সজ্জন কুমারকে নিয়ে রায়ে আদালতের মতামত কী ভাবে এড়িয়ে গেল বিজেপি

ভারতে এমন আইন দরকার যাতে উস্কানি দেওয়া থেকে লোকজন বিরত থাকতে পারে

 |  4-minute read |   20-12-2018
  • Total Shares

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যার পরে যে হিংসাত্মক প্রতিশোধ শুরু হয়েছিল, সেই ঘটনার ৩৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ সজ্জন কুমারকে হত্যা করানোর জন্য অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে আজীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। শিখবিরোধী দাঙ্গার ৩৪ বছর পরে হয়তো তার রায় প্রদান করা হল, তা থেকে অন্তত একটা কথা বলা যেতে পারে যে হয়তো বিচারে অনেকটা দেরি হয়েছে, তবে অবশ্যই বিচার দিতে অস্বীকার করা হয়নি।

বিজেপি, বামদলগুলি এবং আম আদমি পার্টি (আপ) এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। অন্য দিকে কংগ্রেস বলেছে যে এই রায়ের রাজনীতিকরণ উচিত নয়, দলের মুখপাত্র এই ঘটনার পাল্টা হিসাবে ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে তার দায় বিজেপির উপরে আরোপ করেছে।

বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি এই রায় প্রসঙ্গে বলেছেন, “এই দোষীসাব্যস্ত করা হল দীর্ঘায়িত বিচার প্রক্রিয়ার নজির।” টুইটবার্তায় তিনি বলেছেন, “১৯৮৪ সালের দাঙ্গার বিচারকে কংগ্রেস কবরে পাঠিয়ে দিয়েছিল। এনডিএ স্বচ্ছতা ও দায়ভার নতুন করে স্থাপন করেছে... কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবার ১৯৮৪ সালের দাঙ্গার উত্তরাধিকার বহন করে যাবে এবং সে জন্য মূল্য দিয়ে যাবে।”

jaitley4_12181807405_122018085327.jpgঅর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এখন সজ্জন কুমার মামলায় মোদীর জয়গান গাইছেন (ছবি: পিটিআই)

বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, ওই দাঙ্গায় কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে কারও মনেই কোনও সংশয় ছিল না। তিনি আবার টুইট করে বলেছেন, “ওই দলের নেতারা এবং কর্মীরা প্ররোচনামূলক স্লোগান দিতে দিতে উন্মত্তের মতো যাচ্ছিন, ঠান্ডা মাথায় পুরুষদের হত্যা করছিল এবং নারীদের ধর্ষণ করছিল। তারপরে বেশ কয়েকটি কমিশন বসার পরে এবং অসংখ্য প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য সত্ত্বেও কারও কোনও সাদা হয়নি।”

রায়কে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে স্বাগত জানিয়েছেন অমিত শাহ। তাঁর কথায়, “২০১৫ সালে বিশেষ তদন্ত কমিটি (এসআইটি) বসিয়েছিলেন, যারা কয়েক দশক ধরে ঝুলে থাকা ১৯৮৪ সালের বিভিন্ন মামলা পুনর্তদন্ত করেছে।”

তবে এই রায় নিয়ে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে দেশের আইনজীবীদের মধ্যে উজ্জ্বল নক্ষত্র অরুণ জেটলি এবং তাঁর দলের সভাপতি অমিত শাহ আসল রায়টিই পড়তে ভুলে গেছেন।

দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলিধর ও বিচারপতি বিনোদ গোয়েলের রায়ের ১৯২ ও ১৯৩ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, “দেশভাগের সময় পঞ্জাব দিল্লি বা দেশের অন্য যে কোনও জায়গায় হত্যার যে গভীর বেদনাদায়ক স্মৃতি রয়েছে, ১৯৮৪ সালে নিষ্পাপ শিখদের হত্যার স্মৃতিও তেমনই। এই রকম একই ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে আরও অনেক জায়গায় তার মধ্যে কয়েকটি হল ১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ে, ২০০২ সালে গুজরাটে, ২০০৮ সালে ওড়িশার কন্ধমালে, ২০১৩ সালে উত্তরপ্রদেশে।” এই সধরনের গণঅপরাধের লক্ষ্য ছিল সংখ্যালঘুরা এবং এই ধরনের হামলা ঘটেছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে যেখানে একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের মদত ছিল। যে সব অপরাধীরা গণঅপরাধে যুক্ত ছিল তারা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা উপভোগ করেছে এবং বিচার ও শাস্তি এড়িয়ে যেতে সফল হয়েছে।”

shah-modi1-copy_1218_122018085443.jpgদিল্লি হাইকোর্টের রায়ে ২০০২ সালের গণহত্যাকেও রাজনৈতিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (ছবি: পিটিআই)

