লোকসভা নির্বাচন ২০১৯: ইতিবাচক ইস্যু ছেড়ে কুৎসাই হাতিয়ার

রাহুল গান্ধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুটি ইতিবাচক বিষয়কে সামনে এনেছেন

 |  2-minute read |   01-04-2019
  • Total Shares

ভোট এলেই অনেক নেতানেত্রীরই মুখের লাগাম থাকে না। এ রকম বেলাগাম জবান সব রাজনৈতিক দলেই রয়েছে। আগ্নেয়গিরির লাভার মতো যাঁদের মুখ থেকে কুবাক্যের স্রোত বেরিয়ে পড়ে। এটা ছোট-বড় সব ভোটেই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এবারের ভোটে এই প্রবণতা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।

শাসক দলের কিছু নেতানেত্রী উদ্ধত্যের সঙ্গে কথা বলাটা অভ্যাসে পরিণত করেছেন। বিরোধীদের মধ্যেও কেউ কেউ মনে করছেন, এই ভাষাতেই জবাব দিলে বাজি মাত করা যাবে। ফলে নির্বাচন কমিশনের টেবিলে অভিযোগের পাহাড় জমছে। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ৩০,০০০ অভিযোগ জমা পড়েছে অথচ আটের দশকের পর এ বার লোকসভা ভোটে বেশ কয়েকটি কোর ইস্যু রয়েছে। যেমন: কর্মসংস্থান, গ্রামীণ অসন্তোষ, নোটবন্দি ও জিএসটি-র প্রভাব। 

narendra-modi_040119054831.jpgপ্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী: সমস্যা ছেড়ে প্রচারের অভিমুখ ঘোরাচ্ছেন অন্য দিকে। (ছবি: ডেইলিও)

দেশে কর্ম সংস্থানের হর গত ৪৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। গ্রামীণ অর্থনীতির মূল উপদান কৃষি। সেই কৃষিতে সঙ্কট। শুধু তাই নয়, গ্রামাঞ্চলে বহু রাজ্যে গোরু কেনাবেচা বন্ধ করার পরে এক দম বন্ধ করা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এর ফলে এক দিকে যেমন এর ফলে দুধ ব্যবসায়ীরা সঙ্কটে পড়েছেন, তেমনই হাজার হাজার বাঁধন ছাড়া গবাদি পশু বিচরণে খেতের ফসল নষ্ট হচ্ছে। অন্য দিকে  নোটবন্দির ফলে – বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে – ছোট-মাঝারি কারখানার ব্যবসা মার খেয়েছে, অনেকে কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এর ফলে অসংগঠিত শিল্পে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সঙ্কটে ফেলেছে জিএসটিও।

rahul_040119055115.jpgন্যূনতম আয়ের নিশ্চয়তা দিতে চান রাহুল গান্ধী। (ছবি: ডেইলিও)

স্বাভাবিক ভাবেই এই বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় সরকারের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে। তাই পুলওয়ামা কাণ্ডের পর জঙ্গিসন্ত্রাস ও সেই সন্ত্রাসে পাকিস্তানের মদতকে হাতিয়ার করে জাতীয়তাবাদ ইস্যুতে বিজেপি এই কোর ইস্যুগুলিকে ঢাকা দিতে চাইছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে বিজেপি শক্তিশালী রাষ্ট্র, শক্তিশালী নেতা এই প্রচারেই সব হিসাব পাল্টে দিতে চাইছে।

mamata_040119055133.jpgমমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোর দিচ্ছেন ১০০ দিনের কাজের উপরে। (ছবি: ডেইলিও)

এই আবহকে কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চা-ওয়ালা থেকে সরে এসে নিজেকে চৌকিদার হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন। (বিজ্ঞাপনের ভাষায় একে বলে পজিশনিং। কোন পণ্য কোন চেহারায় ক্রেতাদের আকর্ষণ করবে সেটা ঠিক করার চাবিকাঠি হল বিজ্ঞাপনের ভাষায় পজিশনিং।) বিরোধীরাও মূল ইস্যু ভুলে বিজেপির তৈরি করে দেওয়া জাতীয়তাবাদ ইস্যুতেই লড়তে মাঠে নেমেছে।

farmer_040119055214.jpgএখন কৃষিতে সঙ্কট। (ছবি: ডেইলিও)

তবে তারই মধ্যে রাহুল গান্ধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুটি ইতিবাচক বিষয়কে সামনে এনেছেন। রাহুল গান্ধী ঘোষণা করেছেন দেশের দরিদ্র পরিবারগুলির মাসে ন্যূনতম আয় হবে ১২,০০০ টাকা। পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, তাঁর দলের ইস্তেহারে বলা হয়েছে, নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে ১০০ দিনের কাজকে বাড়িয়ে ২০০ দিন করা হবে। আর সেই কাজের মজুরি ১৫ দিনের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়া হবে।

দেশে যখন এত সমস্যা, তখন আমাদের মতো সাধারণ মানুষের চাহিদা হল, শাসক ও বিরোধী – সব পক্ষই ইতিবাচক ইস্যুতে ভোটের ময়দানে লড়তে নামুন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

BISWAJIT BHATTACHARYA BISWAJIT BHATTACHARYA

Veteran journalist. Left critic. Political commentator.

Comment