সমাজকর্মীরা গ্রেপ্তার: সুপ্রিম কোর্ট কিছুটা হলেও স্বস্তি দিল পুনে পুলিশকে
মহারাষ্ট্র পুলিশকে এখন সমাজকর্মীদের সঙ্গে মাওবাদীদের যোগসূত্রের প্রমাণ দিতে হবে
- Total Shares
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, মাওবাদী তকমা দিয়ে পুনে পুলিশ যে পাঁচজন সমাজকর্মীর গ্রেপ্তার করেছিল, সেই গ্রেপ্তারির সঙ্গে তাঁদের সরকারের বিরোধিতা করার কোনও সম্পর্ক নেই। মামলাটি চলাকালীন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ সহ্যাদ্রির সরকারি গেস্ট হাউসে একটি বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় পুনে পুলিশকে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিতেই খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
ভারাভারা রাও, সুধা ভরদ্বাজ, গৌতম নভলাখা, ভারনন গঞ্জালভেস ও অরুণ পেরেইরা - এই ছয় সমাজকর্মীকে গ্রেপ্তারের পর বিশ্বজুড়ে সমাজকর্মীরা দাবি তুলেছিলেন যে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে এই ছ'জনকে। সুপ্রিম কোর্টের এই ঘোষণার ফলে এবার পুনে পুলিশ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারল।
গৌতম নভলাখা এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত [ছবি: মেল টুডে]
পুনে পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক মেল টুডেকে জানিয়েছেন যে এবার বিভিন্ন দিক দিয়ে তাঁরা খতিয়ে দেখবেন ঠিক কী কী ভাবে মাওবাদীদের সঙ্গে এই ছয় জনের সম্পর্ক ছিল। আধিকারিকটি জানান, "প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চক্রান্তে আমরা এই ছ'জনকে গ্রেপ্তার করেছি -- এই ধারণাটা একেবারে ভুল। আমরা আরও গভীর বিষয় মনোনিবেশ করতে চাই। দেখতে চাইছি, মাওবাদীদের সঙ্গে বিদেশি যোগসূত্রে এঁরাও কোনও ভাবে যুক্ত আছেন কি না।"
মহারাষ্ট্র রাজ্যপুলিশের মহানির্দেশক (আইনশৃঙ্খলা) পরম বীর সিং দাবি করেছেন যে এই সমাজকর্মীরা ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বামপন্থী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। ভারতে তো বটেই প্যারিস ও মিয়ানমারে এই সংগঠনগুলির সদস্যদের সঙ্গে তাঁরা বেশ কয়েকটি বৈঠকও করেছেন।
পুলিশের কাছে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এটা প্রমাণ করা যে রাও ও নভলাখা সত্যি সত্যিই আট কোটি টাকা খরচ করে ইম-ফোর গ্রেনেড লঞ্চার ও মেশিন গান কিনেছিলেন কিনা। পুলিশকে প্রমাণ করতে হবে যে এই আগ্নেয়াস্ত্রগুলো সত্যি সত্যি কেনা হয়েছিল এবং তা শেষ পর্যন্ত ভারতে পৌছে ছিল। আরও একটি দাবি পুলিশ কে প্রমাণ করতে হবে - ভরদ্বাজ মাওবাদীদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়েছিলেন।
প্রতিবাদ সত্ত্বেও সমাজকর্মীদের এখন গৃহবন্দী হয়েই থাকতে হবে [ছবি: মেল টুডে]
এখনও অবধি পুলিশ অবশ্য প্রমাণ করতে পারেনি যে মাওবাদী কমিউনিস্টদের তরফ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ভীমা-করেগাঁও দাঙ্গার ঠিক আগে, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর, পুনেতে এলগড় পরিষদ অনুষ্ঠিত করা হয়েছিল। মাত্র এক মাসের মধ্যে পুলিশকে এই মামলাটি দাঁড় করাতে হবে। ততদিন এই সমাজকর্মীরা গৃহবন্দি থাকবেন। পুলিশ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তাঁরা গত দু'বছরে ছত্তিশগড়ে যে গেরিলা লড়াইগুলো হয়েছিল তার খবর সংগ্রহ করছে। খবর সংগ্রহের কারণ, পুনে পুলিশের দাবি অনুযায়ী রাও নাকি একবার ছত্তিসগড়ে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধের জন্য মাও ক্যাডারদের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ফড়ণবীশ জানিয়েছেন যে দেশ জুড়ে অশান্তির সৃষ্টি জন্যে সবরকম চক্রান্তের চেষ্টা করে গিয়েছেন অভিযুক্তরা।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "সুপ্রিম কোর্ট ঠিক কথাই বলেছে - যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁরা নিজেদের ইচ্ছা মতো তদন্তকারী সংস্থা বাছতে পারেন না। আমরা এই চক্রান্ত প্রকাশ্যে নিয়ে আসবই। ইতিমধ্যে তদন্তে উঠে এসেছে যে শুধু মাওবাদী নয়, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গেও এঁদের যোগাযোগ রয়েছে।"
(সৌজন্যে: মেল টুডে)
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে