সিবিআই বনাম দিদি: নরেন্দ্র মোদীর পদক্ষেপ নিতে দেরি হয়ে যায়নি

তবে এখন আর ফিরে যাওয়া চলবে না, এই যুদ্ধ শেষ করতেই হবে

 |  5-minute read |   06-02-2019
  • Total Shares

অন্তর্বতী বাজেটের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন মোদী তাঁর পুরোনো হৃতগৌরব কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার করতে সফল হয়েছেন।

দেখে শুনে মনে হচ্ছে এবারের বাজেটে একেবারে সঠিক সিদ্ধান্তগুলোই গৃহীত হয়েছে। কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ও সাংবাদিক এই বাজেটের মৃদু সোমালোচনা করলেও বিরোধীরা শুধুমাত্র 'নির্বাচনী বাজেট' আখ্যা দেওয়া ছাড়া এই বাজেট নিয়ে কোনো মন্তব্য করার সুযোগ পায়নি। কিন্তু নির্বাচনের যেখানে আর মাত্র মাস দু'য়েক বাকি রয়েছে সেখানে 'নির্বাচনী বাজেট' ছাড়া আর কীই করার থাকতে পারে?

কিন্তু, এর পর থেকেই, নরেন্দ্র মোদীর গলার স্বর ও চলাফেরার মধ্যে প্রভূত পার্থক্য লক্ষ করা যাচ্ছে।

body_020619041334.jpgমোদী বনাম মমতার লড়াই বেশ জমে উঠছে [ছবি: পিটিআই]

কিন্তু সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে দেশের তদন্তকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে।

হয়ত বাজেটের সঙ্গে তদন্তকারী সংস্থাগুলোর সত্যিই কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু এই দুটি বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করার লোভ সামলানো দায়।

নিঃসন্দেহে, দীপক তলোয়ার ও রাজীব সাক্সেনাকে ফিরে পাওয়াটা একটা বিরাট টার্নিং পয়েন্ট।এনারা দু'জন্যেই ক্রিস্টান মাইকেলের সঙ্গে অগস্তা ওয়েটল্যান্ড হেলিকপ্টার চুক্তির জন্যে তদবির করেছিলেন। এর পর আবার এই হেলিকপ্টার মামলায় টাকা নয় ছয়ের জন্য গ্রেপ্তার হয়েছেন আইনজীবী গৌতম খৈতান।

আরও একটি খবরের প্রকাশ, অস্ত্র ব্যবসায়ী সঞ্জয় ভান্ডারির উপর নজর রাখা হয়েছে। ইংল্যান্ডে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামীর বেনামি সম্পত্তি নাকি তাঁর দখলে রয়েছে।এর আগে, প্রিয়াঙ্কার স্বামীর ঘনিষ্ট মনোজ আরোরার বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের মামলা রুজু করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। নিজেকে নিরাপদ রাখতে এর পর আদালতে গিয়ে জামিন নেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী।

body1_020619041531.jpgউত্তরপ্রদেশেও বেশ কয়েকটি মামলায় তদন্তকারী সংস্থাগুলো অভিযান চালিয়েছে [ছবি: পিটিআই]

গান্ধী পরিবারের তিন সদস্য জামিনে মুক্ত আছেন তাই পারিবারিক রাজনীতির বিরোধীরা এবার বেশ আহ্লাদিত।

এরও আগে প্রজাতন্ত্র দিবসের ঠিক আগে সিবিআই হরিয়ানাতে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে ছিল। সিবিআই কর্তারা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডার রোহতকের বাড়িতেও হানা দিয়েছিলেন। পঞ্চকুলায় জমি বিতরণ কেলেঙ্কারি নিয়ে যে মামলা চলছে এই অভিযান সেই মামলার তদন্তেরই অঙ্গ ছিল।

উত্তরপ্রদেশেও এই ধরণের অভিযান দেখা গিয়েছে। মায়াবতীর শাসনকালে মুক্তি কেলেঙ্কারির তদন্তে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কর্তারা লখনৌর বেশ কয়েকটি জায়গায় হানা দিয়েছিলেন। অখিলেশ যাদবের শাসনকালের খনি কেলেঙ্কারির মামলাতেও এই ধরণের অভিযান সংগঠিত হয়েছে।

জানুয়ারী মাসটাকে অভিযানের মরশুম বলা যেতেই পারে। কিন্তু আসল নাটকের সূত্রপাত হল গত রবিবার কলকাতায়।

body2_020619041619.jpgবিরোধীরা মমতার সমর্থনে এগিয়ে এসেছে [ছবি: পিটিআই]

সেদিন সিবিআই কুখ্যাত সারদা ও রোজ ভ্যালি মামলায় কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে জেরা করার চেষ্টা করেছিল। আর, এর পরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্ষরিক 'যুদ্ধ' ঘোষণা করে দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর, অভিযোগ কেন্দ্র সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর উপর আক্রম করছে।

যা আশা করা গিয়েছিল তাই সত্যি হল। বিরোধীরা মমতার সমর্থনে এগিয়ে এসে কেন্দ্রের 'ফ্যাসিস্ট' সরকারের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হওয়ার শপথ নিলেন। নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করার অভিযোগ আনলেন মহাগঠবন্ধনের মাথারা।

এই লড়াই দীর্ঘকালীন। আর, তাই দু'পক্ষই তাড়াহুড়ো করতে নারাজ। এই নাটক যত এগোবে ততই মুখরোচক হয়ে উঠবে।

এরই মাঝে সংবাদপত্রগুলোর মাঝের পাতাতে আরও একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। সিবিআই নাকি আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় চিদাম্বরমকে জেরা করার জন্য অনুমতি চেয়েছে।

বিরোধীরা এ সব কিছুরই জন্য সরকারকে দায়ী করবে। সরকারও সেই অভিযোগ অস্বীকার করবে। কিন্তু আজকের পরিস্থিতিতে এই অজুহাতের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ এই ঘটনাগুলোর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তাই, শেষমুহূর্তে, তাঁরা কখন সলতেতে আগুন ধরান সেটাই এখন দেখার।

বিভিন্নজনে এখন বিভিন্ন তথ্য খাড়া করছে। বিরোধী নেতা নেত্রীরা মনে করছেন সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। 'বিনাশ কালে বিপরীত বুদ্ধি' এই শ্লোক তাদের মুখে মুখরিত হচ্ছে। অনেকেই আবার বলছেন, কয়েক মাস পরে সরকার পরিবর্তন হয়ে গেলে এই আক্রমণের প্রতিক্রিয়ার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়তে দেখা যাবে। বেশ কয়েকজন কংগ্রেস নেতা তো সরাসরি সিবিআই আধিকারিকদের হুমকিও দিয়েছেন।

অনেকেই আবার বলছে বিভিন্ন ঝুটঝামেলায় জড়িয়ে মান খুইয়েছে সিবিআই। এখন একজন 'কাজের' লোক সিবিআইয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর সিবিআই সুনাম ফিরে পেতে উঠে পড়ে লেগেছে।

বিজেপি সমর্থকদের অবশ্য অন্য মতামত থাকবে। ২০১৪ নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর প্রচারে এই ধরণের দুর্নীতির মামলাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। সেই মামলাগুলোর তদন্ত প্রক্রিয়া বেশ ধীরগতিতে চলছিল। এর ফলে মোদী ভক্তরা একটু ভেঙে পড়েছিল কারণ কংগ্রেস ব্যক্তিগত ভাবে মোদীর ভাবমূর্তিকে আঘাত করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছিল।

body3_020619041736.jpgএই লড়াই দীর্ঘকালীন, লড়াইয়ে জোট এগোবে ততই মশলাদার খবরের আগমন ঘটবে [সৌজন্যে: ইন্ডিয়া টুডে]

রাহুল গান্ধী যেমন সরকারিভাবে জানিয়েছেন রাফেল চুক্তি নিয়ে সহজেই মোদীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যায়।তাই বিজেপির অনেকেই চাইছিলেন মোদী কড়া পদক্ষেপ নিক। কিন্তু এই পদক্ষেপ নিতে একটু দেরি হয়ে গেল না তো? যে কোনোও বড় কাজেই ঝুঁকি থাকে। নিঃসন্দেহে, মোদীর এই কড়া পদক্ষেপগুলোও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু মোদী বা অমিত শাহের লক্ষটাও তো ছোট নয়।

এই পরিস্থিতি থেকে মোদী আর অমিত শাহের আর ফিরে আসার কোনও উপায় নেই। আর পিছনে ফিরে তাকানো যাবে না।

এখন এই যুদ্ধ শেষ করতেই হবে।

তাই আগামী সপ্তাহে আর বেশ কিছু থ্রিলার ও সাসপেন্সের আশা করা যেতেই পারে। যা একেবারেই দুর্বল হৃদয়ের লোকেদের জন্য নয়। সিট বেল্ট পড়ে অপেক্ষা করুন।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SANDIP GHOSE SANDIP GHOSE @sandipghose

Writer and blogger on current-affairs.

Comment