যাঁর আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ছুটেছিল মহাযুদ্ধের প্রথম গুলি, তাঁর শততম মৃত্যুবর্ষ

গ্যাভরিলো প্রিন্সিপ পাল্টে দিয়েছিলেন গোটা পৃথিবীর ইতিহাস ও ভূগোল, এটা তাঁর মৃত্যু-শতবর্ষ

 |  NOTAPHILIST  |  3-minute read |   11-05-2018
  • Total Shares

গ্যাভরিলো প্রিন্সিপকে মনে আছে? মনে থাকার কথাও নয়। কিন্তু গোটা পৃথিবীর ইতিহাস এবং ভূগোল পাল্টে দিয়েছিলেন এই মানুষটি।

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে হ্যাপসবার্গের অস্ট্র্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য একটি বহুভাষিক; বহুজাতিক; রাজনৈতিক এবং সামরিক কাঠামোতে রূপান্তরিত হয়েছিল যা মধ্য ইউরোপের বেশিরভাগ অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে একে বলা হত পূর্ব আর পশ্চিমের মধ্যিখানের ইউরোপ। ১২৭৫ খ্রিষ্টাব্দে হ্যাপসবার্গের রুডলফ কিছুটা অঞ্চল লাভ করেন ওটোকার ও বোহেমিয়ার রাজার থেকে আর এখান থেকেই হ্যাপসবার্গ পরিবারের উত্থান শুরু হয় যা এক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণতি লাভ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অস্ট্র্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য ছিল মধ্যপন্থী শক্তিগুলির একটি। কিন্তু; গ্যাভরিলো প্রিন্সিপ কে? এ সবের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কই বা কী?

wwi-princip2_051118065842.jpg

গ্যাভরিলো প্রিন্সিপ

গ্যাভরিলো প্রিন্সিপ এক বসনিয়ান সার্ব কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বসনিয়া, সার্বিয়া, যুগোস্লাভিয়া জুড়ে ছিল অস্ট্র্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের বিস্তার। ছিল অত্যাচার। সাধারণ মানুষ ছিলেন অসহায়। তারই মধ্যে কয়েকজন তরুণ 'ইয়ং বসনিয়া' নামে একটি যুগোস্লাভিস্ট সংগঠন তৈরি করেন। এঁদের লক্ষ্যই ছিল বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাতে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান শাসনের অবসান। প্রিন্সিপ ছিলেন এই দলের সদস্য এবং সার্বিয়াতে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যকে অসম্ভব ঘৃণা করতেন। এঁরা মনে করতেন; সাম্রাজ্যবাদী শাসনের শেষ দেখতে হলে সশস্ত্র সংগ্রাম প্রয়োজন। 'ব্ল্যাক হ্যান্ড' নামে এক সার্বিয়ান গুপ্ত সংগঠন প্রিন্সিপকে সন্ত্রাসবাদে প্রশিক্ষণ দিল।

অটো ভান বিসমার্ক; যিনি ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে গোটা জার্মানিকে সঙ্ঘবদ্ধ করেছিলেন; একবার বলেছিলেন, ''বলকানের কোনও এক ঘটনার জন্য গোটা ইউরোপ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।'' ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন। সারাজেভো। অস্ট্র্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী; ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দ আর সোফি হাসপাতাল পরিদর্শন করে গাড়িতে উঠলেন। ঠিক সেই সময় ভিড়ের মধ্যে থেকে এক যুবক বেরিয়ে এসে নিখুঁত লক্ষ্যে পরপর গুলি চালালেন। ফার্দিনান্দ আর সোফির দেহ লুটিয়ে পড়ল। ইউরোপ জুড়ে অস্থিরতা শুরু হল। সব দেশ নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সাম্রাজ্যবাদের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে। বাতাস ভারী হয়ে উঠল যুদ্ধের গন্ধে। আকাশ কালো হয়ে উঠল ধ্বংসের ধোঁয়ায়।

