কেন জম্মু ও কাশ্মীরে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে
সরকারের অনুপুস্থিতিতে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হবে যার প্রভাব পড়বে গণতন্ত্রের উপর
- Total Shares
নীতির দিক দিয়ে দুই ভিন্ন মেরুতে চলা দুটি দলের নাম বিজেপি ও পিডিপি। জম্মু ও কাশ্মীরে এই দুটি দল একজোট হয়ে সরকার গঠন করেছিল। সরকার গঠনের তিন বছরের পর অবশেষে সেই জোট সরকার ভেঙে পড়ল।
বিজেপি সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেছেন। এই ভাঙনের পরেই রাজ্যে রাজ্যপাল শাসন শুরু হয়েছে।
২০১৪ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের ৮৭টি বিধানসভা আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি, ২৮টি, আসন দখল করে পিডিপি। ২৫টি আসনে জয়লাভ করে দ্বিতীয় স্থান পায়ে বিজেপি। ন্যাশনাল কংগ্রেস ও কংগ্রেস যথাক্রমে ১৫টি ও ১২টি আসন দখল করেছিলে এবং অন্যান্যদের দখলে যায় বাকি সাতটি আসন।
২০১৫ তে পিডিপি ও বিজেপি একজোট হয়ে সরকার গঠন করে। কিন্তু দু'টি দলের মধ্যে নীতিগত ফারাক এতটাই যে শুরুর দিন থেকেই দুটি দলের মধ্যে পারস্পরিক কলহ দানা বাঁধতে শুরু করে। পিডিপি যেখানে উপত্যকা থেকে উঠে আসা আঞ্চলিক দল, বিজেপি সেখানে একটি সর্বভারতীয় দল যারা নিজেদের হিন্দুত্বের প্রতীক বলে সম্বোধন করে থাকে।
মৌলবাদীদের সঙ্গে আলোচনা, এফএসপিএ বর্জন করা, কাঠুয়া ধর্ষণ কান্ডের যথাচিত তদন্ত, সোফিয়ানে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণ বা কেন্দ্রীয় সরকারের জিএসটি প্রকল্প রূপায়ণ - এই ধরণের নানান স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে পিডিপির প্রতিশ্রুতি বুঝিয়ে দিয়েছিল যে এই ভাঙ্গন অবশ্যম্ভাবী।
বাজপেয়ী সরকারের 'কাশ্মীর নীতি' প্রয়োগ করলে কাশ্মীরে শান্তি বিরাজ করত
পিডিপির সঙ্গে বিজেপির জোট বাধা কিন্তু যুক্তিপূর্ন। এই সিদ্ধান্ত একেবারেই ঠিক এবং দূরদর্শী। বিজেপির কাছে উপত্যকার ভেঙে যাওয়ায় বিশ্বাসকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসার এটি একটি বড় সুযোগ ছিল।কিন্তু সেই লক্ষ পূরণ করা গেল না।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার যদি অটল বিহারি বাজপেয়ী সরকারের 'কাশ্মীর নীতি' প্রয়োগ করত তাহলে কাশ্মীরে শান্তি বিরাজ করত।
কিন্তু গত তিন বছর ধরে দুই শরিক বিজেপি ও পিডিপির মধ্যে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বিরোধ লক্ষ করা গেল। এর ফলে স্বাভাবিক ভাবে প্রশাসনিক কাজকর্ম ব্যর্থ হল। জঙ্গি ও মৌলবাদীদের সাহস এবং রাজ্য জুড়ে সন্ত্রাস উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেল।
শরিকের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্নের প্রথম পদক্ষেপটি বিজেপি নিল। কিন্তু এই সিধান্ত থেকে বিজেপি কতটা লাভবান হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে, এই পদক্ষেপের ফলে পিডিপি হয়ত রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে পিডিপি বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার করবে যে দল হিসেবে বিজেপি 'শরিকি ধর্ম' পালন করেনি এবং রাজ্যবাসীদের ধর্তব্যের মধ্যেই আনেনি।
আগামী কয়েকদিন এই রাজ্যে রাজ্যপাল শাসন চলবে। এর ফলে রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দেবে এবং গণতন্ত্র মার খাবে।
তাই এই মুহূর্তে কাশ্মীরে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে।