মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ঠিক, দেশে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা চলছে

কালো টাকা আবার মজুত করা শুরু হয়েছে, যার ফলে এই নগদ সংকট

 |  4-minute read |   18-04-2018
  • Total Shares

১৭ মাস পর আবার দেখা দিল নগদের হাহাকার। দেশের জনসাধারণ ফের দৌড় শুরু করে দিয়েছেন - এক এটিএম থেকে অন্য এটিএমে। যে এটিমগুলোতে টাকা পাওয়া যাচ্ছে তার সামনে লম্বা লাইন। আর টাকা শেষ হতেই হাহাকার, বিক্ষোভও সৃষ্টি হচ্ছে। একটা বা দুটো রাজ্য নয়, দেশের ১১টি রাজ্য জুড়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে এই পরিস্থিতি দেখে আমি যারপরনাই আশ্চর্য্য হয়েছি। নোটবন্দি ঘোষণা হয়েছে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে। কিন্তু বর্তমানে বাইরে থেকে কোনও আঘাত আসেনি আমাদের দেশের অর্থনীতির উপর, অর্থনীতির পরিভাষায় আমরা যাকে বলি 'আউটসাইড শক'। তাহলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো কেন?

কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এই পরিস্থিতি সৃষ্টির বেশ কিছু ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে সরকারের তরফ থেকে দেওয়া ব্যাখ্যাগুলোতে বেশ গলদ রয়েছে। যা সহজে মেনে নিতে কষ্ট হয়।

প্রথমত, সরকারি মহলে দাবি করা হয়েছে বেশ কিছু অব্যবস্থার জন্য নাকি এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অব্যবস্থা বলতে বেশ কিছু এটিএম নাকি ঠিক মতো প্রোগ্রাম করা হয়নি যাতে সেগুলো নতুন নোটের জন্য উপযোগী হয়ে উঠতে পারে। দুই, রাজ্যে রাজ্যে নগদ বন্টন নাকি ঠিকঠাক হয়নি। অর্থাৎ, কোনও রাজ্য প্রয়োজনের তুলনায় বেশি নগদ পেয়েছে আবার কোনও কোনও রাজ্য কম পেয়েছে। কারণটা একেবারেই মেনে নেওয়া কঠিন।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি বলেছেন যে হটাৎ করে নগদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অর্থমন্ত্রকও দাবি করেছে যে বছরের এই সময় কৃষিকার্য তুঙ্গে থাকায় অর্থের চাহিদা বেড়েছে। এই যুক্তি কোনওমতেই গ্রাহ্য করা যায় না। বছরের বছর এই সময় কৃষির জন্য নগদের চাহিদা বেশি থাকে। কিন্তু তাই বলে কোনও বছরই নগদ সঙ্কট দেখা দেয় না। সরকারের একটি তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে যে লেনদেন বেড়েছে বলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের কাছে আমার একটাই প্রশ্ন কোন জাদুবলে রাতারাতি দেশের লেনদেন বেড়ে গেল?

এক মাত্র সত্যি কথাটা বলছে ব্যাঙ্কগুলো। তাদের দাবি, যে পরিমাণ টাকা ব্যাঙ্কগুলো থেকে তোলা হচ্ছে তা আর ব্যাঙ্কে জমা পড়ছে না। আমাদের দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় এমনটা হওয়ার কথা নয়। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় তুলে নেওয়া টাকা আবার ফিরত আসার কথা। তা ফিরছে না কারণ কিছু লোক তা মজুত করে রাখছেন।

abhirup_body_041818074059.jpgবাজারে কালো টাকা চলে এলে আবার নগদ সঙ্কট দেখা দেবে

কিন্তু কেন?

এর পিছনে আমার ব্যাখ্যাটা বেশ পরিষ্কার। নোটবন্দির ঘোষণার পর ৮৭ শতাংশ নগদ ব্যাঙ্কে ফিরে এসেছিল। তার মানে বড় অঙ্কের কালো টাকা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় সাদা হয়ে ফিরে এসেছে। যাঁদের কাছে কয়েক কোটি কালো টাকা মজুত ছিল তাঁরা বিভিন্ন উপায় এই টাকা সাদা করেছেন। এর মধ্যে বহুল প্রচলিত উপায়টি হচ্ছে বাড়ির ভৃত্য, রাঁধুনি বা গাড়ির চালকের অ্যাকাউন্টে এই টাকা ভাগ ভাগ করে জমা দেওয়া।

আপনারা যদি লক্ষ করে থাকেন তাহলে দেখবেন যে নোটবন্দির সময় কোন শ্রেণীর লোকেরা লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে মোটা অঙ্কের টাকা জমা দিয়েছিলেন তাহলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। এই শ্রেণীর লোকেরা সচারচর লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে এতো মোটা অঙ্কের টাকা ব্যাঙ্কে জমা দেন না।

কালো টাকার মালিকরা কিন্তু খরচ করবার জন্য এই টাকা তাঁদের বাড়ির রাঁধুনি, ভৃত্য বা গাড়ির চালকের হাতে তুলে দেননি।

এবার সময় এসেছে সেই টাকা ফিরত নেওয়ার। তাঁরা তাই করছেন, এবং টাকা তুলে ফের মজুত করে রাখছেন। তাঁর মানে কালো টাকা আবার তৈরি হলো বলে।

 

একটা বিষয় খেয়াল করবেন। ব্যাঙ্কের থেকেও এটিএমগুলো বেশি নগদ সঙ্কটে ভুগছে। কারণ এটিএমে বড় ডিনোমিনেশনের টাকা বেশি থাকে। তাই বড় অঙ্কের টাকা তুলে নেওয়াটাও সহজ। বাজারে কালো টাকা চলে এলে আবার নগদ সঙ্কট দেখা দেবে। এর ফলে মার খাবেন ছোট ব্যবসায়ীরা ও দিন আনি দিন খাই মুনষেরা। ধরুন আপনি বাড়িতে কাঠের কাজ করবেন। তাহলে আপনাকে ছুতোর মিস্ত্রি ডাকতে হবে। ছুতোর মিস্ত্রি কিন্তু আপনার কাছ থেকে নগদে পারিশ্রমিক নেবেন। এবার আপনার কাছে যদি নগদ না থাকে তাহলে আপনি কাজটা সাময়িক ভাবে পিছিয়ে দেবেন। এতে, আপনার থেকেও ছুতোর মিস্ত্রির লোকসান অনেক বেশি। তাঁর রুজিরোজগারে সরাসরি আঘাত করা হলো।ঠিক এই কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন যে দেশে অর্থনতিক জরুরি অবস্থা চলছে।

এক শ্রেণীর লোক নগদ মজুত করে নিজেদের ‘কালো ধন’ বৃদ্ধি করে যাবেন আর তার ফলে দিনমজুরদের রুজিরোজগার মার খাবে -একে জরুরি অবস্থা ছাড়া আর কিসের সঙ্গেই বা তুলনা করা যায়?

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ABHIRUP SARKAR ABHIRUP SARKAR

The writer is an economist.

Comment