স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকারে লাভ নেই দরিদ্রের, তাঁরা তো চিকিৎসাই পান না

একজন ব্যক্তিকে সুস্থ মস্তিস্কে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়ার জন্য কাউকে মনোনীত করে রাখতে হয়

 |  2-minute read |   26-04-2018
  • Total Shares

স্বেচ্ছামৃত্যুতে সম্মতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নির্দেশিকা মেনে স্বেচ্ছামৃত্যুকে মান্যতা দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছে ‘সম্মানজনক মৃত্যু জীবনের অধিকার’। ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়টা যথোপযুক্ত। ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে মানুষের স্বাধীনতা ও জীবনের অধিকার সম্বন্ধে যে কথা বলা আছে, সেই অধিকারের মধ্যে এটাও পড়ে। একজন ব্যক্তির শুধু বাঁচার অধিকার নয়, মৃত্যুর সময় যেন তাঁর সম্পূর্ণ সম্মান বজায় থাকে।

সুপ্রিম কোর্ট এখানে 'লিভিং উইলের' কথা বলেছে। একজন ব্যক্তিকে সুস্থ মস্তিস্কে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়ার জন্য কাউকে মনোনীত করে রাখতে হয়, যিনি পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আমার মনে এই অনুমোদন কোনও চিকিৎসকের উপস্থিতিতে হওয়াই ভালো, আর তা রেজিস্ট্রি করে রাখতে হবে। অনুমতি আগে থেকেই চেয়ে রাখতে হবে যাতে কখনও তেমন কোনও পরিস্থিতি এলে সেই ব্যক্তি আর একজন ব্যক্তিকে নির্বাচন করে যাবেন যিনি তেমন কোনও পরিস্থিতি এলে তাঁর হয়ে স্বেচ্ছা মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

euthansia_body1_042618073433.jpgএকটা যুগান্তকারী ও একটি সুচিন্তিত রায়

এমন একজনকে এই দ্বায়িত্ব দেওয়া উচিৎ যাঁর সেই ব্যক্তির বিষয়-সম্পত্তিতে কোনও অংশীদারি থাকবে না। সেই মনোনীত ব্যক্তির নিকট আত্মীয় বা রক্তের সম্পর্কের না হলেও চলবে। তবে এই মনোনীত ব্যক্তি যেন খুব বিশ্বাসী একজন হন আর অবশ্যই একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হন।

তবে রোগীর খুব নিকট কোনও আত্মীয় লিভিং উইল ছাড়াও স্বেচ্ছামৃত্যুর সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন। তবে এখানে অনেক কিছু খতিয়ে দেখার ব্যাপারও রয়েছে। একজন ব্যক্তি, যিনি দীর্ঘ দিন ধরে জীবন্মৃত অবস্থায় বিছানায় পড়ে রয়েছেন, যাঁর কোনও সংজ্ঞা নেই, শুধু মাত্র ওষুধ ও নানা চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্যে বেঁচে আছেন, স্বেচ্ছামৃত্যুর দ্বারা তাঁকে এই মৃত্যু-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। তবে পুরো বিষয়টি আগে চিকিৎসকরা খতিয়ে দেখবেন, তার পরেই কারও মৃত্যুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।

তবে এই অধিকারটা উচ্চ মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত লোকজনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমাদের দেশে গরিব মানুষ যাঁরা, তাঁরা তো কোনও চিকিৎসাই পান না, তাঁদের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছামৃত্যুর ভাবনা অবান্তর।

আমার মতে এটা একটা যুগান্তকারী ও একটি সুচিন্তিত রায়।

euthansia_body2_042618073508.jpgআইনের তো আর অপব্যবহার হতে পারে না, মানুষই আইনের অপব্যবহার করে

তবে এই রায়েটিকে ঘিরে ইতিমধ্যে অনেক বিতর্কের সৃষ্টিও হয়েছে। কারণ অনেকেই মনে করছেন যে, এই রায়টির অপব্যবহার হতে পারে? একটু ভেবে দেখুন তো, আমাদের দেশে কোন আইনের অপব্যবহার হয় না! আইনের তো আর অপব্যবহার হতে পারে না, মানুষই আইনের অপব্যবহার করে।

কিন্তু তাই বলে কি আর সমাজ এগবে না? এই রায়টা যেমন ঐতিহাসিক তেমনই এর অপব্যবহারও হতে পারে। মানুষের জীবন ও স্বাধিকার নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। এই আইনটির মাধ্যমে মানুষ মৃত্যুর স্বাধীনতা পেল। এটা একটা বড় পদক্ষেপ।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Justice (retd) Ashok Kumar Ganguly Justice (retd) Ashok Kumar Ganguly

Former Judge, Supreme Court

Comment