archduke-franz-ferdi_051118070454.jpg

ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দ ও সোফি

বিসমার্কের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হল। এতক্ষণে হয়ত আন্দাজ করতে পারছেন; গ্যাভরিলো প্রিন্সিপ কে? হ্যাঁ। গ্যাভরিলো প্রিন্সিপ'ই হলেন সেই ব্যাক্তি; যাঁর গুলি ফার্দিনান্দ আর সোফির শুধু প্রাণই কেড়ে নেয়নি তার সঙ্গে সূচনা করে দিয়েছিল পৃথিবীব্যাপী এক ভয়ঙ্কর মারণযজ্ঞ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। যার পরিণতিতে পতন ঘটল অস্ট্র্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের। এখনও ওই হত্যাকে বিংশ শতকের সর্বাপেক্ষা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে মনে করা হয়। ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে; সম্রাট দ্বিতীয় যোসেফএর সময় থেকেই; তেরেজিনে একটা তারার আকৃতিতে তৈরি দুর্গকে কয়েদিদের রাখার জন্য ব্যবহার করা হত। যোসেফের মা; মারিয়া থেরেসার নামে ওই জায়গার নামকরণ করা হয়েছিল। যুদ্ধের শেষের দিকে থেরেসিয়েনস্টাডট'কে (THERESIENSTADT) যুদ্ধবন্দিদের শিবির হিসেবেই ব্যবহার করা হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও থেরেসিয়েনস্টাডটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। যাই হোক; এই থেরেসিয়েনস্টাডটেই প্রিন্সিপকে বন্দি করে রাখা হয়। এইরকম অসংখ্য অনেক বন্দিশিবির ছিল হ্যাপসবার্গের অস্ট্র্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য জুড়ে। নেজিড্যর (NEZSIDER); শোমোরিয়া (SOMORJA); ব্রাউনাউ (BRAUNAU); ফ্রাইস্টাডট (FREISTADT); আইজেনারজ (EISENERZ); বলদোগাসসোই (BOLDOGASSZONY); ব্রক্স (BRÜX); মাউথাউসেন (MAUTHAUSEN); রাইচেনবার্গ (REICHENBERG) এগুলোর মধ্যে মাত্রই কয়েকটি নাম। এই সবকটি বন্দিশিবিরেই বন্দিদের ব্যবহার করার জন্য আলাদা আলাদা মূল্যের কিছু ক্যাশ কুপন বা নোট চালু করা হয়েছিল। যার একদিকে জার্মান ভাষায় আর অন্যদিকে হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় নোটের মূল্য লেখা থাকত।

hindole11_051118065507.jpgসোপ্রোনিক বন্দীশিবিরের নোট

আমি এখানে যে নোটটির ছবি দিয়েছি সেটি সোপ্রোনিক (SOPRONNYEK) বন্দিশিবিরের। বামদিকের অংশটি জার্মান ভাষায় আর অন্য অংশটি হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় লেখা। নোটটি ১০ হেলার বা ১০ ফিলার মূল্যের। তার নিচে ক্যাম্পের নাম দিয়ে লেখা আছে যে এটি যুদ্ধবন্দিদের ক্যাম্প। এই নোটটি যে ক্যাম্পে যুদ্ধবন্দিদের প্রাপ্যভাগের একটি অংশ; সেটিও লেখা থাকত। সঙ্গে থাকত সেই ক্যাম্পের নাম এবং কবে এই সিরিজের নোটটি চালু করা হয়েছে;তার সাল এবং তারিখ। এটির তারিখ যেমন ১৬ই জুন; ১৯১৬। এই নোটগুলি ছাপাত বুদাপেস্টের গ্লোবাস নামের একটি ছাপাখানা। প্রিন্সিপকে দিয়েই শেষ করি। থেরেসিয়েনস্টাডটেই টিবিতে ভুগে মৃত্যু হয় প্রিন্সিপের; ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে; আজ থেকে ১০০ বছর আগে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment