উত্ত্যক্ত হয়ে, বাধ্য হয়েই প্রাক্তন আমলারা পত্রাঘাত করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে
কোনটা জনতার মন ভোলাতে আর কোনটা সত্যি, বোঝেন আমলারা
- Total Shares
আমরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সারা জীবন কাটিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা কী, তা আমরা আইএএস-আইপিএসরা জানি। একটা গাড়ি কী ভাবে চলে, এটা অনেকে আন্দাজে বলতে পারেন, কিন্তু জানেন শুধু চালকরাই। এখানে যারা এই চিঠিটি দিয়েছি, তারা প্রত্যেকেই সেই গাড়িটি তিরিশ থেকে চল্লিশ বছর ধরে চালিয়ে এসেছি। তাই একটা কথা প্রথমেই সকলেই বুঝতে হবে, সরকার যখন কিছু বলে, তখন কোনটা জনতার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বলছে আর কোনটা সত্যি, সে কথা আমাদের থেকে বেশি কেউ বুঝতে পারে না।
দ্বিতীয় কথা হল, স্বাধীন ভারতের ৬৯ বছরের ইতিহাসে, আজ অবধি কোনও দিন আধিকারিকরা এ ভাবে কথা বলেনি। এর অর্থ, কতখানি হতাশ হলে আমাদের এ সব জিনিস ব্যাপার নিয়ে নামতে হচ্ছে!
সরকার কেমন, সেই ভালো-মন্দ লোকে বিচার করবে। আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব হল, যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, জনগণ যে সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে, তার সেবা আমাদের করতে হবে। কোনও সরকারের প্রধানের দোষ-গুণ বিচার করার দায়িত্ব আমাদের নয়। দেশের গণতন্ত্র যাঁকে প্রতিনিধিত্ব করতে পাঠিয়েছে, তাঁকে আমাদের মেনে নিতে হবে। কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কেউ পছন্দ করবেন কিনা, সেটা তাঁদের বিচার্য বিষয়, কিন্তু আমাদের কাছে তিনি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি কেমন, তাঁর ধর্ম-বর্ণ কোনও কিছুই আমাদের কাছে বিবেচ্য হয় না।
বন্ধ হোক নারকীয় অপরাধ
এই যে এক শ্রেণীর লোক, যাদের একটা কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে আমলা হতে হয় এবং যাদের প্রশাসন পরিচালনা করতে হয়, তাদের এই নিয়মানুবর্তিতা ও একনিষ্ঠতা দেখে প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত অন্যরা তা মানতে শুরু করেন, কারণ এই শ্রেণীর আমলাদের উপরে আর কেউ নেই। এই জায়গায় আমাদের নেতৃত্বের ভূমিকাও আছে।
এই ভাবে যদি পুরো বিষয়টাকে দেখা হয় যে, সেই নেতৃত্ব যখন বেঁকে বসেছে, তারা যখন বলছে যে “আপনারা ঠিকমতো কাজ করছেন না,” তখন সেটা ভাবা দরকার। ওঁরা অনেক বার চেষ্টা করেছেন আমাদের গায়ে রাজনৈতিক রং লাগাতে, কিন্তু আমাদের কারও মধ্যে সেই রাজনৈতিক ছাপ নেই। কারও রাজনৈতিক ছাপ থাকলে আমরা তাকে আমাদের সঙ্গে রাখব না।
রাজনৈতিক ছাপ নিয়ে আমি আমার উদাহরণই দিতে পারি। বামেদের কাছে আমি সমস্যায় পড়েছি, এখান থেকে চলে যেতে হয়েছিল। দিল্লিতে গিয়ে একটি কারণে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে আমি দু’বছর কথা বলিনি, কংগ্রেসের কাছেও ভুগেছি। পরবর্তী কালে বিজেপির সঙ্গে সঙ্ঘাতে নেমেছি। এখানে আমি তো কোনও সমস্যা তৈরি করিনি, অর্থাৎ কোনও ক্ষেত্রে কেউ মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে না বলতে হয়, অন্য কেউ হয়তো হ্যাঁ বলতেই পারেন। এখানে আমার মতো অনেকেই আছেন। যাঁরা ৩০ বছর বা তার বেশি আইএএস হিসাবে কাজ করেছেন, অতিরিক্ত সচিব বা তার উপরের পদের দায়িত্ব সামলেছেন, তাঁদের একটা মাপকাঠিতে বিচার করা যায়।
আমাদের বক্তব্য হল, আমরা বার বার হলুদ কার্ডটা দেখাচ্ছি। এই কার্ড দেখানোর ক্ষমতা অবশ্য একমাত্র আদালতের আছে। আদালত লাল কার্ডও দেখায়। লাল কার্ড দেখানোর আগের পর্যায়ে হলুদ কার্ড দেখানো হয়, অর্থাৎ এই বলে সতর্ক করা হয় যে, তুমি নিজের এক্তিয়ারের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছ।
অপরাধীর শাস্তি চাইছে দেশ
সাধারণ লোকের মতামত তৈরি হয় বিভিন্ন মাধ্যম, মূলত সংবাদ মাধ্যম থেকে কোনও কিছু জানার পর। কিন্তু গণমাধ্যমে যাঁরা লিখছেন, তাঁদের একটা নীতি মেনে চলতে হয়। আমরা চিঠি লিখেছি নিরপেক্ষতার জায়গা থেকে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলছি, একটা নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করার জন্য। আমরা জানি যে উনি কোনও কথা শোনেন না, এটা খুবই দুঃখজনক। যখন শুনবেন, তখন হয়ত ব্যাপারটা আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে। পরে যদি কোনও শিশু জিজ্ঞাসা করে, যুদ্ধের সময় তুমি কী করছিলে বাবা, তখন সেই পিতা কী উত্তর দেবেন? খেলায় মত্ত ছিলেন! আমাদের ভূমিকা আমরা পালন করছি।
অনেক সময় অনেককে সমস্যায় ফেলার চেষ্টা করা হয়, সকলেই জানেন সে সব কথা। এই ধরনের সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা অনেককেই তাড়া করে। অবসরগ্রহণের পরেও অনেক সময় বিভিন্ন কাজে সরকার ডাকে, সম্মান দেয়। কোনও বোর্ডের সদস্য করা হয় আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্য। সেখানে বিপুল অঙ্কের বেতন পাওয়া যায়। কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে আমরা যে পদক্ষেপ করেছি, এই ধরনের পদক্ষেপ করার অর্থ হল সেই সমস্ত সুযোগ হারানো, এককথায় সরকারের কাছে কালো তালিকাভুক্ত হওয়া। এ সব কিছু জেনেও, উত্ত্যক্ত হয়েই আমরা এই পদক্ষেপ করেছি।
এর আগেও আমরা বলেছি, সে বার ৬৫ জন মিলে। এ বার ৪৯ জন মিলে বলছি। আমদের বক্তব্য হল, আপনি যা করছেন, ঠিক করছেন না। আমরা একা নই, অনেকেই বলছেন, কিন্ত আমাদের বলার অন্য তাৎপর্য আছে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত মুষ্টিমেয় আধিকারিক বলছেন। কেউ বলতে পারেন, এই পঞ্চাশ জন কেন বলছেন। আমরা ৫০ হাজার জন বলতে পারি, কিন্তু আমরা নিজেদের সীমিত রেখেছি।

