১০০ বছর আগে গান্ধীজি যে সত্যাগ্রহ শুরু করেছিলেন আজও তা প্রাসঙ্গিক

যতগুলো সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে কাজ হয়েছে সেগুলো থেকে স্পষ্ট যে তখন নানা ভাবে কৃষকদের শোষণ করা হত

 |  3-minute read |   18-04-2018
  • Total Shares

ভারতীয় কৃষকদের জীবনযাত্রা কেমন আর তাঁরা কী ভাবে চাষাবাদ করেন, চম্পারণেই তা প্রথম চাক্ষুস করেছিলেন গান্ধীজি।

তখন তিনকাঠিয়া বলে একটি নিয়ম চালু ছিল, যা শতাধিক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছিল। জমির মালিককে তাঁর জমির একতৃতীয়াংশ চাষের জন্য ছেড়ে দিতে হত। এ ভাবে চলত কৃষকদের শোষণ।

বিহারের বেশি কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে গান্ধীজি চম্পারণে যান। কৃষকদের অবস্থা দেখে গান্ধীজি তাঁদের অসন্তোষের কথা জানতে চান। অনুসন্ধান কমিটির সামনে গান্ধীজি কৃষকদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। গান্ধীজি নিজে এই কমিটির একজন সদস্য ছিলেন।

পরে জানতে পারি যে সব মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার সাক্ষ্যপ্রমাণ একত্র করা হয়েছিল। তবে এখন অবধি কোনও ঐতিহাসিকই এইসব সাক্ষ্যের নমুনা চাক্ষুষ করেননি। গত বছর জাতীয় লেখ্যাগার বা ন্যাশনাল আর্কাইভসে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই সব সাক্ষ্যের নথিগুলো একত্রিত করে একটি প্রকল্প তৈরি করা হবে। সবরমতী আশ্রমে কাজ ও শুরু হয়ে গেছে। দু-এক বছরের মধ্যেই এগুলো প্রকাশিত হবে। এইগুলো প্রকাশিত হলে তৎকালীন ভারতীয় কৃষকদের জীবনের একটা নতুন দিক আমাদের সামনে খুলে যাবে।

body_041818084820.jpgচম্পারণ সত্যাগ্রহের ১০০ বছর

এখনও অবধি যতগুলো সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে কাজ হয়েছে সেগুলো থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে ওই সময় কৃষকদের তিন ভাবে শোষণ করা হত। প্রত্যেকবছর জমির কর বাড়ান হত এবং কৃষকদের বর্ধিত হারে কর দিতে বাধ্য করা হত। এছাড়াও বিভিন্ন 'বিশেষ' ধরণের কর দিতে বাধ্য করা হত। আর এই বিশেষ করের অদ্ভুত সব নাম ছিল। কোম্পানির কোনও সাহেবের যদি গাড়ি কেনা শখ হত তখন কৃষকদের 'মোটোরাহী' বলে একটি কর দিতে হত। কৃষকদের তাদের টাকা থেকে কিছুটা অংশ সেই গাড়িটি কেনার জন্য দিতে হত। যদি কোম্পানির হাতি কেনার প্রয়োজন হত তখন কৃষকদের 'হাতিআহি' নামে একটি কর দিতে হত। কিংবা 'শিকার কর'-এর দ্বারা কোম্পানির সাহেবরা যখন শিকার করতে যেতেন তখন তাঁদের সব খরচ বহন করতে হত এই দরিদ্র কৃষকদের। তাই এই সব নথি প্রকাশ করাই হবে চম্পারণ সত্যাগ্রহের প্রতি আমাদের প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন করা।

এই কাজে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার আমিই বহন করছি। আটটি খণ্ডে প্রকাশ করা হবে এই সব নথি। ভারতীয় কৃষক ও চাষবাস নিয়ে এমন নথি কোনও লেখ্যাগারে নেই। তাই এগুলো প্রকাশিত হলে ভারতের কৃষিকাজে ইতিহাস নিয়ে এই প্রথমবার এত বিশাল মাপের কাজ সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশিত হবে। এটি হবে মোটামুটি চার হাজার জনের সাক্ষ্য সম্বলিত।

প্রাথমিক শিক্ষার দিকে আরও জোর দিতে হবে। গান্ধীজি ও তাঁর সঙ্গীরা বিভন্ন গ্রামগুলোতে মেয়েদের ও ছেলেদের জন্য বহু প্রাথমিক স্কুল শুরু করেছিলেন। এ ছাড়াও গ্রামগুলোকে পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করতে হবে। তাই আমাদের কাছে চম্পারণ সত্যাগ্রহের ১০০ শতবর্ষ উদযাপন মানে হল গান্ধীজি যে আদর্শ নিয়ে এই আন্দোলন শুরু করেছিলেন সেই আন্দোলন ফিরে দেখা, সেই মত ও পথ অবলম্বন করে নতুন কিছু করা।

এ যুগেও যদি কৃষির হাল ও কৃষকদের অবস্থা সেই আগের মতোই থাকে তা হলে মহাত্মা গান্ধী যে সত্যাগ্রহ করে ছিলেন তা থেকে আমরা কিছুই শিখতে পারিনি, এ কথা ধরে নিতে হবে। আমার মনে হয় ভারতের কৃষিব্যবস্থার এখনও তেমন একটা উন্নতি হয়নি। আমরা যদি এই একশো বছরের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে কিছু করতে পারি তাহলেই আমরা এই সব কৃষকদের কষ্ট থেকে মুক্ত করতে পারব।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ থেকে আমরা দুটো শিক্ষা পাই, এক বহু বছর ধরে কৃষকদের কষ্টের কথা কেউ তুলে ধরেনি। দ্বিতীয়ত কৃষকদের নানা ভাবে ভয় দেখিয়ে শোষণ করা হত। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের এঁরা ভয় পেতেন বলে ব্রিটিশরা এঁদের আরও দুর্বল মনে করে অত্যাচার করত। কিন্তু যখনই গান্ধীজির সাহায্যে এঁরা ব্রিটিশদের আতঙ্ক কাটিয়ে উঠলেন তখনই ব্রিটিশদের মনোভাব বদলে গেল। এ বার আমাদের আবার নিজেদের প্রশ্ন করতে হবে যে আমাদের আজকের কৃষকরা কি ভীত? তাঁদের আবার শোষণ করা হচ্ছে না তো, কিংবা তাঁদের থেকে যে কর নেওয়া হচ্ছে, তা কি যথাযথ? এ ছাড়াও দেখতে হবে, তাঁরা যেন স্বাস্থ্যকর ও নির্মল পরিবেশে বসবাস করতে পারেন। এই সব যদি আমরা কৃষকদের দিতে পারি তাহলে সেটাই হবে চম্পারণ সত্যাগ্রহের প্রতি প্রকৃত সম্মান ও শ্রদ্ধা নিবেদন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

TRIDIP SUHRUD TRIDIP SUHRUD

Gandhi Scholar

Comment