ধর্মঘট ব্যর্থ করতে সরকারকে বেগ পেতে হয়নি, সাধারণ মানুষই তা করে দেখিয়েছে
রক্তপাত না ঘটিয়ে বিজেপি কোথাও কোনও দিনই ক্ষমতা দখল করতে পারেনি
- Total Shares
ইসলামপুরে যে ঘটনাটা ঘটেছে সে ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।
কিন্তু এই ঘটনার পিছনের মূল কারণটি আমাদের বুঝতে হবে। যে মুহূর্ত থেকে অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন যে বিজেপি এবার উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো ও বাংলাকে পাখির চোখ দেখছে সেই মুহূর্ত থেকে রাজ্যের বিজেপি সদস্য সমর্থকরা এ রাজ্যে নানান আছিলায় ঝামেলা বা দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি করবার চেষ্টা করে চলেছেন।
মোদী-শাহরা বাংলা দখলের কথা ঘোষণা করতেই বিজেপি এই রাজ্যে দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে [ছবি: পিটিআই]
ইসলামপুরেও তার অন্যথা হয়নি। এখনও পর্যন্ত খবরের প্রকাশ, বাইরে থেকে মুখ ঢাকা লোক এসে গুলি চালিয়েছিল। আর সেই গুলিতে প্রাণ গেল দু'দুটি তরতাজা তরুণের। এবার এই ঘটনাটিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি। কারণ, এই ধরণের ঘটনা থেকে বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে সিদ্ধহস্ত।
শুধু আজ নয়, শুধু পশ্চিমবঙ্গেও নয়, অতীতে গোটা দেশ জুড়েই আমরা এই ধরণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। গুজরাটে দাঙ্গা লাগিয়ে ছিল বিজেপি। তারপর সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে ফায়দা তুলে এখনও অবধি সেই রাজ্যে সরকার দখল করে আছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশেও আসন সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কয়েকটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় দাঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল বিজেপি। আর, সেখানেও বড় ব্যবধানে জিতে ক্ষমতায় এসেছেন যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি।
গুজরাটেও দাঙ্গা লাগিয়ে এখনও অবধি সরকারে রয়ে গেল বিজেপি [ছবি: পিটিআই]
এখানেও (পড়ুন পশ্চিমবঙ্গে) বহুবার দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করেছে বিজেপি, এখনও করছে। পুরুলিয়াতেও দু'জনকে গাছে বেঁধে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশি তদন্ত এখনও চলছে। কিন্তু তদন্তে যদি জানা যায় যে এই ঘটনার জন্যে বিজেপি দায়ী তাহলে আমি অন্তত অবাক হব না। আসলে গেরুয়া শিবিরের সংস্কৃতিটাই এরকম। ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে, রক্তপাত না ঘটিয়ে তারা কোনও দিনই ক্ষমতা দখল করতে পারেনি।
একে তো দাঙ্গা লাগিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা। তার উপর আবার ধর্মঘট ডেকে পরিস্থিতি আরও জটিল করার প্রচেষ্টা। আজকের এই ধর্মঘটের প্ৰয়োজনীয়তা ঠিক কী ছিল তা আমার মাথায় ঢোকেনি। সত্যি কথা বলতে, যে কোনও ধরণের ধর্মঘটের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই আমার মনে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।
ইসলামপুরের ঘটনায় রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি বিজেপি [ছবি: পিটিআই]
বামফ্রন্ট সরকারের আমলে আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকটি ধর্মঘট ডেকেছিলেন। কিন্তু তিনি আজ নিজে স্বীকার করেন যে ধর্মঘট দিয়ে কোনও কাজের কাজ হয় না। সব চেয়ে বড় কথা ২০১৮ সালে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষও 'কর্মনাশা' বনধের বিরুদ্ধে।
সরকার আগে থেকেই বিজেপির এই ধর্মঘটের বিরোধিতা করে আসছিল। তবে, ধর্মঘটের দিন সরকারকে তা ব্যর্থ করতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। রাজ্যের সাধারণ মানুষই বিজেপির ডাকা এই ১২ ঘণ্টার ধর্মঘট ব্যর্থ করেছেন।
জানতে ইচ্ছে করে, এর পরেও কি নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহরা পশ্চিমবঙ্গকে পাখির চোখ দেখবেন?

