শুরুতেই জটিলতা: মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে কংগ্রেস জেডিএসের লড়াই শুরু কর্নাটকে
দলকে প্রমান করতে হবে যে জোট সরকারে তারা যে ভালো বন্ধু হতে পারে
- Total Shares
"আমি কংগ্রেসের দয়ার উপর নির্ভরশীল" কংগ্রেস কি বুঝতে পারছে যে এইচডি কুমারস্বামীর এই বক্তব্য দলের ভাবমূর্তির জন্য কতটা ক্ষতিকারক। এখনও যদি বুঝতে না পারে তা হলে কংগ্রেসের নিদ্রাভঙ্গ করে কয়েক কাপ কফি সেবন করে ফেলা উচিৎ। এবং তা অবিলম্বেই করতে হবে।
মাত্র ছ'দিন আগেই কুমারস্বামী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ও জি পরমেশ্বর উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কংগ্রেস-জেডি (এস) সম্পর্ক মজবুত করতে বিজেপি বিরোধীদের চাঁদের হাট বসেছিল। কংগ্রেস জেডি(এস) সম্পর্কে ভাঙন ধরাটা খুবই স্বাভাবিক। কর্নাটক কংগ্রেসে এমন বেশ কিছু নেতা রয়েছেন যাঁরা আদতে জেডি(এসের) ঝান্ডা ধরে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন। বহুদিন ধরেই দুটি দলের সম্পর্ক একেবারেই মধুর নয়। আর, ঠিক এই পরিমণ্ডলের মধ্যে দিয়েই নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর এই জোট।
সিদ্দারামাইয়ার মন্ত্রিসভায় মাত্র ১৬ জন ফের বিধায়ক হয়েছেন। কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতা কম থাকায় কুমারস্বামী ভেবেছিলেন যে এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রিসভায় খুব বেশি দপ্তর দাবি করবে না কংগ্রেস। কিন্তু কংগ্রেস এখন রীতিমতো বড় ভাইয়ের ভূমিকা পালন করতে শুরু করে দিয়েছে। মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমোদন আদায় করতে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে কুমারস্বামীকে, প্রথমে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠকের পর কুমারস্বামী দিল্লির কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে মিলিত হন। এর পর তাঁকে রাহুল গান্ধীর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাঁর মা সনিয়া গান্ধীর চিকিৎসা করিয়ে ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
কুমারস্বামী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ও জি পরমেশ্বর উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন
কংগ্রেসের এই রাহুল গান্ধীর প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষার সিদ্ধান্তটা সত্যি হাস্যকর। নির্বাচনের প্রচারের সময় সিদ্ধারামাইয়া স্বয়ং বিজেপিকে কটাক্ষ করেছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ এবং যোগী আদিত্যনাথের মতো "উত্তর ভারতীয় নেতাদের আমদানি করে" নির্বাচনী প্রচারে নিয়ে আসার জন্য। অথচ সেই কংগ্রেসই আজ রাজ্যের মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য দিল্লির জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। কর্নাটকের প্রাণিসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী ও শিল্প মন্ত্রী কে হবেন তাও কেন গান্ধী পরিবার সিদ্ধান্ত নেবেন? কংগ্রেস কিন্তু কন্নড়দের নিজস্ব গর্বের প্রতি সুবিচার করতে পারছে না। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিটা বোধহয় এবার শুরু হল।
