মাদুরাই ডিএমকের শেষ কথা আলাগিরি কি স্ট্যালিনকে নাড়িয়ে দিতে পারবেন

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া, আলাগিরির জীবনে নানান উত্থান পতন ঘটেছে

 |  4-minute read |   31-08-2018
  • Total Shares

প্রতিবছর ৩০শে জুলাইয়ের আগে গোটা মাদুরাই জুড়ে রঙিন পোস্টার ও ব্যানার লক্ষ করা যায়। শহর তার দত্তক পুত্র তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও ডিএমকের বহিস্কৃত নেতা এম কে আলাগিরির জন্মদিন উদযাপনে মেতে ওঠে।ডিএমকের শীর্ষ নেতা করুণানিধি ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী দয়ালু আম্মলের চার সন্তানের জ্যেষ্ঠ পুত্র এই এমকে আলাগিরি। স্বসম্মানে আন্দোলনের পাট্টুকোটাই আজহাগিরিস্বামীর নামকেই অনুসরণ করে করুণানিধি আলাগিরির নাম রেখেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই আজহাগিরিস্বামীর জ্বালাময়ী বক্তৃতা করণানিধির তরুন মনকে প্রভাবিত করেছিল।

৮০ র দশকের ভাই এমকে স্ট্যালিনের সঙ্গে আলাগিরির মতপার্থক্য দেখা দিতেই করুণানিধি আলাগিরিকে মাদুরাইতে পাঠিয়ে দেন। সেখানে তিনি দলের মুখপত্র মুরাসলির দায়িত্ব নেন।

পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী আলাগিরি অবশ্য মাদুরাইতে যেতে নিমরাজি ছিলেন। যদিও তাঁর স্ত্রী কান্থীর বাপের বাড়ির এই মাদুরাইতে। ন'বছরের মধ্যেই আলাগিরি পাকাপাকিভাবে মাদুরাইতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। অচিরেই, তিনি দক্ষিণ তামিলনাড়ুর এক ক্ষমতাশালী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

body_083118062215.jpgআলগিরিকে সাহসী পুরুষ বলে তাঁর সমর্থকরা [ছবি: পিটিআই]

মাদুরাইতে তিনি 'অঞ্জ নেনজন' (একজন সাহসী হৃদয়ের মানুষ) হিসেবে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। দলের মাঝারি ও নিচু স্তরের কর্মীদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। নিজের সেরা সময়, শুধু মাদুরাইতেই নয়, শহর লাগোয়া আরও ১০টির মতো লোকসভা আসনকে তিনি ডিএমকের দুর্গে পরিণত করে ফেলেছিলেন।

মাদুরাইয়ের ডিএমকে ক্যাডারদের কাছে আলাগিরি অনেকটা বড় ভাইয়ের মতো ছিলেন, যাকে সহজেই কাছে পাওয়া যায়। দলের কর্মীদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে তাঁকে সর্বদাই দেখা যেত এবং অঞ্চলের গরিবদের সাহায্য করতে তিনি সবসময় উদ্যত। যদিও আলাগিরির নিন্দুকেরা বলেন যে মাসেল পাওয়ারকে কাজে লাগিয়েই এতটা প্রভাব বিস্তার করেছেন আলাগিরি। আলগিরি নাকি মাদুরাইয়ের ব্যবসা বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং তাঁর অনুগামীরা নাকি রীতিমতন হুমকি দিয়ে ও গায়ের জোরে ব্যবসায়ীদের কাছে তোলা আদায় করতেন।

স্ট্যালিনের মতো আলাগিরিকে কখনই রাজনীতির উপাযোগী করে তৈরি করেননি করুণানিধি। এই শতাব্দীর প্রথম দশকের শেষের দিক অবধি আলগিরিকে দলের কোনও পদ দেওয়া হয়নি।

দুই ভাইয়ের মধ্যে ভাব ভালোবাসাও খুব বেশি নেই। অনেকের সময়তেই, দলে স্ট্যালিনকে তাঁর চাইতে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার জন্যে আলগিরি দলের নের্তৃত্বকে দুষেছেন। ২০০১ সালে দুই ভাইয়ের মধ্যে মতো বিরোধ যখন চরমে পৌছায়ে তখন আলাগিরিকে প্রথমবারের জন্যে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। ক্ষোভে ফেটে পড়ে সে বছর বিধানসভা নির্বাচনে ডিএমকের জয়ের সম্ভাবনা নির্মূল করে দেন আলাগিরি। বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাঁড় করিয়ে ডিএমকে বহু নেতার নিশ্চিত জয় রুখতে সফল হন আলগিরি।

body1_083118062357.jpgস্ট্যালিনের মতো আলাগিরিকে কখনই রাজনীতির উপাযোগী করে তৈরি করেননি করুণানিধি [ছবি: পিটিআই]

