অমিত শাহ চান অর্ধেক আসন, নেতারা সায় দিয়েছেন। কী ভাবে হবে সেই উত্তর কোথায়?

লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে সেখানে পৌঁছানোর উপায় বলেছেন, বাস্তবতা বিচার করেছেন কি?

 |  4-minute read |   29-06-2018
  • Total Shares

এলেন, দেখলেন...

জয় করতে পারলেন কি?

বিজেপি সর্বভারতীয় প্রেসিডেন্ট আসছেন এ রাজ্যে। তাই বিজেপির মধ্যে সাজ সাজ রব থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাঁর ইচ্ছা এ রাজ্যের বিশিষ্টজনের সঙ্গে কথা বলবেন। সে জন্য রাজ্যের প্রথম সারির নেতারা হাজির হয়েছেন তাবড় বিশিষ্টদের কাছে। সেখানেও গোলমাল। কোনও নেতা স্বীকার না করলেও, সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, রাহুল সিনহা যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েছিলেন, তাতে চটেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি নাকি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে সময় চেয়েছিলেন। তার আগেই তাঁর কাছে হাজির রাহুল।

রাজ্যে এলেন অমিত শাহ। শুনলেন, বললেন। দেখলেন কী?

বীরভূমে বিজেপির ব্যাপক গণ্ডগোল দেখলেন। এমন গণ্ডগোল যে সর্বভারতীয় সভাপতির সভা ভেস্তে যায় যায়। বীরভূমের কোন্দলের কথা থাক। দেখা যাক দলের উপর মহলের অবস্থা এখন কেমন। দলের ভিতরে গুঞ্জন, উপর মহলে খুব শীঘ্রই রদবদল হতে চলেছে, এবং সেটা খুব সম্ভবত জুলাইয়ে। সেই গুঞ্জন এখন বিজেপিকে তিনটি শিবিরে ভাগ করেছে। দিলীপ শিবির, রাহুল শিবির এবং অবশ্যই মুকুল শিবির।

দলে বদল হচ্ছেই, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। তা সত্ত্বেও রাজ্য সভাপতি পদে দিলীপ ঘোষের পরে কে হবেন, তা নিয়ে গুঞ্জন। সামনে যাই বলুন, দলের লোকজন মনে করেন, বিজেপি রাজ্য সভাপতিকে গুরুত্ব দেন না দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা মুকুল রায়। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল রায় এখনও কোনও পদে নেই, তবে তিনি দক্ষ সংগঠক। “বিজেপি করার অপরাধে” যে ত্রিলোচন মাহাতোকে হত্যা (তাঁর টি-শার্টের পিছনে লেখা বার্তা সেই কথাই বলছে)করা হয়েছে, তাঁর বাড়ির লোকজন এখন রয়েছে মুকুল রায়ের তত্ত্বাবধানে। আর রাহুল সিনহা এখন বিশিষ্টদদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন।

অমিত শাহ বললেন, অর্ধেক আসন চাই।  কিন্তু আসবে কী ভাবে? খুব সহজ উপায়। প্রতিটি বুথে দশ জনের কমিটি গড়ে দাও, তারা লোকের কাছে পৌঁছে যাবে, বিজেপির ভালো কাজ সম্বন্ধে বলবে।

দারুণ প্রস্তাব। এমন প্রস্তাব সফল হলে এ রাজ্যে ৪২টির মধ্যে ২১-২২ কেন, ৩২টি আসন চলে আসতে পারে বিজেপির ঝুলিতে। তবে দলের এক রাজ্যে স্তরের নেতা হাসতে হাসতে বললেন, “প্রতি বুথে দশ করে নিয়ে যদি কমিটি গড়তে পারতাম তা হলে তো ভোট নিয়ে চিন্তাই থাকত না! আমাদের অত লোক আছে নাকি!” তবে সাহস করে সে কথা অমিত শাহকে কেউ বলে উঠতে পেরেছেন, এমন কথা শোনা যায়নি। দলের রাজ্যনেতারা বাধ্য ছেলের মতো ঘাড় নেড়েছেন। অমিত শাহ তো আর রাজা ক্যানিউট নন যে বৈতালদের পাল্টা প্রশ্ন করে বসবেন!

body1_062918073751.jpgমহাজাতি সদনে অমিত শাহ, প্রথম বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতায়