২০১৮ সালের বেঙ্গালুরুর মঞ্চকে কী ভাবে ২০১৯ লোকসভায় ব্যবহার করা যাবে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করছে এই দুটি দলের ভবিষ্যতের সম্পর্কের উপর। ইতিমধ্যেই, দুই দলের নেতাদের মধ্যে পছন্দের মন্ত্রিত্বের আসন নিয়ে জোর লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। অর্থ দফতর, স্বরাষ্ট্র (পুলিশ) দফতর, পূর্ত দফতর, শক্তি দফতর এবং সেচ দফতর মতো রাজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দফতর কার দখলে থাকবে তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। কংগ্রেস কিন্তু ইতিমধ্যেই দাবি করেছে যে পাঁচটি বড় দফতরের দায়িত্ব তাদেরই দিতে হবে। এই নিয়ে যারপরনাই ক্ষিপ্ত কুমারস্বামী। তিনি উল্টে দাবি করছেন যে বিধানসভার অধ্যক্ষের পদ কংগ্রেসকেই দেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রক মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই রেখে দিতে মরিয়া জেডি (এস)। এর পিছনে অবশ্য একটি উদ্দেশ্য আছে। জেডি (এস) সর্বদাই নিজেদের কৃষকদরদী দল হিসেবে দাবি করে এসেছে। কৃষকদের জন্য ঋণমকুব করতে ও বিভিন্ন ধরণের প্রকল্প চালু করতে সরকারের টাকা প্রয়োজন। অর্থমন্ত্রক হাতে রাখতে পারলে আর্থিক সমস্যার সমাধান হবে আর কংগ্রেসও কৃষকদের জন্য চালু হওয়া কোনও প্রকল্পের জন্য কৃতিত্ব দাবি করতে পারবে না।
কংগ্রেস এখন ৭৮ টি আসন পেয়ে ৩৭টি আসনে জয়ী জেডি(এস)-কে টক্কর দিতে চাইছে
কংগ্রেস এখন ৭৮টি আসন পেয়ে ৩৭টি আসনে জয়ী জেডি(এস)-কে টক্কর দিতে চাইছে। কিন্তু এর পরিণাম ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। অন্যান্য রাজ্যে কংগ্রেসের সম্ভাব্য জোট সঙ্গীদের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছতে পারে। কংগ্রেসের এটাও বোঝা উচিৎ কর্নাটক কিন্তু আদতে কংগ্রেস বিরোধী ভোট হয়েছে। ভোটের ফল জেডি(এস) কিংবা বিজেপির অনুকূলেও যায়নি। এর থেকে পরিষ্কার যে কর্নাটকের ভোটাররা চেয়েছিলেন যে তিন প্রধানের মধ্যে যে কোনও দুটি দল একত্রে সরকার গঠন করুক। কিন্তু কর্নাটকে এখন দ্বিধাবিভক্ত সরকার হতে চলেছে।
কংগ্রেসের জনসংযোগেরও সত্যিই করুণ দশা। এর মধ্যে রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি জি পরমেশ্বর হঠাৎই জানিয়ে দিয়েছেন যে পুরো পাঁচ বছরের জন্য কংগ্রেস জেডি (এস)-কে সমর্থন করবেন এ কথা তাঁরা বলেননি। এর মানে কুমারস্বামীর ভাগ্য অনেকটা তাঁর বাবা দেবগৌড়ার মতো হতে পারে। কংগ্রেস বুঝতে পারছে না যে অতি লোভে তাঁতি নষ্ট হতে পারে। যার প্রভাব ২০১৯ লোকসভা ভোটে পড়বে।
উল্টোদিকে, জেডিএসের হারানোর কিছুই নেই। ইতিমধ্যেই নিজেকে আন্ডারডগ প্রতিপন্ন করবার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন 'ধূর্ত' কুমারস্বামী। তিনি বলেছেন, "কংগ্রেসের সমর্থনেই আমি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছে। কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া আমার এক চুলও এগোনোর ক্ষমতা নেই।"
এই জোট সরকারকে এক বছর সময় দিতে কেউই রাজি নন। কিন্তু আগামী ১২ মাস ধরে এই সরকার কী ভাবে চলে তা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঝগড়া করেই যদি অধিকাংশ সময়টা কেটে যায় তাহলে রাহুল গান্ধী স্বচ্ছন্দে ২০১৯ লোকসভা ভোটকে আগাম বিদায় জানাতে পারেন।
কর্নাটক কিন্তু কংগ্রেসের ২০১৯-এর ভাগ্য গড়ে দিতে পারে। তাই কংগ্রেসের উচিৎ ভালো বন্ধু হিসেবে একজোট হয়ে জোট সরকারটাকে চালাতে দেওয়া। এই গোল্ডেন রুলের বাইরে গেলেই কিন্তু সমূহ বিপদের আশঙ্কা।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে