করে বেকার বা স্বাস্থ্য পরিষেবায় আর্থিক সাহায্যের ক্ষেত্রে। উল্টে, যে ভাবে তথ্য চুরি হচ্ছে তাতে আমি যারপরনাই আতঙ্কিত।

গণবণ্টণ ব্যবস্থা সুরক্ষিত করতে এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন তো এই ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী হয়ে পড়েছে যে প্রতিনিয়ত আমাদের এক ঘরে করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে!

আমি ছেলেকে গৃহশিক্ষক রেখে লেখাপড়া করাব। কিন্তু সে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া অবধি ওর সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সরকারের হাতে তুলে দেব না।

আপনার কী মনে হয়, সরকারেরও কি ওর প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে ওঠা অবধি অপেক্ষা করা উচিত নয়?

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PRABUDDHA S JAGADEB PRABUDDHA S JAGADEB @prabuddhaj

The author studied international relations at JNU, and works as a travel writer for an international firm.

Comment