বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বড় ধাক্কা খেল উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনে

নিজেদের মধ্যে প্রচুর আপস করতে হবে বিরোধীদের, লড়াইটা মজাদার হবে

 |  3-minute read |   01-06-2018
  • Total Shares

বিরোধীদের অনেক দিন ধরেই হালকা ভাবে নিচ্ছিল বিজেপি। কিন্তু উপনির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের কৈরানা লোকসভা ও নূরপুর বিধানসভা আসনে পরাজিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিজেপির বিপদ ঘণ্টা বাজতে শুরু করে দিয়েছে।

বিজেপিকে রুখে দেওয়ার জন্য বিরোধীরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে আসরে নেমেছিল। এই উপনির্বাচন ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পথ দেখাতে শুরু করে দিয়েছে। সামনের সাধারণ নির্বাচনেও নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক ভাগ্য কিন্তু উত্তরপ্রদেশেই নির্ণয় করে দেবে।

এই নিয়ে তিন বার শাসক দল ধাক্কা খেল উত্তরপ্রদেশে। দু'মাস আগে ফুলপুর লোকসভা আসনে বিজেপি পরাজিত হয়েছিল যা রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য্যের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ছাড়াও, বিজেপি গোরক্ষপুর লোকসভা আসনটিও হারিয়েছিল। স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মোট পাঁচবার এই আসনটি থেকে জিতেছিলেন।

এই দুটি আসন উত্তরপ্রদেশের পূর্ব দিকে অবস্থিত। কৈরানা ও নূরপুরের ফল ঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে যে রাজ্যের পশ্চিম প্রান্তেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপি ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে ৮০টির মধ্যে ৭৩টি আসন পেয়েছিল আর ২০১৪ বিধাসনভায় ৪০৩টির মধ্যে ৩২৫টি আসন পেয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। এ বার সেই রাজ্যের শাসক দলের ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরতে শুরু করে দিয়েছে।

bj690_053118075943_060118113152.jpgএই নিয়ে তিন বার শাসক দল ধাক্কা খেল উত্তরপ্রদেশে

বিজেপির কাছে সবচেয়ে খারাপ খবর, মানুষ তাদের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে। যার প্রতিফলন রাজ্যের একেবারে দুই ভিন্ন প্রান্তে দেখা গেছে।

এই তিন উপনির্বাচনে বিজেপি পরাজিত হওয়ার পর উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর ধর্মীয় রাজনীতি করবার যৌক্তিকতা নিয়ে এ বার প্রশ্নের উদয় হয়েছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ভোটারদের সম্মোহিত করবার দক্ষতাও এ বার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বস্তুত বিজেপির গোটা শক্তিকেই এই দুটি আসনে ব্যবহার করবার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নিজেও ভোটের একদিন আগে এই কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছিলেন। নির্বাচনীবিধিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কেন্দ্রের পরিধির মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের আছিলায় মোদী জনসভা করে গেছেন।

দু'দিনের জন্য এই অঞ্চলে মুখ্যমন্ত্রীও ঘাঁটি গেড়েছিলেন। সেই সময় হিন্দু-মুসলমান বিভেদকে সুড়সুড়ি দেওয়ার চেষ্টার কোনও খামতি রাখেননি যোগী আদিত্যনাথ। এই পন্থা অবলম্বন করে কৈরানা ও নূরপুরে এর আগেও লাভবান হয়েছিল বিজেপি। এবারও উপনির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক তরজা শুরু করতে মহম্মদ আলি জিন্নার পোট্রেট নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল বিজেপি যা ১৯৩৮ সাল থেকে আলিগড় মুসলিম ইনস্টিটিউটের দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে। বিজেপি ভেবেছিল যে আলিগড়ের অবস্থান যেহেতু এই দুটি কেন্দ্রের খুব দূরে নয় তাই এই ইস্যু তাদের এই দুটি কেন্দ্রে ভোট বাড়াতে সাহায্য করবে।

yogi690_053118082414_060118113218.jpgউত্তরপ্রদেশ মুখ্যমন্ত্রীর ধর্মীয় রাজনীতি করবার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এবার প্রশ্নের উদয় হয়েছে

রাষ্ট্রীয় লোকদল (আরএলডি), সমাজবাদী পার্টি (এসপি), বহুজন সমাজবাদী পার্টি (বিএসপি) এবং কংগ্রেসের মতো বিরোধীরা এক জোট হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে অন্য একটি বিষয় উত্থাপন করে। আখচাষিদের বকেয়া মেটায়নি বিজেপি সরকার। গোটা পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ জুড়ে এই আখচাষিদের প্রাধান্য রয়েছে।

লড়াইটার পোশাকি নাম দেওয়া হল "জিন্না বনাম গন্ন"। তবে আখচাষিদের যে ১২,০০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে তা সরকার মেটাতে পারেনি বলেই বিরোধীরা জয় পেল? আরএলডির সাধারণ সম্পাদক তথা অজিত সিংয়ের পুত্র জয়ন্ত চৌধরী জানিয়েছেন, "জিন্নার বিরুদ্ধে এটি গন্নের জয়। এ অঞ্চলের ভোটাররা বুঝিয়ে দিয়েছেন যে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ধর্মীয় ভেদাভেদের থেকে অনেক বেশি গুরত্বপূর্ণ।"

বিজেপির এই পরাজয় দলের নেতৃত্বের কাছেও একটা বিরাট থাপ্পড়। বিজেপি নেতারা 'লাভ জিহাদ' ও 'গো হত্যার' মতো বিষয়গুলোর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি জিইয়ে রাখতে চেয়েছিলেন।

কৈরানা থেকে বলপূর্বক কিছু হিন্দুদের উচ্ছেদ করা হয়েছে - এই বিষয়টি নিয়েও প্রচার করতে দেখা গিয়েছিল আদিত্যনাথকে। তিনি ভেবেছিলেন এই ভাবে প্রচার করলে হিন্দু ভোট তাঁর ঝুলিতে ঢুকবে। কিন্তু এখন বিজেপির মুখ লুকাবার জায়গা নেই।

এই হিন্দুত্বের ভাবমূর্তির উপর ভর করেই তো আদিত্যনাথ একটি মন্দিরের ট্রাস্টের মাথা থেকে দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তাই তো এই পরাজয় তাঁর কাছে এক বড় ধাক্কা।

বিরোধীদের এই জয় কিন্তু এখন বিরোধী দলগুলোর জন্যেও বড় চ্যালেঞ্জ। বৃহত্তর রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের স্বার্থে এই দলগুলিকে এখন নিজেদের মধ্যে অনেক আপস করতে হবে। না হলে, মোদীকে গদিচ্যুত করা যাবে না।

এবার বিরোধীরা লড়াইটাও বেশ মজাদার হতে চলেছে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SHARAT PRADHAN SHARAT PRADHAN @sharatpradhan21

The writer is a senior journalist and political analyst based in Lucknow.

Comment