২০০৩ সালে আলগিরির বিরুদ্ধে স্ট্যালিনের কট্টর অনুগামী তথা ডিএমকে নেতা টি কৃত্তিনুনের খুন করার অভিযোগ দায়ের করা হয়। যদিও ২০০৮ সালে সেই মামলা থেকে আলাগিরি বেকসুর খালাস হয়।

দুই ভাইয়ের শত্রুতার জেরে তিনজনের প্রাণও গিয়েছিল। দিনাকরণ নামের একটি আঞ্চলিক সংবাদপত্রে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করে জানানো হয়েছিল যে মাত্র ২ শতাংশ লোক আলাগিরিকে ডিএমকে-তে করুণানিধির উত্তরসূরি হিসেবে দেখতে চায়। এর পরেই সেই সংবাদপত্র দপ্তরে আগুন লাগিয়ে দেয় আলাগিরির অনুগামীরা। সেই ঘটনাতেই তিনজনের মৃত্যু হয়।

বিভিন্ন সন্দেহজনক পদ্ধতিতে লক্ষপূরণের আরও অনেক উদহারণ আলগিরির রয়েছে।

দক্ষিণ তামিলনাড়ুর বরাবরই এআইএডিএমকে-র শক্ত ঘাঁটি। জোর খাটিয়ে ও সালিশি সভা কায়েম করে সেই অঞ্চলকে ডিএমকে-র দুর্গে পরিণত করে ছিলেন আলাগিরি। ২০০৯ সালের থিরুমঙ্গলম উপনির্বাচনে 'ভোটের বদলে ক্যাশ' প্রথা চালু করেছিলেন আলগিরি। এই প্রথা কিন্তু অচিরেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

body2.jpg-copy_083118062526.jpgকরুণানিধির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে আলাগিরি, স্ট্যালিন ও কানিমোজহি [ছবি: পিটিআই]

তাঁর এই অবদানের জন্যে আলগিরিকে দক্ষিণাঞ্চলের সাংগঠনিক সম্পাদক করে দেওয়া হয়। এর ফলে দক্ষিণ তামিলনাড়ুতে তিনিই ডিএমকে-র অবিসংবাদী নেতার শিরোপা পেয়ে গেলেন। একই সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে প্রচুর ব্যবধানে জয়লাভ করে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের তিনি ক্যাবিনেট মন্ত্রীও হয়ে গেলেন।

সাংসদ হিসেবে আলাগিরির রেকর্ড খুব একটা উল্লেখ করার মতো নয়। সংসদে নিয়মিতভাবে অনুপস্থিত থাকতেন তিনি। তৎকালীন অধ্যক্ষ মীরা কুমার তাঁর সাংসদপদ খারিজ করে দেবেন বলে সতর্ক করেছিলেন। আলগিরি জানিয়েছিলেন যে তিনি ঠিক মতো ইংরেজি বলতে বা বুঝতে পারেন না বলে সংসদে অনুপস্থিত থাকেন। ২০১৩ সালে ডিএমকে ইউপিএ সরকার থেকে বেরিয়ে আসার পর আলগিরি মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেন।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ডিএমকে আবার আলগিরিকে দল থেকে বহিস্কার করেন। তার বিরুদ্ধে দল-বিরোধী কার্যকলাপ ও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সমালোচনার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর পর থেকেই এক প্রকার রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিয়ে নেন আলগিরি। মাঝে মাঝে, শুধু দল ও ভাই স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে বিষেদাগার করতে দেখা যেত তাঁকে।

করুণানিধির শেষ যাত্রায় এক ক্লান্ত আলগিরিকে পিছনে সারিতে বসে থাকতে দেখা গেল। এর পরে বোন কানিমোজহির আবদারে তিনি স্ট্যালিনের পাশে এসে দাঁড়ালেন। দুঃখের সময় ডিএমকে 'ফার্স্ট ফ্যামিলির' একতার ছবি ফুটে উঠল। কিন্তু সেই একতা বেশিদিন বিরাজ করেনি।

তিনদিনের মধ্যেই ডিএমকের কার্যনির্বাহী সভার বৈঠকের ঠিক আগে আবার রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন আলগিরি। তিনি স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ঘোষণা করে জানিয়ে দেন যে করুণানিধির কট্টর অনুগামীরা তাঁর সঙ্গেই রয়েছে। এবং তাঁকে দলে ফিরিয়ে না নিলে ডিএমকে-কে ফল ভুগতে হবে বলে তিনি হুমকি দেন।

এখনও অবধি ডিএমকে আলগিরির হুমকিতে কর্নপাত করেনি। ৫ই সেপ্টপম্বর আলগিরি বিরাট জনসভার কথা ঘোষণা করেছেন। এই জনসভার উপস্থিতির হার প্রমান করে দেবে যে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে আলগিরি এখন ঠিক কতটা প্রাসঙ্গিক।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

LOKPRIA VASUDEVAN LOKPRIA VASUDEVAN @lokpria

Principal Correspondent with India Today TV.

Comment