হাসিনা সরকার নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বললেও মৌলবাদীরা সবচেয়ে বেশি আশ্রয় পেয়েছে এই আমলেই
প্রতিটি নির্বাচনই হিন্দুদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে বার বার ফিরে এসেছে, এবারও ব্যতিক্রম নয়
- Total Shares
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে দেশটির হিন্দু সম্প্রদায় ততই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের সময় থেকে এ ভূখণ্ডের হিন্দু সম্প্রদায় নির্যাতিত নিপীড়িত হয়, অন্তত এক কোটি ৬০ লক্ষ হিন্দু উদ্বাস্তু হয়। সমস্ত হিন্দুদের জমিদারী কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর সংসদে ৭২টি সংরক্ষিত আসন থাকলেও সুকৌশলে তা কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর ১৯৬৪ সালের দাঙ্গায় কার্যতঃ হিন্দুশূন্য হয়ে পড়ে এই অঞ্চল। হিন্দুরা বিতাড়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি আইনের ফাঁদে অধিগ্রহণ করে নেওয়া হয়।
এরপর ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্রায় ১ কোটি হিন্দু দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। দীর্ঘ ৯ মাস একটি ছোট্ট তাঁবুর নীচে থেকে সহায় সম্বল হারিয়ে দেশে ফিরে এসে দেখেন তাদের সম্পত্তি শত্রু থেকে অর্পিত সম্পত্তি হয়ে গেছে। রমণাকালী মন্দির-সহ হাজার হাজার মন্দির ধ্বংস করা হয়। এরপর রাম মন্দির বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে এবং বর্তমান সরকারের ১০ বছরের মধ্যে ধর্ম অবমাননা, ভোট দেওয়া না দেওয়াকে কেন্দ্র করে সারা দেশে হিন্দুদের উপর ব্যাপক নির্যাতন নিপীড়ন হয়। এ ছাড়া মঠ মন্দির ভাঙচুর, পুরোহিতদের গলা কেটে হত্যায় দেশের হিন্দু সম্প্রদায় চরম আতঙ্কে দিন যাপন করছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, কোনও ঘটনারই কোনও বিচার হয়নি, মঠ-মন্দির-প্রতিমা ভাঙচুর, পুরোহিতদের গলা কেটে হত্যার জন্য কারও কোনও শাস্তি বিধান হয়নি।
তোমার পতাকা যারে দাও: বাংলাদেশ এখন হিন্দুদের কাছে কঠিন ঠাঁই [ছবি: রয়টার্স]
১৯৪৭ সাল থেকে (প্রথমে পূর্বপাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশ) হিন্দু জনগোষ্ঠীর দেশত্যাগ অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান জাতীয় সংসদে বেশ কয়েকজন হিন্দু প্রতিনিধি থাকলেও সেই সমস্ত সাংসদ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ হয়েছে। যে কারণে ঐ সকল তথাকথিত হিন্দু নেতৃবৃন্দের প্রতি সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনও সমর্থন নেই। গত দশ বছরে হাজার হাজার হিন্দুর বাড়ি-ঘর-মঠ-মন্দিরে হামলা হলেও তার কোনও বিচার হয় নি। কাউকে শাস্তি বিধান করা হয়নি।
বর্তমান সরকার নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক প্রচার করলেও, তারাই সবচেয়ে বেশি মৌলবাদীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছে। ওলামা লীগ নামে চরম মৌলবাদী হিন্দু বিদ্বেষী গোষ্ঠীকে এই সরকার ব্যপক সহযোগিতা করেছে। হেফাজতে ইসলাম নামে একটি গোষ্ঠীকে খুশি করতে পাঠ্যপুস্তকের ইসলামিকরণ করেছে এই সরকার। গত নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বাতিল করে ১৯৭২-এর সংবিধান ফেরৎ আনার অঙ্গীকার করলেও সরকার তা করেনি। বরং নবী কোরান অবমাননার মিথ্যা অজুহাতে শত শত হিন্দু বাড়ি-ঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে, মিথ্যা মামলায় শত শত যুবক এখন জেল হাজতে। অতীতে প্রত্যেকটি নির্বাচনের আগে ও পরে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন হয়েছে।
প্রতিটি নির্বাচনেই আতঙ্কে দিন কাটান বাংলাদেশের হিন্দুরা [ছবি: পিটিআই]
প্রতিটি নির্বাচনই এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে বার বার ফিরে এসেছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই হিন্দু সম্প্রদায় আতঙ্কে ভুগছে। বর্তমান জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও হিন্দু সম্প্রদায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। হিন্দু সম্প্রদায় এখন মানসিকভাবে খুবই হতাশাগ্রস্ত। ২৩টি সক্রিয় হিন্দু ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠণের সমন্বয়ে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট দেশের ৬৪টি জেলার প্রায় সকল উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন এর মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সারা দেশে ৫ লক্ষাধিক সক্রিয় সদস্য ও অগনিত শুভানুধ্যায়ী ও সমর্থক রয়েছে।
উপরোক্ত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মতামত সংগ্রহ করে নিমোক্ত প্রস্তাব উপস্থাপন করছে।
১. জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃ প্রবর্তন। ২. একটি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ৩. সংখ্যালঘু বিষয়ক কমিশন প্রতিষ্ঠা
উপরোক্ত দাবি-সমূহ যে দল বা জোট বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার করবে এবং নির্বাচনী ইস্তেহারে প্রকাশ করবে হিন্দু সম্প্রদায় সেই দল বা জোটকে ভোট দেবে। যদি কোনও দল বা জোট উপরোক্ত দাবী না মানে তা হলে হিন্দু সম্প্রদায় ভোট বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

