ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট চালু হওয়ার পর চিকিৎসক নিগ্রহ বেড়েছে অন্তত দশ গুণ

কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন স্বাস্থ্যনীতি চিকিৎসাকে সম্পূর্ণ ভাবে বিমা নির্ভর করে তুলবে

 |  2-minute read |   20-03-2018
  • Total Shares

গত একবছরেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে লাগাতার ডাক্তার নিগ্রহ চলছে। বাদ যাচ্ছেন না মহিলা চিকিৎসক থেকে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং জুনিয়র ডাক্তাররাও। ২০১৭ সালের ৩ মার্চ কর্পোরেট হাসপাতালের বিলে লাগাম দেওয়ার নাম করে এ রাজ্যে চালু করা হয়েছিল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট ২০১৭। তারপর থেকে ডাক্তার নিগ্রহের মাত্রা প্রায় দশ গুণ বেড়ে যায়। প্রতিটি নিগ্রহের ঘটনার এফআইআর হয়েছে (যদিও বহু ক্ষেত্রেই প্রথমে পুলিশ এফআইআর নিতে চায়নি)। কিন্তু কোনও অপরাধীরই শাস্তি পায়নি। পাশাপাশি চলছে ডাক্তারদের উপর ৩০৪, ৩০৪এ কিংবা পকসো ধারা প্রয়োগ।

এ ক্ষেত্রে পুলিশ অতি তৎপর হয়ে ডাক্তারদের গ্রেপ্তার করেছে। সরকারি চাকরিরত ডাক্তারদের উপর চলছে প্রশাসনিক সন্ত্রাস। যা আজ পূর্বের সমস্ত নজিরকে ছাপিয়ে গেছে। ফলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ বারে বারেই ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। যার ফল ভুগছেন রোগীরাও।

কেন্দ্রীয় সরকার দ্বিতীয় জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির (২০০২) ধারাবাহিকতায় চালু করেছে ২০১৭-র তৃতীয় জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি, যা স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সম্পূর্ণরূপে বিমা নির্ভর করে তুলবে। মানুষ হারাবে স্বাস্থ্যের অধিকার। দেশীবিদেশি, কর্পোরেট বিমা ব্যবসায়ী ও স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা সুনিশ্চিত করতেই চালু করা হচ্ছে এনটাইটেলমেন্ট হেলথ কার্ড (Entitlement Health Card)।

doc_boody_032018071404.jpgডাক্তার-রোগী সম্পর্ক মধুর থেকে বিষাক্ত হয়ে ওঠে

পশ্চিমবঙ্গ সরকার চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাণিজ্যিকীকরণের নীতি প্রয়োগ করছে সুকৌশলে। চটকদার রাজনীতির ঝোঁকে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যেন উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দিয়েছে! ঝাঁ চকচকে মাল্টি-সুপার হাসপাতাল, কাচের ঘর, দেওয়ালে নীল-সাদা রঙের প্রলেপ -- কী নেই সেখানে। রয়েছে ফ্রি চিকিৎসা ও ফ্রি মেডিসিনের চমকও। অথচ সরকারি মতে (ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ স্ট্যান্ডার্ড) যা ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী থাকার কথা তার এক-তৃতীয়াংশও সেখানে নেই। ফলে মানুষ যখন বেড না পেয়ে বা ডাক্তারের অভাবে সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে হয়রানির শিকার হন, তখন সমস্ত ক্রোধ গিয়ে পড়ে কর্মরত ডাক্তারদেরই উপরে। শুরু হয় ডাক্তার নিগ্রহ।

এই সুযোগে সরকার একদিকে যেমন পরিকাঠামহীনতার দায় ডাক্তারদের ঘাড়ে চাপে তেমনই মানুষকে বোকা বানিয়ে সরকারি পরিষেবার মধ্যেই পিপিপি মডেলে ব্যবসায়ীদের ঢোকায়। মাল্টি-সুপার হাসপাতালের বেশ কয়েকটি ইতিমধ্যেই ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। স্বাস্থ্য হয়ে ওঠে আরও বেশি পণ্য। ডাক্তার-রোগী সম্পর্ক মধুর থেকে বিষাক্ত হয়ে ওঠে। বাড়তে থাকে ডাক্তার নিগ্রহ। সেই সুযোগে চতুর সরকার বাণিজ্যিকীকরণের স্বাস্থ্য নীতিগুলির আরও বেশি প্রসার ঘটায়। মানুষ আরও বেশি করে হারায় স্বাস্থ্যের অধিকার।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Dr. SAJAL BISWAS Dr. SAJAL BISWAS

General Secretary, Service Doctors' Forum

Comment