এই রায়ে দেশের বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যার মধ্যে ২০০২ সালের গুজকরাট দাঙ্গার কথাও রয়েছে। এবং অন্য সব জায়গার মতো এখানেও বলা হয়েছে যে হামলার শিকার ছিল সংখ্যালঘুরা এবং তাতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা।

এই সধরনের গণঅপরাধের লক্ষ্য ছিল সংখ্যালঘুরা এবং এই ধরনের হামলা ঘটেছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে যেখানে একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের মদত ছিল। যে সব অপরাধীরা গণঅপরাধে যুক্ত ছিল তারা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা উপভোগ করেছে এবং বিচার ও শাস্তি এড়িয়ে যেতে সফল হয়েছে।

এই রায়ে দেশের বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যার মধ্যে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার কথাও রয়েছে। এবং অন্য সব জায়গার মতো এখানেও বলা হয়েছে যে অপরাধের লক্ষ্য ছিল সংখ্যালঘুরা এবং তাতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা যেখানে একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের মদত ছিল। যে সব অপরাধীরা গণঅপরাধে যুক্ত ছিল তারা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা উপভোগ করেছে এবং বিচার ও শাস্তি এড়িয়ে যেতে সফল হয়েছে।

এবং এই ঘটনা ঘটেছিল সেই ২০০২ সালে যখন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এবং এবং অমিত শাহ ছিলেন বিজেপির কোঅপারেটিভ কমিটির জাতীয় আহ্বায়ক। যেটা আরও বেদনাদায়কর তা হল গুজরাট দাঙ্গার কয়েকমাস পরে অমিত শাহ গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন, যার অর্থ গুজরাটের পুলিশ দফতরের দায়িত্ব পেয়ে যাওয়া।

sc-supreme-court-cop_122018085517.jpgবিচারব্যবস্থা চাইছে অপরাধ আইনে এমন বদল করা হোক যাতে যারা দাঙ্গার জন্য দায়ী তাদের শাস্তি দেওয়া যায়। আমাদের রাজনীতিকরা কি শুনবেন? (ছবি: পিটিআই)

বিচারপতি এস মুরলিধর এবং বিচারপতি বিনোদ গোয়েল তাঁদের রায়ে বলেছেন, যাতে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ এবং ‘গণহত্যা’র জন্য পৃথক ভাবে ফৌজদারী আইনের পরিবর্তন করা হয়। তাঁরা বলেছেন এই ছিদ্র গলেই অভিযুক্তরা গণঅপরাধ করে আইনের হাত থেকে নিস্তার পেয়ে যায়। বর্তমানে যাঁরা আইনপ্রণেতার ভূমিকার রয়েছেন এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলি কি মহামান্য বিচারপতিদের কথা মেনে আইন আনবেন যাতে এই দেশে উস্কানি দিয়ে যারা দাঙ্গা বাধায় তারা বিরত থাকতে পারে?

এটা তখনই সম্ভব হবে যখন কোনও প্রশ্নাতীত সৎ রাজনৈতিক নেতা এই ব্যাপারে নেতৃত্ব দেবেন। সম্পূর্ণ সহমতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে আসতে হবে – যে ওই প্রথম পাথরটি ছুড়বে, দেশ প্রথম তার পিঠেই কষাঘাত করবে। ভারত আশা করে রয়েছে যে দেশের রাজনৈতিক নেতাদের বিবেক এখনও বিকিয়ে যায়নি।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ASHOK UPADHYAY ASHOK UPADHYAY @ashoupadhyay

Editor, India Today Television

Comment