মোদী সরকার কেন দেশের অভ্যন্তরীণ জলপথের উপরে বাজি ধরছে
জলপথে পণ্য পরিবহণ করলে খরচ প্রভূত কম হয়
- Total Shares
গত তিন বছর ধরে অভ্যন্তরীণ জলপথ চালু করা নিয়ে যে সরকার যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোভাব দেখিয়ে আসছে তার ফলেই এই জলপথ চালু করা সম্ভব হল এবং এর ফলে ব্যাপার পরিষ্কার যে, পণ্য পরিবহণ ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন হতে চলেছে।
১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন বারাণসীতে যখন পেপসিকো ইন্ডিয়ার খাদ্য ও পানীয় সমেত প্রথম পণ্যবাহী জলযানটি গ্রহণ করলেন তখনই ইতিহাস তৈরি হল। কলকাতা থেকে ৩০ অক্টোবর এই জলযানটি কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম কোনও বাণিজ্যিক জলযান দেশের অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবহার করল।
In a major boost to port-led development and harnessing our Jal Shakti for India's growth, an inland waterways terminal will be inaugurated in Varanasi tomorrow. pic.twitter.com/mGMuyPejUe
— Narendra Modi (@narendramodi) November 11, 2018
একই সঙ্গে বারণসীর গঙ্গায় একটি বহুমুখী টার্মিনালও উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। এ দেশে নদীতে এই একই ধরনের যে তিনটি অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল তৈরি করা হচ্ছে, তার মধ্যে এটিই প্রথম।
কেন্দ্রীয় সরকারের জলমার্গ বিকাশ প্রজেক্টের অংশ হিসাবে এই বহুমুখী টার্মিনাল তৈরি হচ্ছে যার উদ্দেশ্য বারাণসী ও হলদিয়ার মধ্যে জলপথের ব্যবহার বাড়ানো। এই জলপথে ১,৫০০ টন থেকে ২০০০ টন ওজনের পণ্য পরিবহণকারী বিশাল জলযান যাতায়াত করতে পারবে।
এর ফলে দেশের পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে খুব শীঘ্রই বিপুল পরিবর্তন হতে চলেছে তা এখন স্পষ্ট।
যদিও এর সুফল বোঝার জন্য এখনও আমাদের বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে, তা সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ জলপথ কেন গুরুত্বপূর্ণ সে কথা আমাদের বুঝতে হবে। একই সঙ্গে বুঝতে হবে কী ভাবে এই বিষয়টি নিয়ে এগনো হল এবং কী ভাবে জাহাজমন্ত্রী নীতিন গড়করির দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোভাব এই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করল।
#Video | The terminal on Ganga river, inaugurated by PM @NarendraModi, comes under a project aimed at promoting inland waterways as a cheaper and more environment-friendly means of transport. pic.twitter.com/1AEN5vFenB
— Hindustan Times (@htTweets) November 12, 2018
একটা কথা মনে রাখতে হবে যে ভারতে মোট পণ্যের ৩.৫ শতাংশের কম পরিবহণ করা হয় জলপথে। অন্য বিভিন্ন দেশের তুলনায় এই হার অতিমাত্রায় কম। চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সমগ্র ইউরোপে এই হার ৪০ শতাংশেরও বেশি। এমনকী বাংলাদেশেও পণ্যপরিবহণের ৩০ শতাংশ হয় জলপথে।
জলপথে পণ্য লেনদেন করলে পরিবহণের খরচ খুবই কম হয়। এর ফলে পণ্যের দামও অনেকটা কম হয় আর তার ফলে বিশ্বের বাজারে পণ্যের দাম খুব কম হয়।
একই ভাবে আমাদের মতো দেশে যেখানে দূষণ এবং সড়কে সুরক্ষা বড় সমস্যা সেখানে জলপথে পণ্য পরিবহণ করলে দু’দিক দিয়েই লাভ হবে। অভ্যন্তরীণ জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থা যদি দুর্দান্ত ভাবে করা যায় তা হলে গাড়ি থেকে ধোঁয়া নির্গমণের পাশাপাশি জাতীয় সড়ক ও শহরের ভিতরের রাস্তাগুলিতে গাড়ির চাপ কমবে (অনেক জায়গাতেই বাইপাস নেই)। তা ছাড়া নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হবে।
এখন যে পদ্ধতিতে ১০৬টি নদীকে দ্রুত অভ্যন্তরীণ জলপথে পরিণত করা হচ্ছে তা নিয়ে আবার কেস স্টাডিও করা যেতে পারে। তবে একটা ব্যাপার বোধহয় মনে রাখা দরকার যে ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যাক্ট ১৯৫৬ অনুযায়ী গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে কোনও নতুন বড়মাপের সড়ককে জাতীয় সড়ক হিসাবে ঘোষণা করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তবে সেই বিষয়টি অভ্যন্তরীণ জলপথের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী নীতিন গড়করির উদ্যোগ ও ঐকান্তিকতায় জলপথ প্রকল্প চালু হল (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)
ঘটনা হল এর আগে যে ক’টি জলপথকে জাতীয় জলপথ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে তারল প্রতিটিই সংসদে পৃথক আইন প্রণয়ন করেই করা হয়েছে।
গড়করির সবুর সইছিল না। তিনি জানতেন যে অভ্যন্তরীণ জলপথ নির্মাণ করলে কী ভাবে পরিববণের খরচ কমে যাবে এবং এখন পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে যে সব সমস্যা রয়েছে সেগুলিরও শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে যাবে। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে একটি বিষয় নিশ্চিত করা উচিত যাতে যে কোনও নদীপথকে জাতীয় জলপথ হিসাবে ঘোষণা করার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকে, যেমনটা জাতীয় সড়কের ক্ষেত্রে রয়েছে।
সংবিধান সংশোধন করা অবশ্য খুবই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং এ জন্য দু’বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। অন্য কোনও উপায়েই কাজের কাজ কিছু হয়নি। যদিও এমন কোনও নজির নেই তবুও সরকার কি সংসদে একটিমাত্র আইনে বলে একাধিক নদীতে অভ্যন্তরীণ জলপথে পরিণত করতে পারে?
শেষ পর্যন্ত অবশ্য সিদ্ধান্ত হয় যে নজিরবিহীন কাজই করা হবে। সেইমতো ২০১৫ সালের শেষে একলপ্তে ১০৬টি নদীকে জলপথ হিসাবে ঘোষণা করে দেওয়ার জন্য ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়ে বিল পেশ করা হয় সংসদে।
এটা ঘটনা যে এই ১০৬টি নদীকে জলপথে পরিণত করে তা চালু করতে কয়েক দশক সময় লেগে যাবে, কয়েকটি ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয় বলেও মনে হয়। তবে সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার এবং ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরির পথ খুলে দেওয়ার জন্য এটি খুব ভালো পদক্ষেপ।
এর মাধ্যমে সরকার অন্তত একটি বার্তা দিতে চাইছে যে দেশকে বদলে দেওয়ার ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

