ভারতের সঙ্গে কেন আর বন্ধুত্ব চাইছে না রাশিয়া

চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক বাড়তে থাকায়, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক যাচাই হয়ে যাবে

 |  3-minute read |   30-03-2018
  • Total Shares

প্রত্যাশামতোই ভালোভাবে ভোটে জিতে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন এবং আগামী ছ’বছর তিনিই রাশিয়াকে নেতৃত্ব দেবেন। এ বার ৭৬ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি ক্ষমতায় রইলেন, স্ট্যালিনের পর তিনিই একমাত্র যিনি একটানা এতদিন হয় রাষ্ট্রপতি না হয় প্রধানমন্ত্রী পদে রয়েছেন, সেই ১৯৯৯ সাল থেকে। তিনি চাইছিলেন এবার যেন আগের চেয়ে আরও বেশি সমর্থন নিয়ে তিনি ক্ষমতায় ফিরতে পারেন, আগের বার তিনি ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন, অতএব তাঁর সেই আশাও পূরণ হয়েছে।

স্থানীয় ব্যাপারে গুরুত্ব

‘গত কয়েকবছরের সাফল্যে’র স্বীকৃতি হিসাবে পুতিন যখন নির্বাচনে জিতে বিজয়োৎসব করছেন, তার আগে অবশ্য সেই নির্বাচনের দৌড়ে সামিল হওয়া থেকে আটকে দেওয়া হয়েছিল প্রধান বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনিকে। সারা জীবনের জন্য চিনের সম্রাট বনে যাওয়া জাই জিনপিং এবং রাশিয়ায় পুতিনেই এই জয় রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে এমন এক স্বৈরাতান্ত্রিক রূপ ধারণ করছে, যা অভূতপূর্ব।

ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে অবশ্যই দীর্ঘদিন ধরে বন্ধুত্ব রয়েছে, কিন্তু দ্রুত বদলে চলা ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেই সম্পর্ক দূরে সরতে শুরু করেছে। পুতিন নতুন করে নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে তাঁর শুভেচ্ছা জানান। ভারতের পক্ষে দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে পাকিস্তানের দিকে রাশিয়ার ঝুঁকে পড়া, কারণ তারা চিনের সঙ্গেও সুসম্পর্ক চাইছে। ঐতিহাসিক ভাবে মস্কো চিরকালই নতুন দিল্লির পাশে থেকেছে এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে বারে বারে কাশ্মীর প্রসঙ্গে আপত্তি জানিয়ে এসেছে।

দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে এখন দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে রাশিয়ার। উল্লেখযোগ্য বদলটি হল, ডিসেম্বর মাসে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত প্রথমবার ছয় দেশের সংসদের অধ্যক্ষের সম্মেলন শেষে যে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়, সেখানে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থানকেই সমর্থন করেছে রাশিয়া। এই যৌথ বিবৃতিতে সই করেছে আফগানিস্তান, চিন, ইরান, পাকিস্তান, রাশিয়া ও তুরস্ক যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল, “আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখা, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের দেওয়া পরামর্শ মেনে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধান।”

body_033018060655.jpgভ্লাদিমির পুতিন ও নরেন্দ্র মোদী [মেল টুডে]

অভ্যন্তরীণ রাজনীতি

ডিসম্বর মাসে ভারত সফরে এসে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভ্রভ জনসমক্ষেই চিনের সেই বিতর্কিত সড়ক প্রকল্পে ভারতকে যোগ দিতে আহ্বান করেন এবং নিজের অবস্থান থেকে না সরেও নতুন দিল্লি কী ভাবে এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারে সেই পথ খুঁজতে বলেন। তা ছাড়াও ভারত মহাসাগর-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চার দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার যৌথ অবস্থান নিয়ে ভারতের তৎপরতায় অসন্তোষও প্রকাশ করেন রুশ বিদেশমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এই ভাবে গোষ্ঠীবাজি করলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এশিয়া অঞ্চলে নিরাপত্তা স্থিতিশীল করা যাবে না, সকলে মিলে খোলা মনে থাকলে তবেই তা করা সম্ভব।”

ভারত ও রাশিয়ার শীর্ষ নেতৃত্বের যথেষ্ট প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে।

রাশিয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হল, মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি দুনিয়া তাদের বিদেশনীতির সামনে চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে এবং তারা প্রতিটি ক্ষেত্রে রাশিয়াকে পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পশ্চিমি দুনিয়ার চোখে যে সব শক্তি রাজনীতির ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করছে, রাশিয়া হল সেইসব শক্তির অন্যতম, এমনকী কোনও কোনও ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে তারা চিনের চেয়েও রাশিয়াকে এগিয়ে রাখছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরে মার্কিন-রুশ সম্পর্কের পালে যে সুবাতাস বইতে শুরু করেছিল, এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্দরে আবার সেই দ্বন্দ্বের পরিস্থিতি।

ক্রমবর্ধমান আঁতাঁত

ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভাবলে ব্যাপারটা হল, চিন ও চিনেয়র সান্নিধ্য থেকে আসা মন্দ ব্যাপারগুলোর সমাধান করতে হবে। চিরকালীন ভাবে যে সব জায়গাগুলোয় ভারতের প্রভাব ছিল, দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারত মহাসাগরের সেই সব জায়গাগুলোতে এখন অনধিকার প্রবেশ করতে চাইছে চিন। ভারত ও চিনের মধ্যে বেড়ে চলা ক্ষমতার অসাম্য এখন দুই দেশের সীমনাকে অস্থির করে তুলেছে। চিন ও পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের ফলে ভারতকে দুই সামান্তের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে হচ্ছে। ভারতে আন্তর্জাতিক শক্তি হিসাবে চিন তো স্বীকারই করছে না, উল্টে ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত্র দাবিদাওয়াগুলোতেও গুরুত্ব দিচ্ছে না।

এর ফল হল, পশ্চিমি দেশগুলোকে নিয়ে সমস্যার ক্ষেত্রে চিনের থেকে যে উপযুক্ত ও ন্যায্য সহযোগিতা রাশিয়া পেতে পারে, ভারতের ক্ষেত্রে সেই ধরনের সহযোগিতা করা সম্ভব নয়। বিকল্প প্ল্যাটফর্ম গড়তে নতুন দিল্লির দরকার সমমনস্ক দেশ এবং এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক শর্তটাই হবে ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে চিনের কর্তৃত্বের কথা মাথায় রেখে।

চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার যোগসাজস ক্রমেই বাড়তে থাকায়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ভারত ও রাশিয়ার এতদিনের সম্পর্কটাও যাচাই হয়ে যাবে। সম্পর্কটা এখন দাঁড়িয়ে আছে প্রতিরক্ষার উপরে এবং যেখানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক টালমাটাল, এই অবস্থায় সম্পর্ক বজায় রাখার রাস্তাটি হল বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা। যেখানে আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক পরিবেশের দরুন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে, সেখানে আগে কবে কী হয়েছিল, শুধুমাত্র সেই আবেগ দিয়ে কাজ হবে না।

সৌজন্য: মেল টুডে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

HARSH V PANT HARSH V PANT

The writer is Professor of International Relations at King's College London. His most recent book is India's Afghan Muddle (HarperCollins).

Comment