বিজেপি চাইছে দলে বেশ কয়েকটি পরিচিত মুখ আসুক, যাদের কথা লোকে শুনবে। হিন্দুত্ব নিয়ে ছুৎমার্গ কার কতটা আছে বলা মুশকিল, কিন্তু এ রাজ্যে অনেকেই বিজেপিকে “অবাঙালি দল” বলে মনে করে। দলের আইকন হিসাবে যতই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় থাকুন না কেন, কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার সময় ২০০১ সালে শ্যামাপ্রসাদের জন্মশতবর্ষে বিজেপি যতই তাঁকে সম্মান জানাক না কেন, এখনও এ রাজ্যে বিজেপি সেই সব জায়গা থেকেই বেশি ভোট পায় যেখানে অবাঙালি নির্বাচকের সংখ্যা বেশি।

এখনও বিজেপি নেতারা নিজেদের কারয়োকর্তা, প্রচারক, প্রভৃতি বিশেষণে বিশেষিত করেন, যে সব শব্দে সঙ্গে বাংলার নাড়ির যোগ নেই। অমিত শাহ নির্দেশ দিয়েছেন জেলায় গিয়ে প্রবাস করতে হবে। প্রবাস করা কী? এই সব শব্দ ব্যবহার করে গ্রামের মানুষজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর সাফল্য বর্ণনা করা যাবে? তাঁরা এখন বাংলা-যোগ খুঁজতে মরিয়া, কিন্তু এই সব কঠিন আধা-সংস্কৃত হিন্দি শব্দ ব্যবহার করে তাঁরা কী ভাবে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছবেন?

তৃণমূল কংগ্রেস ঠিক করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও সক্রিয় হবে। তারা প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্র ধরে এখন ফেসবুক পেজ খুলছে। এক ধাপ এগিয়ে বিজেপি বুথ-স্তর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসতে চাইছে। সকলের কাছে পৌঁছে যাওয়ার জন্য বাইক দেওয়া হচ্ছে। ২০১১ সালের ভোটের আগে রাজ্যে যে ভাবে বাইকবাহিনীকে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল, আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগেও কি তেমনই দেখা যাবে? সে জন্যই কি এখন থেকেই বাইক আসতে শুরু করে দিল বিজেপির হাতে?  ভোটের ময়দানে লড়াই কি তা হলে এখন সময়ের অপেক্ষা? এ রাজ্যে যুদ্ধের শাঁখ বাজিয়ে দিলেন অমিত শাহ?

এখন বিজেপি দলীয় স্তরে যেগুলিকে জেলা বলে মনে করে, সেগুলিকে খণ্ড করে দিয়ে ছোট ছোট এলাকা ভাগ করে দিয়ে তার দায়িত্বে একজন করে রাখার চেষ্টা করছে, যাতে এলাকা ধরে ধরে লোকের কাছে গিয়ে দলের কথা বলা যায়। পাড়ায় পাড়ায় জনমত তৈরি করা যায়। কিন্তু রাজ্যের শাসকদল পঞ্চায়েত ভোটের অনেক আগে থেকে সেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। যতক্ষণে বিজেপি জাগবে, ততক্ষণে রাজ্যের শাসকদল অনেকটা এগিয়ে যাবে।

body_062918073833.jpgতারাপীঠ মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন অমিত শাহ

দেশে বেশির ভাগ রাজ্যেই ক্ষমতায় আছে বিজেপি বা তার জোট সরকার। বেশির ভাগ রাজ্যেই আসন বাড়ার জায়গা নেই, উল্টে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়ায় আসন কমার আশঙ্কাই বেশি করে করছে বিজেপি। তাই তাদের লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ, যাতে অন্য রাজ্য থেকে যে আসন কমবে, তার বড় অংশের অভাব তারা পূরণ করে নেবে এই রাজ্য থেকে। এ জন্য তারা উত্তরবঙ্গ ও রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলকে পাখির চোখ করছে।

ইতিমধ্যে রাজ্যের কয়েকজন তৃণমূল নেতাকে তারা বিজেপিতে যোগ দিইয়েছে। কিন্তু সেই যোগ দেওয়ানোর ফলে তৃণমূলের ততটাই ক্ষতি হয়েছে, সাগর থেকে এক গণ্ডূষ জল তুলে নিলে যতটা ক্ষতি হয়। অন্তত এক বছর ধরে তৃণমূলের বড় মাপের কয়েকজন নেতার সঙ্গে তারা কথাবার্তা বলে চলেছে। তারা যে বিজেপিতে যোগ দিতে অরাজি তেমন নয়, তবে তাদের যোগ দেওয়াতে গেলে লোকসভা ভোটে বিজেপিকে ভালো ফল করতেই হবে। সিপিএম-কংগ্রেসের ভোট ভেঙে দ্বিতীয় হলে তৃণমূল থেকে ভাঙানো যাবে না, তৃণমূলের নেতাদের দলে যোগ দেওয়াতে গেলে তৃণমূলের ভোট নিজেদের দিকে টানতে হবে বিজেপিকে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment